You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.08 | হাড়িদহ ব্রিজ যুদ্ধ (মোল্লাহাট, বাগেরহাট) - সংগ্রামের নোটবুক

হাড়িদহ ব্রিজ যুদ্ধ (মোল্লাহাট, বাগেরহাট)

হাড়িদহ ব্রিজ যুদ্ধ (মোল্লাহাট, বাগেরহাট) সংঘটিত হয় ৮ই অক্টোবর। পাকসেনা ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের এ-যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাপ্টেন সেলিমসহ ১০ জন পাকসেনা ও কয়েকজন
রাজাকার নিহত হয়। যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের অপারেশন কমান্ডার ছিলেন মো. হানিফ শেখ। অংশগ্রহণকারী অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন- কমান্ডার সেকেল উদ্দিন গাজী, আশরাফুল ইসলাম আশা, সোহরাব, নুরু, গোলাম মাওলা, ওমর আলী, কৃষ্ণ, ওদুদ, আজমির, প্রফুল্ল ঢালী, মৃধা আলী “রেজা, মোশারফ মান্নান প্রমুখ। বাগেরহাট জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মোল্লাহাট থানার হাড়িদহ ব্রিজ যুদ্ধ একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
৬ই অক্টোবর সরসপুর গ্রামের বেল্লাল মৃধার মাধ্যমে শামসু বাহিনীর কাছে সংবাদ আসে যে, পাকসেনারা মোল্লাহাটের চরকুলিয়া, গাওলা প্রভৃতি গ্রামে অপারেশন করার পরিকল্পনা করছে। এ বাহিনীর দুই সহোদর মুক্তিযোদ্ধা মো. হানিফ শেখ ও মো. হাছান শেখের বাড়ি ছিল গাওলা গ্রামে। এ খবর পেয়ে কমান্ডার শামসুল হক মল্লিক তাঁর বাহিনীর মোহর আলী (রূপসা)-র নেতৃত্বে হানিফ-হাছান ভ্রাতৃদ্বয়, আজিম উদ্দিন (কদমতলা), নওশের আলী শেখ (আড়ুয়াবর্ণী), ওমর আলী (কামার), ইউনুস (মোড়েলগঞ্জ), হাবিব (হিজলা)-সহ ৯ জনের একটি দলকে পাকসেনাদের প্রতিহত করার দায়িত্ব দেন। দায়িত্ব পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা এদিন চরকুলিয়ার ফজলু মোক্তারের বাড়িতে গোপন অবস্থান নেন। গাওলা গ্রামে বিয়ে হয়েছিল শামসুল হক মল্লিকের বোন আমেনা বেগমের। আমেনা বেগম ওমর আলী নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রতিবেলা খাবার রান্না করে পাঠাতেন মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে পাতলা গ্রামের ক্যাম্পে যোগাযোগ করা হলে এ ক্যাম্পের কমান্ডার ফহম উদ্দিন কুলিয়া গ্রামের সামছুর রহমান মিয়ার নেতৃত্বে ২০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে পাঠান। দাড়িয়ালা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের অধিনায়ক শরীফ আবু তালেব তাঁর দল নিয়ে এঁদের সঙ্গে যোগ দেন।
৮ই অক্টোবর ভোরে মো. হানিফ শেখ, সামছুর রহমান মিয়া এবং শরীফ আবু তালেবের নেতৃত্বে বাছাই করা ২৯ জন দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধা চরকুলিয়া বাজারের এক কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে হাড়িদহ ব্রিজ সংলগ্ন তেমাথা রাস্তার মোড়ে বাংকার খুঁড়ে অবস্থান নেন। মূল বাংকারে অবস্থান নেন হানিফ-হাছান ভ্রাতৃদ্বয়। তাঁদের বাংকারের পাশে আরো ৯টি বাংকার তৈরি করে প্রতিটিতে ৩ জন করে গেরিলা যোদ্ধা অবস্থান গ্রহণ করেন।
হানাদার পাকসেনা ও রাজাকাররা ক্যাপ্টেন সেলিমের নেতৃত্বে হাড়িদহ ব্রিজ পার হয়ে তেমাথা রাস্তার মোড়ে আসে। ক্যাপ্টেন সেলিম গ্রামে ঢুকে জ্বালাও-পোড়াও ও হত্যা-লুটতরাজের জন্য নির্দেশনা দিচ্ছিল। এ অবস্থায় বীর মুক্তিযোদ্ধা হানিফ ও হাছানের বাংকার থেকে মেশিনগানের ব্রাশ ফায়ার করা হয়। এতে সেলিমের হেলমেট ও মাথার উপরের অংশ উড়ে যায়। সঙ্গে-সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের অন্য সব বাংকার থেকে গুলিবর্ষণ শুরু হয়। কয়েক মিনিটের যযদ্ধে ১০ জন পাকসেনাসহ কয়েকজন রাজাকার প্রাণ হারায়। পুরো যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে চলে আসে। পাকসেনা ও রাজাকাররা পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রচুর গোলাবারুদ হস্তগত করেন। [বেনজীর আহম্মদ টিপু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড