বীর বিক্রম সৈয়দ আমিরুজ্জামান
সৈয়দ আমিরুজ্জামান, বীর বিক্রম (১৯২৭-২০১০) নায়েক সুবেদার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। ১৯২৭ সালে মাগুরা জেলার অন্তর্গত শ্রীপুর উপজেলার হরিনদী গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা সৈয়দ আব্দুল ওয়াহেদ এবং মাতা আলতাফুন্নেসা। সৈয়দ আমিরুজ্জামান ইপিআর বাহিনীতে চাকরি করতেন। তিনি ১৯৫৩ সালে ইপিআর সদর দপ্তর (পিলখানা)-এ সিগনাল ইউনিটে যোগদান করেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি রাজশাহী অঞ্চলের ইপিআর হেডকোয়ার্টার্সে হাবিলদার পদে কর্মরত ছিলেন কর্মস্থলে থাকাকালে ২৫শে মার্চ থেকে বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে তিনি যে- সকল তথ্য পান সেগুলো সঙ্গে-সঙ্গে স্থানীয় সংগ্রাম পরিষদ এবং ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিনকে জানান। একই সঙ্গে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন। ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা রাজশাহীতে প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু করলে বেতার যন্ত্র নিয়ে তিনি তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন এবং বিভিন্ন প্রতিরোধযুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন।
সৈয়দ আমিরুজ্জামান এক্সপ্লোসিভ দিয়ে চারঘাট এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন, বেলপুকুর এলাকায় বেসলাইন ও হরিপুর ব্রিজ ধ্বংস করে পাকবাহিনীর যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। ১২ই নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ইসলামপুরে পাকবাহিনীর শক্ত ঘাঁটির ওপর আক্রমণ করলে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। সৈয়দ আমিরুজ্জামান কয়েক মাইল দূর থেকে অ্যামুনেশন ও মর্টার নিয়ে এসে এ-যুদ্ধে অংশ নেন এবং মর্টার আক্রমণ শুরু করেন। যুদ্ধরত অবস্থায় এক পর্যায়ে শত্রুপক্ষের গোলার আঘাতে তিনি আহত হন।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখায় বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সৈয়দ আমিরুজ্জামান ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত হন। চাকরি জীবনে তিনি নায়েক সুবেদার পদে উন্নীত হন। তিনি ৪ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম রিজিয়া খাতুন। ২০১০ সালের ১৮ই জানুয়ারি এ বীর সৈনিক মৃত্যুবরণ করেন। [হারুন রশীদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড