মুক্তিযুদ্ধে সেনবাগ উপজেলা (নোয়াখালী)
সেনবাগ উপজেলা (নোয়াখালী) ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন থেকে শুরু করে উসত্তরের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত সকল জাতীয় আন্দোলনে সেনবাগের জনগণের ছিল সক্রিয় অংশগ্রহণ। ১৯৭০-এর নির্বাচনেও তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্তানি সামরিক সরকার তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি শুরু করে। এর ফলে দেশব্যাপী যে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়, সেনবাগের মানুষ তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। হরতাল-মিটিং-মিছিল ইত্যাদির মাধ্যমে আন্দোলনকে তারা বেগবান করে তোলে। ৩রা মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হলে সমগ্র দেশের ন্যায় সেনবাগের মানুষও ফুঁসে ওঠে। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর তারা বুঝতে পারে যে, মুক্তিযুদ্ধ অত্যাসন্ন। তাই আবদুস সোবাহান এমপিএ-কে আহ্বায়ক এবং মোহাম্মদ ইসমাইল মিয়াকে সম্পাদক করে ৩৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। পরিষদের সদস্যরা ছিলেন ডা. টি আই এম নুরুজ্জামান চৌধুরী (সাবেক এমএলএ), বজলুল করিম পাটোয়ারী (ইয়ারপুর), ডা. নোয়াব আলী (ইয়ারপুর), মাস্টার আবদুল মতিন (ডমুরুয়া), গণেশ চন্দ্র চন্দ (শ্রীপদ্দী), মোয়াজ্জেম বিল্লাহ (দৌলতপুর), আবদুল খালেক চেয়ারম্যন (চাঁদপুর), আলী আহমেদ ভূঞা (অর্জুনতলা), সামছুদ্দিন আহমেদ (অর্জুনতলা), মুহম্মদ আবু তাহের (শুভপুর), আবু আমান উল্লাহ্ (অর্জুনতলা), ডা. সচিন্দ্র কুমার শীল (উত্তর সাহাপুর), বলাগত উল্যা চেয়ারম্যান (বাবুপুর) প্রমুখ। সেনবাগের উত্তরাঞ্চল কানকিরহাটেও একটি সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এ পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন মোখলেছুর রহমান ভাসানী, সম্পাদক মো. আবদুল হাই, দপ্তর সম্পাদক আবদুল বারি ভূঞা, সদস্য ডা. আলী আজম (চেয়ারম্যান), নূর ইসলাম (ফকির মিয়া), ডা. নূর ইসলাম, শৈলেন্দ্র কুমার অধিকারী (বীরকোট), এস এম আবদুল ওহাব, এ বি এম আবুল কাশেম বিএসসি, মোজাম্মেল হোসেন ভূঞা প্রমুখ। এছাড়া প্রত্যেক ইউনিয়নেও সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এসব কমিটির নেতৃবৃন্দের নির্দেশে সেনবাগের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেয়।
সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে সেনবাগ হাইস্কুল মাঠ, কানকিরহাট হাইস্কুল মাঠ এবং চাঁদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতিমূলক সামরিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এসব স্থানে প্রধান প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে সুবেদার মেজর এ কে এম আবদুল হক, পাকিস্তান বিমান বাহিনীর পাইলট কামাল উদ্দিন এবং অনারারি ক্যাপ্টেন আবদুল মান্নান। চাঁদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তিনশতাধিক ছাত্র-শ্রমিক প্রশিক্ষণ নেয়। প্রশিক্ষণকালে তাদের আহারের ব্যবস্থা করেন ঐ গ্রামেরই অধিবাসী চট্টগ্রাম বন্দরের ডক শ্রমিকনেতা এম এ সাত্তার।
২৬শে মার্চ রাত ৩টার দিকে বেগমগঞ্জ থেকে নির্বাচিত এমএনএ প্রফেসর মোহাম্মদ হানিফ নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল করিমের সহায়তায় একটি সরকারি গাড়ি নিয়ে সেনবাগ আসেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন এ-খবর নেয়াখালী জেলার সংগঠকদের অবহিত করার জন্য তিনি চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কাদরার গাজী গোফরানকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। আরো কয়েকজনকে সংগ্রহ করে দু-তিনটি দলে ভাগ হয়ে তাঁরা সেনবাগ, দেওয়ানগঞ্জ, বেগমগঞ্জ ও দাগনভূঁইয়ায় এ-খবর প্রচার করে কোম্পানীগঞ্জ চলে যান। বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণার কথা শোনার পর সেনবাগে প্রশিক্ষণ আরো জোরদার করা হয়। কিন্তু ২২শে এপ্রিল রাতে পাকসেনাদের সেনবাগে অনুপ্রবেশ ও ক্যাম্প স্থাপনের পর প্রশিক্ষণ বন্ধ হয়ে যায়। সেনবাগ উপজেলায় মুক্তযুদ্ধের সংগঠকরা হলেন- আবদুস সোবহান এমপিএ (ডোমনাকান্দি; দুর্গা চৌধুরীপাড়া ক্যাম্প- চিফ), মোহাম্মদ ইসমাইল মিয়া (বাতাকান্দি), এস এম এ গোফরান গাজী (কাদরা; মুজিবনগর সরকারের আগরতলা অফিসের পূর্বাঞ্চলীয় উপ-পরিচালক), শৈলেন্দ্র কুমার অধিকারী (বীরকোট; পরবর্তীতে অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব), মাস্টার আবদুল মতিন (ডমুরুয়া; প্রধান শিক্ষক ও চেয়ারম্যান), আবদুর রহমান (রাজারামপুর; শ্রমিকনেতা পরবর্তীতে প্রথম জাতীয় সংসদের এমপি), বজলুর রহমান পাটোয়ারী (ইয়ারপুর; আইনজীবী পরবর্তীতে চেয়ারম্যান), ডা. টি আই এম নুরুজ্জামান চৌধুরী (হাটিরপাড়; সাবেক এমএলএ), এ কে এম ফারুক ভূঁঞা (কেশারপাড়, বিএলএফ – থানা কমান্ডার), মো. আবদুল হাই (মজিরখিল), গণেশ চন্দ্র চন্দ (শ্রীপদ্দি; ব্যবসায়ী), এম এ সাত্তার (চাঁদপুর; চট্টগ্রাম বন্দর ডক শ্রমিকনেতা), এ বি এম আবুল কাশেম (বীরকোট), আবু আমান উল্লাহ্ (অর্জুনতলা; ছাত্রলীগ সভাপতি), কাজী জয়নাল আবেদীন (দেবীসিংহপুর; পুলিশ সদস্য), মোজাম্মেল হোসেন ভূঞা (কেশারপাড় দাগনভূঞা ব্যবসায়ী), রুহুল আমিন ভূঞা (কেশারপাড়; শ্রমিকনেতা, ২নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার), এ ওয়াই এম একরামুল হক বাবর (ছাতারপাইয়া; ছাত্রনেতা পরবর্তীতে অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম-সচিব), সাদেক হোসাইন (নজরপুর; পরবর্তীতে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল অব.), আবদুল্লা মিয়া (কেশারপাড়; সমাজসেবক), আলী আহমেদ ভূঞা (অর্জুনতলা; ছাত্রনেতা পরবর্তীতে হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক), মাস্টার মকবুল আহম্মদ (চাঁদপুর; প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক) এবং সফি উদ্দিন আহমেদ (জামালপুর, কাস্টমস কর্মকর্তা)।
২৫শে মার্চ পাকবাহিনীর অপারেশন সার্চলাইট-এর পর সেনবাগের সংগ্রাম পরিষদ পাকবহিনীকে প্রতিরোধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী সেনবাগ ডাকবাংলোর দক্ষিণে সাহাপুর গ্রামে প্রধান সড়ক কেটে ফেলা হয় এবং কানকিরহাট প্রবেশের প্রধান সড়কে গাছ ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু সে অবরোধ ভেঙ্গে ২২শে এপ্রিল পাকবাহিনী কুমিল্লা ক্যান্টানমেন্ট থেকে সোনাইমুড়ী হয়ে ছাতারপাইয়া দিয়ে সেনবাগ সদরে প্রবেশ করে এবং সেনবাগ উপজেলা সদর থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণে ফেনী-নোয়াখালী প্রধান সড়কের পাশে ডোমনাকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্যাম্প স্থাপন করে। পরবর্তীতে পাকিস্তানি মিলিশিয়া বাহিনী উপজেলা সদরে সার্কেল অফিসারের কার্যালয় ও বাসভবনেও ক্যাম্প স্থাপন করে। সেনবাগে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা হলো- মৌলভী এ কে এম হাবিবউল্লা চৌধুরী (বাবুপুর; সেনবাগ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক), এডভোকেট এ বি এম আবদুল মন্নান (বাবুপুর; নোয়াখালী জজকোর্টের আইনজীবী), ফজলুল হক (দক্ষিণ সাহাপুর; সমাজপতি), ডা. আলী আহম্মদ (উত্তর সাহাপুর; গ্রাম্য চিকিৎসক), নুরুল হক মাস্টার (ইয়ারপুর; শিক্ষক), শেখ ফরিদ মেম্বার (কাদরা), সোলাইমান খান মেম্বার (উত্তর মোহাম্মদপুর) প্রমুখ। এদের সহায়তায় সেনবাগে ২শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। এই দুই বাহিনীর সদস্যরা সাধারণ যুবকদের হয়রানি করত। তাদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে হাঁস, মুরগি, গরু- ছাগল নিয়ে এসে ক্যাম্পে জবাই করে খেত। কোনো পরিবারের লোক মুক্তিযুদ্ধে গেলে কিংবা মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করলে সে-খবর পাওয়ামাত্রই ঐ বাড়িতে গিয়ে হামলা করত এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনদের অনেককে ক্যাম্পে ধরে এনে নির্যাতন করত। এছাড়া হত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটাত। আবদুস সোবহান এমপিএ (ডোমনাকান্দি), আবু আমান উল্যা (অর্জুনতলা, আশু মিয়ার বাড়ি), আলী আহম্মেদ ভূঞা (ভূঞাবাড়ি), আব্দুল মতিন (থানা সংলগ্ন বাড়ি ও চারটি দোকান), বলাগত উল্যা চেয়ারম্যান (বাবুপুর, চৌধুরী বাড়ি), আবুল হাশেম (কাদরা), হুমায়ুন কবির (কাদরা, ব্যাপারী বাড়ি), নূর ইসলাম (সাতবাড়িয়া, বদু সরকারের বাড়ি), আবদুল মতিন মাস্টার (ডমুরুয়া, চেয়ারম্যান বাড়ি), আবদুল গফুর (ছাতারপাইয়া, চেয়ারম্যান বাড়ি), গণেশ চন্দ্র চন্দ (শ্রীপদ্দি), সুরেশ চন্দ্র আইচ (দেবীসিংহপুর), হরিলাল সাহা (মোহাম্মদপুর), শ্রমিকনেতা আবদুল হক (মহিদীপুর), অহিদের রহমান (মোহাম্মদপুর, চেয়ারম্যান বাড়ি), মো. ইসমাইল মিয়া (বাতাকান্দি, মিয়া বাড়ি), কে বি এম আব্দুল খালেক মিয়া (ঐ), আবদুস সামাদ মিয়া (ঐ), আবদুল আজিজ মিয়া (ঐ), দেলোয়ার হোসেন মিয়া (ঐ), নজু মিয়া (ঐ), ফজল মিয়া (ঐ), মধু মিয়া (ঐ), আবদুল বারিক মিয়া (ঐ), মৌলভী নাদেরেজ্জামান (ঐ, সুকানি বাড়ি), আবদুল আউয়াল (ঐ), আহম্মদ উল্যা (ঐ), আজিজ উল্যা (ঐ), সিরাজ মিয়া (ঐ, ফরায়েজী বাড়ি), রুহুল আমিন ভূঞা (কেশারপাড়), মোজাম্মেল হোসেন ভূঞা (কেশারপাড়) এবং মোখলেছুর রহমান ভাসানী (কেশারপাড়)-র বাড়িসহ গাজীর হাট (বাবুপুর-শ্রীপুর)-এর সকল দোকান এবং কানকিরহাট বাজার (বীরকোট)-এর দুটি দোকান তারা পুড়িয়ে দেয়। সেনবাগ সদরের সিও অফিস এবং ডোমনাকান্দি ক্যাম্প ছিল পাকবাহিনীর নির্যাতনকেন্দ্র। এ-দুটি স্থানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের লোকদের ধরে এনে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হতো। কানকিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের দক্ষিণ পাশে পাকবাহিনীর হাতে শহীদ চারজন মুক্তিযোদ্ধার কবর আছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সেনবাগের কানকিরহাট ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্ভেদ্য দুর্গ। পাকবাহিনী কখনোই এখানে প্রবেশ করতে পারেনি। তবে অন্যান্য স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধ হয়। সেগুলো হলো— সেনবাগ সদর যুদ্ধ, ছিলোনিয়া যুদ্ধ, পোদ্দারপুকুর যুদ্ধ, কল্যান্দি যুদ্ধ ও ডোমনাকান্দি যুদ্ধ। ১৪ই আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে পাকসেনারা আনন্দ-উল্লাসে বিভোর থাকবে মনে করে এদিন রাতে মুক্তিযোদ্ধারা সেনবাগ থানা সদরে অবস্থিত মিলিশিয়া ক্যাম্প আক্রমণ করেন। কিন্তু পাকবাহিনী সতর্ক থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা সুবিধা করতে না পেরে পিছু হটেন এবং পরদিন পুনরায় আক্রমণ করেন। এদিনও তেমন সুবধা করতে পারেননি। পরের দিন ১৬ই আগস্ট সকালে পাকবাহিনী থানা সদরের আশ-পাশের ৮টি বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয় এবং চারিদ্রোন গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইলিয়াছকে গুলি করে হত্যা করে ৮ই অক্টোবর খালেক কমান্ডারের নেতৃত্বে ছিলোনিয়া যুদ্ধে ১০-১২ জন পাকসেনা নিহত ও ৩ জন আহত হয় এবং ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১লা নভেম্বর পোদ্দারপুকুর যুদ্ধে পাকবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন ও তিনজন রাজাকার নিহত হয়। ১৪ই নভেম্বর কমান্ডার ওবায়েদ উল্লাহর নেতৃত্বে কল্যান্দি যুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ৭ জন পাকসেনা নিহত হয়। ১৯শে নভেম্বর কমান্ডার রুহুল আমিনের নেতৃত্বে ডোমনাকান্দি যুদ্ধে দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও কয়েকজন আহত হন এবং ৮ জন রাজাকার নিহত হয়। ২৫শে নভেম্বর সেনবাগ উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা হলেন— এরশাদ আলী, বীর উত্তম (পিতা আলী মিয়া, বিষ্ণুপুর), তরিক উল্লাহ, বীর বিক্রম (পিতা আকু আলী, শায়েস্তানগর), শাহজালাল আহমেদ, বীর প্রতীক (পিতা আলতাফ আলী, বাবুপুর) ও কাজী জয়নাল আবেদীন, বীর প্রতীক (পিতা মো. হারিস মিয়া, সেনবাগ)।
সেনবাগের বহু সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা নিজস্ব এলাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে শহীদ হন। তাঁরা হলেন- এরশাদ আলী, বীর উত্তম (১লা এপ্রিল রংপুরে শহীদ), তরিক উল্লাহ, বীর বিক্রম (২৮শে নভেম্বর যশোর জেলার শার্শা উপজেলার কাগজপুকুর যুদ্ধে শহীদ), ল্যান্স নায়েক শাহজালাল আহমেদ, বীর প্রতীক (১৮ই সেপ্টেম্বর পরশুরামে শহীদ), আবদুল হক (পিতা বজু মিয়া মজুমদার, ছাতারপাইয়া; ২০শে জুন ঢাকায় শহীদ), মোহাম্মদ আলী (পিতা রাশাদ মিয়া, খাজুরিয়া; ১৯শে নভেম্বর ডোমনাকান্দি যুদ্ধে শহীদ), আবদুর রহিম (পিতা ওমর আলী, ইটবাড়িয়া; ৬ই ডিসেম্বর সোনাইমুড়ীতে শহীদ), সিপাহি আবদুর রাজ্জাক (পিতা ফজলের রহমান, কলাবাড়িয়া; ২৬শে মার্চ যশোর ক্যান্টনমেন্টে শহীদ), আবুল কাশেম (পিতা হাশমত উল্লাহ, মজিরখিল; ৫ই সেপ্টেম্বর নাঙ্গলকোটে শহীদ), আলী আকবর (পিতা দুধা মিয়া, খাজুরিয়া; ১৮ই জুন খাজুরিয়ায় শহীদ), সৈয়দ মূসা কবির (পিতা সৈয়দ মোর্তুজা হোসেন, খাজুরিয়া; ২৯শে আগস্ট ভারত সীমান্তে শহীদ), মধু মিয়া (পিতা আতর আলী, খাজুরিয়া; ২৭শে জুলাই খাজুরিয়ায় শহীদ), সোলায়মান মজুমদার (পিতা আক্তার হোসেন মজুমদার, মজিরখিল; ২৭শে মার্চ কুমিল্লা টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অপারেশনে শহীদ), আবদুল গোরফান ভূঞা (পিতা জিন্তআলী ভূঞা, পাইখাস্তা; ২৬শে মার্চ চট্টগ্রামের দামপাড়ায় শহীদ), আলী আক্কাছ (পিতা আরব আলী, নলুয়া; ২৬শে মার্চ চট্টগ্রামের দামপাড়ায় শহীদ), আলী আকবর (পিতা আবদুল আজিজ ভূঞা, জিরুয়া), সিপাহি আবদুল হক (পিতা মো. হানিফ, উত্তর সাহাপুর; ২৬শে মার্চ যশোর ক্যান্টনমেন্টে শহীদ), আবু তাহের (পিতা আনোয়ার উল্লাহ, মইশাই; ১৯শে নভেম্বর ডোমনাকান্দিতে শহীদ), আবদুস সামাদ (পিতা আলী আহম্মদ, বাবুপুর; ১৭ই জুন ফুলগাজিতে শহীদ), তালেব আলী (পিতা মমতাজ মিয়া, শুভপুর; ২৯শে মার্চ চট্টগ্রামের দামপাড়ায় শহীদ), শাহ আলম (পিতা সেকান্দর মিয়া, কাদরা; ৮ই অক্টোবর ছিলোনিয়ায় শহীদ), আবুল কাশেম (পিতা আফজল মিয়া, পুরুষ্কর; ২৬শে মার্চ চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে শহীদ), গোলাম রছুল (পিতা নুর মিয়া, বাতানিয়া; ২৬শে মার্চ চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে শহীদ), আবুল কাশেম (পিতা আশক আলী, দক্ষিণ গোরকাটা; ৮ই অক্টোবর ছিলোনিয়ায় শহীদ), ঈদ্রিছ মিয়া (পিতা মো. হোসেন, দক্ষিণ গোরকাটা; ২০শে সেপ্টেম্বর ঢাকায় শহীদ), মো. আজিজ উল্লাহ (পিতা পানাউল্লাহ, বাতাকান্দি; ৮ই অক্টোবর বাতাকান্দিতে শহীদ), সিরাজ মিয়া (পিতা ইব্রাহিম মিয়া, বাতাকান্দি; ৮ই অক্টোবর বাতাকান্দিতে শহীদ), আবদুর রব (পিতা মৌলবী নাদেরেজ্জামান, বাতাকান্দি; ৮ই অক্টোবর বাতাকান্দিতে শহীদ), মোমিনুল হক (পিতা দানা মিয়া, আজিজপুর; ৮ই অক্টোবর বাতাকান্দিতে শহীদ), ইলিয়াছ সরকার (পিতা বজলের রহমান, বাতাকান্দি; ৮ই অক্টোবর বাতাকান্দিতে শহীদ), আবদুর রহমান (পিতা ছেরাজুল হক, বাতাকান্দি ; ৮ই অক্টোবর বাতাকান্দিতে শহীদ), মকবুল হোসেন (পিতা মৌলবী জিন্নত উল্লাহ, উত্তর মোহাম্মদপুর; ৬ই এপ্রিল চট্টগ্রামে শহীদ), আবদুল খালেক (পিতা আবদুস সালাম, মোহাম্মদপুর), আমিরুল ইসলাম (পিতা মু. খায়েজ আহম্মদ, বিজবাগ; চট্টগ্রামে শহীদ), আবুল খায়ের (পিতা . আবদুল মুনাফ, ধর্মপুর; চট্টগ্রামে শহীদ), আবদুর রশিদ (পিতা ইউনুছ মিয়া, বালিয়াকান্দি; ১০ই ডিসেম্বর চট্টগ্রামের হালীশহরে শহীদ), রফিক উল্লাহ ভূঞা (পিতা সেকান্দর ভূঞা, দক্ষিণ গোবিন্দপুর), আবদুর রশিদ (পিতা আবদুল খালেক, কাদরা; ২৯শে আগস্ট ভারত সীমান্তে শহীদ), আবদুর রব (পিতা আবদুছ ছামাদ, কালারাইতা), আবদুর রশিদ (পিতা কালা মিয়া, অর্জুনতলা; ২৬শে মার্চ রংপুরে শহীদ), আবদুল কাদের (পিতা ওয়াজি উল্লাহ, কাদরা; ১৮ই অক্টোবর ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শহীদ), সাইফুল ইসলাম (পিতা বালু মিয়া, শ্রীপুর), হেদায়েত উল্লাহ (পিতা ছফর আলী মোল্লা, উত্তর মানিকপুর), আবু তাহের (পিতা দুলা মিয়া, ছাতারপাইয়া; ১৯শে অক্টোবর ডোমনাকান্দি যুদ্ধে শহীদ), ডা. আমিন উল্লাহ (পিতা কালা মিয়া, কলাবাড়িয়া), রফিক উল্লাহ (পিতা নুরুল হক, দক্ষিণ মানিকপুর), শফিকুর রহমান (পিতা আহম্মদ মিয়া, দক্ষিণ মানিকপুর), মেহেন্দি মিয়া (পিতা আজিজ মিয়া, পূর্ব আহম্মদপুর; ১০ই নভেম্বর মহিদীপুরে শহীদ), আবদুল জলিল (পিতা আবদুল লতিফ, সোনাকান্দি), আবু তাহের (পিতা মৌলবী আজিজ উল্লাহ, বিজবাগ; ১০ই নভেম্বর শহীদ) এবং সেকান্দর মিয়া (পিতা সৈয়দ আলী, ইয়ারপুর; ৩রা নভেম্বর কাবিলপুরে শহীদ)। সেনবাগ উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। এছাড়া উপজেলা স্টেডিয়ামের নাম “শহীদ তরিক উল্লাহ বীর বিক্রম স্টেডিয়াম’ এবং ছমিরমুন্সিরহাট থেকে কুতুবেরহাট পর্যন্ত সড়কের নাম ‘শহীদ এরশাদ আলী বীর উত্তম সড়ক’ রাখা হয়েছে। [মুহম্মদ আবু তাহের]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড