You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক সৈয়দ সদরুজ্জামান - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক সৈয়দ সদরুজ্জামান

সৈয়দ সদরুজ্জামান, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫০) ১১নং সেক্টরের মহেন্দ্রগঞ্জ সাব-পসক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কোম্পানি কমান্ডার। তিনি ১৯৫০ সালের ৩১শে জানুয়ারি জামালপুর জেলার মিয়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ কামরুজ্জামান এবং মাতার নাম সৈয়দা খোদেজা জামান।
৭১-এ সৈয়দ সদরুজ্জামান কলেজের ছাত্র ছিলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ২১ বছর। ৭০- এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগএর নিরঙ্কুশ বিজয় সত্ত্বেও ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে ইয়াহিয়ার সামরিক
জান্তার ষড়যন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ, প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ৭১-এর মার্চের অসহযোগ আন্দোলন, ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ এবং তাতে বাঙালিদের উদ্দেশে পাকিস্তানি শত্রুদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সংগ্রামের প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান ইত্যাদি ঘটনা সদরুজ্জামানকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর নির্বিচার হত্যাকাণ্ড শুরু ও ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পরপর তিনি হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে অংশ নেন। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার লক্ষ্যে তিনি সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যান এবং সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ১১নং সেক্টরের মহেন্দ্রগঞ্জ সাব-সেক্টরে যোগ দেন। তিনি একটি কোম্পানির অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৭১-এর ৯ই আগস্ট জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার উত্তর প্রান্তে ধানুয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত উঠানিপাড়ায় সৈয়দ সদরুজ্জামানের নেতৃত্বে ৩৮ জন মুক্তিযোদ্ধা এম্বুশে নেন। এক পর্যায়ে তাঁরা লক্ষ করেন প্রায় এক কোম্পানি পাকসেনা কলাম ধরে রাস্তা দিয়ে হেঁটে এগিয়ে আসছে। পাকসেনারা নিকটে আসামাত্রই তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ চালান। দশ মিনিটের মতো গুলি বিনিময়ের পর মুক্তিযোদ্ধারা অক্ষত অবস্থায় পিছিয়ে আসেন। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে বেশ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়। জামালপুরের সীমান্তবর্তী কামালপুরে ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দুর্ভেদ্য ঘাঁটি। এ ঘাঁটির পতন ঘটাতে মুক্তিযোদ্ধারা একাধিকবার আক্রমণ পরিচালনা করেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সৈয়দ সদরুজ্জামান তাতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৪ই আগস্ট ১১নং সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু তাহের পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে কামালপুরের যে-যুদ্ধে শত্রুর গোলার আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে একটি পা হারান, সদরুজ্জামান অন্যদের সঙ্গে ঐ যুদ্ধে মাঠে ছিলেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সৈয়দ সদরুজ্জামানকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তাঁর স্ত্রীর নাম শাহবানু। এ দম্পতি ১ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তনের জনক-জননী। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড