You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.24 | সৈয়দপুর যুদ্ধ (নবাবগঞ্জ, ঢাকা) - সংগ্রামের নোটবুক

সৈয়দপুর যুদ্ধ (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

সৈয়দপুর যুদ্ধ (নবাবগঞ্জ, ঢাকা) ২৪শে নভেম্বর সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এ যুদ্ধে কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয় এবং মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক শহীদ হন।
মুক্তিযোদ্ধাদের উপর্যুপরি আক্রমণে নভেম্বর মাসের শেষদিকে হানাদার বাহিনী বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের ক্যাম্প গুটিয়ে ঢাকার দিকে পালিয়ে আসতে থাকে। এ-সময় তারা নবাবগঞ্জ ঘাঁটি ত্যাগ করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়৷ মুক্তিযোদ্ধারা এ খবর পেয়ে পথে কয়েকবার তাদের আক্রমণ করেন। মুক্তিবাহিনী প্রথমে আগলা, এরপরে টিকরপুর, বেনুখালি এবং খারশুর গ্রামে তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। খারশুর গ্রাম আক্রমণে উভয় পক্ষের গোলাগুলিতে ২ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। হানাদার বাহিনী ঢাকা যাওয়ার পথে গ্রামের রাস্তার আশপাশের অনেক ঘরবাড়ি ও অন্যান্য অবকাঠামো ফসফরাস পাউডার দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
খারশুর গ্রামে আক্রান্ত হয়ে হানাদাররা ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে মোমিন কোম্পানির মোটর গ্যারেজে অবস্থান নেয়। নদী পারাপারের সব নৌকা মুক্তিযোদ্ধারা পূর্বেই সরিয়ে ফেললে দুদিন পর্যন্ত পাকসেনারা গোয়ালখালি ও ডাকপাড়া গ্রামে আটকা পড়ে। এ অবস্থায় তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে। গোয়ালখালি, ফুলপুর ও ডাকপাড়ার মধ্যবর্তী এলাকায় ধলেশ্বরী, কালিগঙ্গা ও ইছামতি নদীর মোহনা। এ মোহনার একদিকে নবাবগঞ্জ, আরেকদিকে সিরাজদিখান, পূর্ব-উত্তর পাড়ে কেরানীগঞ্জের লাখীরচর, পশ্চিমপাড়ে নবাবগঞ্জ থানার দৌলতপুর এবং পশ্চিম-দক্ষিণ পাড়ে সিরাজদিখানের সৈয়দপুর, গোয়ালখালি, ফুলপুর ও ডাকপাড়া গ্রাম। এ এলাকায় অবরুদ্ধ হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়, যা সৈয়দপুর যুদ্ধ নামে পরিচিত। সৈয়দপুর ও গোয়ালখালি ডাকপাড়ার যুদ্ধে পাকসেনারা দিকবিদিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং তাদের মনোবল ভেঙ্গে যায়। এমনি অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর আক্রমণ করেন। যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদারদের নাস্তানাবুদ করেন। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন। এ-যুদ্ধে মোহাম্মদ আলী খান আলম, আক্তারুজ্জামান মতি, আবুল কালাম আজাদ দারু, মোহাম্মদ শাহজাহান, মোশারফ হোসেন, মো. ইদ্রিস, শওকত হোসেন আঙ্গুর, নাসির খান, হুমায়ুন, ফেরদৌস কামাল টিপু, শাহ মো. আবু বকর সিদ্দিক, আব্দুস ছাত্তার, আতিয়ার রহমান প্রমুখ তাঁদের গ্রুপ নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। সৈয়দপুর যুদ্ধই ছিল মুক্তিযোদ্ধা ও হানাদার বাহিনীর মধ্যে নবাবগঞ্জের শেষ যুদ্ধ। এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের ধাওয়া করে নদীর মোহনায় আটকে পরাস্ত করে সাহসিকতার পরিচয় দেন। পাকসেনারা ঢাকা অভিমুখে পালিয়ে যাওয়ার সময় সৈয়দপুরের অপর প্রান্তে একটি পাড়ায় গান পাউডার দিয়ে আগুন লাগিয়ে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে। পরবর্তীকালে এ পাড়া পোড়াবাড়ি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। [মো. আনোয়ার হোসেন ও আব্দুল মালেক সিকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড