মুক্তিযুদ্ধে সৈয়দপুর উপজেলা (নীলফামারী)
সৈয়দপুর উপজেলা (নীলফামারী) মুক্তিযুদ্ধের সময় সৈয়দপুরের জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই ছিল উর্দুভাষী বিহারি (অবাঙালি)। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্ব থেকেই তারা ছিল পাকিস্তানের সমর্থক। রাজনৈতিক নানা ঘটনাপ্রবাহে এখানকার বাঙালি জনগণের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দানা বেঁধে ওঠে এবং তারা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর প্রতি তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। এর ফলে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. জিকরুল হক এমপিএ নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ অনুষ্ঠেয় পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ১লা মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান স্থগিত ঘোষণা করলে সৈয়দপুরের বাঙালি জনগোষ্ঠী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ভাষণের পর থেকেই সৈয়দপুরে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি রচিত হতে থাকে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিস্বরূপ সৈয়দপুরে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডা. জিকরুল হক এমপিএ-এর নেতৃত্বে একটি সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটির সদস্যদের মধ্যে ডা. আব্দুল গফফার, রাফাজ উদ্দিন মণ্ডল, শমসের আলী বসুনিয়া, নজরুল ইসলাম, দবির উদ্দিন সরকার, শুকুর আলী, আমিনুল হক গোলো, মজিবর রহমান, সিরাজুল হক, আফজাল মাস্টার, কাজী উমর আলী, ডা. ইয়াকুব আলী, ডা. শামসুল হক, এনামুল হক প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির পাশাপাশি শাহ হবিবর রহমান ও কামাল তালুকদারের নেতৃত্বে সৈয়দপুরে একটি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদও গঠিত হয়।
সৈয়দপুরে ডা. জিকরুল হকের ডিসপেন্সারি জেয়ারত উল্লাহ মেডিকেল হলটি সংগ্রাম কমিটির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখান থেকেই স্বাধীনতাকামী জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয় এবং ১৬ই মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয়। ২৩শে মার্চ পাকিস্তান দিবসে অবাঙালিরা দোকানপাট, অফিস-আদালত ও ঘরবাড়িতে পাকিস্তানি পতাকা উত্তোলন করে। সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে বাঙালিরাও নতুন বাবুপাড়া, কাজিপাড়া, কুন্দল ও সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। ছাত্রলীগ-এর উদ্যোগে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই দিন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। সৈয়দপুর কলেজ মাঠে গোপনে যুবকদের মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ সৈয়দপুরের উপকণ্ঠে লক্ষণপুর ও রাণীর বন্দর এলাকার খলিল মাস্টার ও মজিদ বেগের বাড়িতে গোপন বৈঠক করে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে অস্ত্র সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেন। এ উদ্দেশ্যে এলাকার লাইসেন্সধারী বন্দুক ও পিস্তল মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বেশ কয়েকটি অস্ত্র সংগ্রহ করা হয়। একই সঙ্গে তাঁরা যুবকদের সংগঠিত করতে গ্রাম- গঞ্জে প্রচারণা চালিয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠনের প্রস্তুতি চালাতে থাকেন। এখানে মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার ছিলেন শামসুল হক সরকার (পিতা নেছার উদ্দিন সরকার, দক্ষিণ সোনাখুলি)। ৭০-এর নির্বাচনে বাঙালিদের অভূতপূর্ব ফলাফলে সৈয়দপুরের অবাঙালিরা ঈর্ষান্বিত হয়ে জঙ্গি তৎপরতা শুরু করে। বাঙালিরা স্বাধীনতার পক্ষ এবং অবাঙালিরা পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে। বাঙালিদের চাপে লিবার্টি সিনেমা হলে উর্দু ছবি বন্ধ করে বাংলা ছবির প্রদর্শন শুরু হয়। অবাঙালিরা উর্দু ছবি প্রদর্শনের দাবি জানালে বাঙালি- অবাঙালিদের মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ বাঁধে। ২৩শে মার্চ রাতে লিবার্টি সিনেমা হলের ভেতরে অবাঙালিরা বাঙালি দর্শকদের ওপর হামলা চালালে শুরু হয় অবাঙালি-বাঙালি দাঙ্গা। এ হামলার ঘটনা দ্রুত গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। শহরে অবাঙালিদের দ্বারা বাঙালিরা অবরুদ্ধ হলে তাদেরকে উদ্ধারের জন্য শহরের চতুর্দিকে হাজার-হাজার বাঙালি অবস্থান নিয়ে সৈয়দপুর শহর অবরোধ করে রাখে। অবাঙালিরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবরোধকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২৪শে মার্চ বাঙালি-অবাঙালি সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করে। অবাঙালিদের গুলিতে আলোকডিডি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহাতাব বেগ (রাণীর বন্দর) শহীদ হন। ২৫শে মার্চ সৈয়দপুর শহরের কাজিরহাটে বাঙালি পুলিশ ব্যারাকে অবাঙালি ও সাদা পোশাকে পাকিস্তানি সৈনিকরা অতর্কিতে হামলা চালায়। এতে অবাঙালিরা পিছু হটে। বিকেল পাঁচটায় শহরে কারফিউ জারি করা হয়।
সৈয়দপুরে সেনানিবাস থাকায় মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই সেখানে পাকবাহিনীর অবস্থান ছিল। ২৫শে মার্চের পর তারা সৈয়দপুর দারুল উলুম মাদ্রাসা, সৈয়দপুর হাইস্কুল, সৈয়দপুর টেকনিক্যাল স্কুল এবং সৈয়দপুর পুলিশ ফাঁড়িতে ক্যাম্প স্থাপন করে।
এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সৈয়দপুরে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। এদের মধ্যে বিহারি কাইয়ুম খান (সৈয়দপুর থানা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান, নতুন বাবুপাড়া), মওলানা সালেহ আহমেদ (সৈয়দপুর দারুল উলুম মাদ্রাসা), ইজহার আহমেদ (কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান), মতিন হাসমী (মিস্ত্রীপাড়া), অধ্যাপক তসলীম (কয়া নিজপাড়া), শামসুদ্দীন কাদেরী (জামায়াত নেতা, গোলাহাট), শুকুর কসাই (গোলাহাট), সেলিম খান (নয়াটোলা), ইসমাইল মাছুয়া (নয়াটোলা), ইউসুফ বাট (অবাঙালি, ১নং ওয়ার্ড), একরামুল হক (অবাঙালি, ১নং ওয়ার্ড), ওয়াসিমুল হক (আস্তানা বিল্ডিং), আজিজ ফরমান (রেল কারখানা), মোজাহারুল ইসলাম (বিডি মেম্বার), জাহিদ শিকদার (বাঁশবাড়ী), আব্দুল কাইয়ুম (কাইয়ুম পেট্রল পাম্প, পুরাতন বাবুপাড়া), রুস্তম আলী গুণ্ডা (পুরাতন বাবুপাড়া), শের আলী গুণ্ডা (পুরাতন বাবুপাড়া), আজাদ খান (পাট ব্যবসায়ী, পুরাতন বাবুপাড়া), জমির খান (সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান), তাজির উদ্দিন (নিয়ামতপুর), মোখলেসুর রহমান মন্টু (রাজাকার সৈয়দপুর মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ), আসলাম খান (রসুলপুর), সালাউদ্দিন সালারু (নয়াবাজার), ছাত্তার খান (নয়াবাজার), আজিজ আওয়াল (নয়াবাজার), মো. গোলজার আহমেদ (বাঁশবাড়ী), মো. আব্দুল আজিজ (মিস্ত্রীপাড়া, বাঁশবাড়ী) ও মো. শুকুর (কসাই, অগণিত মানুষ হত্যাকারী)-এর নাম উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া অবাঙালি যুবকদের নিয়ে ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্স (ইপিসিএএফ) গঠন করা হয়। এর সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় দুই হাজার।
শান্তি কমিটি, রাজাকার ও অবাঙালিদের সহযোগিতায় পাকবাহিনী সৈয়দপুরে হত্যা, গণহত্যা, নারীনির্যাতন, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তৈরি ও উত্তোলনের জন্য ২৩শে মার্চ পাকবাহিনী ছাত্রনেতা নুরু ও কুদরতকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ২৪শে মার্চ পাকবাহিনী সাদা পোশাকে সৈয়দপুর কলেজের পাশে কয়েকজন সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। ঐদিন মিস্ত্রীপাড়ার রেল কোয়ার্টার্স থেকে রেলওয়ে কর্মচারী আব্দুল কদ্দুস (বগুড়া) ও তার কন্যা মাহমুদাকে ক্যান্টমেন্টে ধরে নিয়ে গিয়ে কদ্দুসকে হত্যা করে এবং মাহমুদার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। এরপর তাকেও হত্যা করে। একই দিনে কামারপুর ইউনিয়নের এক নারীর সম্ভ্রমহানি শেষে তাকে আগুনে নিক্ষেপ করে হত্যা করে। ২৬শে মার্চ পাকবাহিনী সৈয়দপুর থানা আওয়ামী লীগ নেতা ডা. জিকরুল হক এমপিএ, ডা. বদিউজ্জামান, ডা. ইয়াকুব আলী, ডা. শামুসল হক, তুলশী রাম আগরওয়ালা, যমুনা প্রসাদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দসহ ১০৯ জন স্বাধীনতাকামী মানুষকে সৈয়দপুর সেনানিবাসে ধরে নিয়ে যায়। তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানোর পর ১২ই এপ্রিল রংপুর সেনানিবাসের পশ্চিম পাশে উপশহরে গুলি করে হত্যা করে, যা রংপুর উপশহর গণহত্যা নামে পরিচিত। ২৬শে মার্চের পর পাকবাহিনী শহরের বাঙালিদের ধরে নিয়ে সৈয়দপুর হাইস্কুল ও সৈয়দপুর দারুল উলুম মাদ্রাসায় ১২৫ জনকে হত্যা করে। কামারপুর ইউনিয়নরে অধিকাংশ গ্রাম পুড়িয়ে দিলে সেখানকার মানুষ ধলাগঞ্জ স্কুলে এসে আশ্রয় নেয়। রাজাকাররা এ আশ্রয় কেন্দ্রে আক্রমণ চালিয়ে আশ্রিতদের মালামাল লুট করে এবং ৫০ জন নারীকে সৈয়দপুর সেনানিবাসে ধরে নিয়ে পাকবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। সেখানে বাঁশবাড়ীর নূরজাহানের ওপর তিনজন পাকিস্তানি সেনা পাশবিক নির্যাতন শেষে তাকে গুলি করে হত্যা করে।
১লা এপ্রিল পাকবাহিনী বাঙালিপুরের ইঞ্জিনিয়ার ফজলুর রহমানের অবাঙালি ড্রাইভার আবিদ হোসেনের সহযোগিতায় তার বাড়িতে প্রবেশ করে তার ভাই রফিকুল ইসলাম, ভাগ্নে আনোয়ার হোসেন, মালী রুহুল আমীনসহ তাকে সৈয়দপুর সেনানিবাসে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। পরদিন ঘরবাড়ি লুণ্ঠন শেষে সুরাইয়া বেগমকে সৈয়দপুর টেকনিক্যাল স্কুলে স্থাপিত হানাদার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে।
এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পাকবাহিনী শতাধিক রাজাকারকে সঙ্গে নিয়ে সৈয়দপুরের পালপাড়ায় আক্রমণ চালায়। সেখান থেকে ৩০-৪০ জন যুবককে বেঁধে নিয়ে চিকলী ব্রিজের পাশে গুলি করে হত্যা করে সেখানেই তাদের গণকবর দেয়। হত্যার এ ঘটনা চিকলী ব্রিজ গণহত্যা নামে পরিচিত।
কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার ইজহার আহমেদ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আমিনুল হক গোলোকে ধরে নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের নিকট তুলে দেয়। নির্যাতন শেষে পাকিস্তানি সেনারা তাকে ছেড়ে দিলেও ইজহার আহমেদ নিজে আমিনুল হক গোলোকে জুটমিলের প্রেসে ধরে নিয়ে প্রথমে চোখ উপড়ে ফেলে। তারপর শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ টুকরো-টুকরো করে কেটে হত্যা করে সেখানেই তাকে মাটিচাপা দেয়। সৈয়দপুর উপজেলার বাঁশবাড়ী, কাশিরাম বেলপুকুর, খাতা মধুপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা ব্যাপক লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নারীধর্ষণ ও সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালায়।
১৩ই জুন ভারতে শরণার্থী শিবিরে নিরাপদে পৌঁছে দেয়ার মিথ্যা আশ্বাসে ৪ শতাধিক সাধারণ মানুষকে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে চারটি বগিতে করে প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে গোলাহাট নামক স্থানে নিয়ে গিয়ে ট্রেন থামিয়ে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা তাদের তলোয়ারের আঘাতে ও গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে, যা গোলাহাট গণহত্যা নামে পরিচিত। ১৯শে আগস্ট সৈয়দপুর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে কামারপুর ইউনিয়নের মাছুয়াপাড়া, ধলাগঞ্জ, বাগডোগড়া, নিয়ামতপুর প্রভৃতি গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনী নারীধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে। ১৮ই ডিসেম্বর শহরের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অবাঙালিরা গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মোবারক আলীকে হত্যা করে।
সৈয়দপুরের দারুল উলুম মাদ্রাসা ক্যাম্প, সৈয়দপুর হাইস্কুল ক্যাম্প, সৈয়দপুর টেকনিক্যাল স্কুল ক্যাম্প, সৈয়দপুর পুলিশ ফাঁড়ি ক্যাম্প ও সৈয়দপুর – সেনানিবাস পাকবাহিনীর নির্যাতনকেন্দ্ৰ ও বন্দিশিবির হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
এখানকার বধ্যভূমির মধ্যে সৈয়দপুর দারুল উলুম মাদ্রাসা ক্যাম্প বধ্যভূমি, সৈয়দপুর হাইস্কুল ক্যাম্প বধ্যভূমি, সৈয়দপুর টেকনিক্যাল স্কুল ক্যাম্প বধ্যভূমি, সৈয়দপুর পুলিশ ফাঁড়ি ক্যাম্প বধ্যভূমি, সরমঙ্গলা নদী বধ্যভূমি, দহলাপট্টি বধ্যভূমি, খরচাখাতা বধ্যভূমি, বিমানবন্দর সংলগ্ন কৃপ বধ্যভূমি, বাঁশবাড়ী সেপ্টি ট্যাংক বধ্যভূমি, জোড়াতলা পুকুর বধ্যভূমি ও বয়লার শপ বধ্যভূমি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
৬ই এপ্রিল সৈয়দপুর শহর থেকে চার কিলোমিটার পশ্চিমে ফকিরপাড়া নামক স্থানে বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসার বাহিনী সঙ্গে পাকবাহিনীর যুদ্ধ হয়। প্রায় ৭ ঘণ্টাব্যাপী এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটেন। ১৮ই ডিসেম্বর সৈয়দপুর হানাদারমুক্ত হয়।
সৈয়দপুর উপজেলায় দুজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন— আ. মজিদ (পিতা গেন্দু মাহমুদ, পূর্ব বেলপুকুর) ও জয়নাল আবেদীন (পিতা শফিউদ্দিন, পোতুলাগাড়ি)।
সৈয়দপুর রেলওয়ে হাসপাতাল চত্বরে স্মৃতিসৌধ, রেলওয়ে কারখানা গেইটে ‘অদম্য স্বাধীনতা’ স্মৃতিসৌধ, রেলওয়ে স্টেশনের পেছনে শহীদ স্মৃতি পার্ক, জিআরপি মোড়ে স্মৃতি অম্লান’ নামে স্মৃতিস্তম্ভ ও নামফলক, সেনানিবাসের প্রবেশপথে ‘স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। গণহত্যায় শহীদ তুলশী রামের নামে নয়াটোলায় তুলশী রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আমিনুল হক গোলোর নামে গোলাহাটে আমিনুল হক প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। ১নং রেলক্রসিং থেকে জিআরপি মোড় পর্যন্ত রাস্তাটি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডা. জিকরুল হক এমপিএ-র নামে, ১নং রেলক্রসিং থেকে পোস্ট অফিস পর্যন্ত রাস্তাটি ডা. শামসুল হকের নামে, সৈয়দপুর কাছারি থেকে সৈয়দপুর কলেজ পর্যন্ত রাস্তাটি আতিয়ার রহমানের নামে নামকরণ করা হয়েছে। তাছাড়া গণহত্যায় শহীদদের নামে পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডে আফজাল হোসেন, মোখলেসার রহমান, ৪নং ওয়ার্ডে ফয়জুল্লাহ, আজিজার রহমান, ডা. মোবারক আলী, আব্দুল গণি প্রামাণিক, জমিলা, ৫নং ওয়ার্ডে আব্দুস সামাদ, আব্দুল মান্নান, নুরুল আমীন, কেফায়েত উল্লাহ, ডা. সুলতান, ৭নং ওয়ার্ডে সমির উদ্দিন, ক্যাপ্টেন শামসুল হুদা, আব্দুল জব্বার- এর নামে রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে। ১১নং ওয়ার্ডে জহুরুল হক, ডা. ইয়াকুব আলী, ১২নং ওয়ার্ডে আশরাফ আলী, আইয়ুব আলী ও নুর মোহাম্মদ সড়ক, ১৩নং ওয়ার্ডে আব্দুল কদ্দুস এবং ১৪নং ওয়ার্ডে মাহাতাব বেগের নামে সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। সৈয়দপুর সদরে ডা. জিকরুল হক এমপিএ-র নামে একটি পাঠাগার স্থাপিত হয়েছে। [মো. মুরিদ হোসেন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড