You dont have javascript enabled! Please enable it! হরিয়াবহ বধ্যভূমি (কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) - সংগ্রামের নোটবুক

হরিয়াবহ বধ্যভূমি (কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

হরিয়াবহ বধ্যভূমি (কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে বহু লোককে হত্যা করা হয়। তাদের বেশির ভাগই ছিল শরণার্থী। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলাধীন গোপীনাথপুর ইউনিয়নের হরিয়াবহ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামের দক্ষিণ পাশে একটি মঠ ছিল। এরই আশেপাশে প্রায় প্রতিদিনই মানুষ হত্যা করা হয়। তাদের সকলেই শরণার্থী। এছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ধরে এনে এখানে হত্যা করা হতো। পাঁচ মাসে এখানে সহস্রাধিক নর-নারী ও শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হরিয়াবহ গ্রামের মাটি খুঁড়লে বিভিন্ন এলাকা থেকে বেরিয়ে আসে মানুষের কংকাল। একটি পুকুর খননের সময় এখানে অসংখ্য কংকাল পাওয়া গেছে। পুরো এলাকাটাই এক বৃহৎ বধ্যভূমি আর গণকবরে পরিণত হয়েছিল। হরিয়াবহের খুরশিদ মিয়ার বাড়ির চৌকির নিচে বাচ্চাসহ লুকিয়ে থাকা এক মহিলাকে চুল ধরে টেনে বের করে ঘরের ভেতর রাজাকার রা ধর্ষণ করে। তার কোলের বাচ্চাটিকে মাটিতে আছড়ে মায়ের সামনে হত্যা করা হয়। উপর্যুপরি ধর্ষণের যন্ত্রণা সহ্য না করতে পেরে উক্ত মহিলাও ঘটনাস্থলেই মারা যান।
হরিয়াবহের শফিক মিয়া ও ইউনুছ খাঁর বাড়িতে রাজাকারদের ক্যাম্প ছিল। ইউনুছ খাঁর বাড়ির উত্তর পাশে এক বিশাল গর্ত ছিল। রাজাকারদের হাতে নিহত অসংখ্য নারী-পুরুষ ও শিশুর লাশ এ গর্তে ফেলা হয়। প্রতিদিন এখানে নতুন-নতুন লাশ পড়ত। শেয়াল-কুকুরে খেয়েছে এসব লাশ।
একবার ১৩ জন লোককে ধরে নিয়ে হরিয়াবহে সোনা মিয়ার বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিল। বাড়ির পূর্বপাশের পুকুরের উত্তর কোণে তাদের দিয়ে দুটি গর্ত খনন করানো হয়। তারপর সেখানেই তাদের হত্যা করে মাটিচাপা দেয়া হয়।
নওগাঁর আবন মিয়া, মুক্তল হোসেন ও আলী হোসেন হরিয়াবহের সোনা মিয়ার বাড়িতে বন্দি ছিল। আবনের পরনে খাকি রঙের শার্ট ছিল। মুক্তিযোদ্ধা ভেবে পাকিস্তানিরা তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে তাকে পুড়িয়ে হত্যা করে। অন্য একজনের দুই পা গাছের সঙ্গে বেঁধে নিচের দিকে ঝুলিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। মুক্তল হোসেন ও আলী হোসেন দুজন ছিল সহোদর ভাই। তাদেরও হত্যা করে এক সঙ্গে মাটিচাপা দেয়া হয়। এরূপ ভয়াবহ অবস্থা দেখে লাতুয়ামুড়া থেকে ধরে আনা ৭০-৭৫ জন নর- নারী ও শিশু আর্তচিৎকার শুরু করে দেয়। পাকিস্তানি বাহিনীর একজন অফিসারের নির্দেশে বিহারি রাজাকার কমান্ডার ইকবাল খান ও অন্য একজন সৈনিক তাদের সবাইকে গুলি করে হত্যা করে। গুলিবিদ্ধ মানুষের আর্তচিৎকারে সেদিন আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল। [জয়দুল হোসেন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড