সূর্যমণি সুইস গেইট গণহত্যা (মঠবাড়ীয়া, পিরোজপুর)
সূর্যমণি সুইস গেইট গণহত্যা (মঠবাড়ীয়া, পিরোজপুর) সংঘটিত হয় ৯ই অক্টোবর। এতে ২৫ জন নিরীহ গ্রামবাসী হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
মঠবাড়ীয়া উপজেলার টিকিকাটা ইউনিয়নে অবস্থিত সূর্যমণি সুইস গেইট ছিল একটি বধ্যভূমি। এখানকার বেড়িবাঁধে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা অসংখ্য স্বাধীনতাকামী মানুষকে হত্যা করে লাশ ফেলে রাখে। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ক্যাপ্টেন এজাজের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মঠবাড়ীয়ায় প্রবেশ করে এখানকার স্বাধীনতার পক্ষের লোকজন সম্বন্ধে খবরাখবর নিতে শুরু করে। তার উপস্থিতিতে মে মাসের শেষের দিকে খান সাহেব হাতেম আলীকে সভাপতি এবং আব্দুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ারকে সহ-সভাপতি করে মঠবাড়ীয়া থানা শান্তি কমিটি গঠিত হয়। পরবর্তীতে এদের নেতৃত্বে অত্র অঞ্চলে হত্যা, লুণ্ঠন, নারীনির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। তারা এ সময় শতশত নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর গণহত্যা চালায়।
৬ই অক্টোবর সন্ধ্যার পর স্থানীয় রাজাকার বাহিনী বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩৭ জন নিরীহ মানুষকে ধরে সূর্যমণি সুইস গেইটের বেড়িবাঁধে এনে বেঁধে রাখে। এর মধ্যে ৭ জনকে মঠবাড়ীয়া থানায় নিয়ে নির্যাতন করে অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়। বাকি ৩০ জনকে হাত-পা বেঁধে ৯ই অক্টোবর ভোররাতে খালের পাড়ে সূর্যমণি সুইস গেইটে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। সে-সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ৫ জন বেঁচে যান এবং ২৫ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। তাদের মধ্যে ২২ জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- আঙ্গুলকাটা গ্রামের শৈলেন্দ্ৰনাথ মিত্র (পিতা উপেন্দ্রনাথ মিত্র), সুরেন্দ্রনাথ মিত্র (পিতা অভয়চরণ মিত্র), পরিমল মিত্র (পিতা মুকুন্দ মিত্র), মুকুন্দ বিহারী মিত্র (পিতা ভোলানাথ মিত্র), জিতেন্দ্ৰ নাথ মিত্র (পিতা মুধুসূদন মিত্র), ফণীভূষণ মিত্র (পিতা মুধুসূদন মিত্র), অধীর রঞ্জন মিত্র (পিতা রাজেন্দ্র মিত্র), সুধীর রঞ্জন মিত্র (পিতা ভোলানাথ মিত্র, টিকিকাটা), ঝন্টু রঞ্জন মিত্র (পিতা বিনোদ রঞ্জন মিত্র), মঠবাড়ীয়া সদরের নগেন্দ্রনাথ কীর্তনিয়া (পিতা উপেন কীর্তনিয়া), অনিল চন্দ্র হাওলাদার, অন্নদা চরণ হাওলদার, সুধাংশু কুমার হালদার, বীরাংশু কুমার হালদার, মধুসূদন হালদার, রবীন্দ্রনাথ হালদার, হরেন্দ্র নাথ মাঝি, ইমান্ত বালা (পিতা জিতেন বালা), জিতেন্দ্ৰ নাথ মৃধা, সীতানাথ হাওলাদার (মিরুখালী), সত্যেন্দ্র নাথ রায় (পিতা পেয়ারী মোহন রায়, ভান্ডারিয়া) ও নীহার রঞ্জন সর্পন (পিরোজপুর)। সূর্যমণি বধ্যভূমিতে গণহত্যার শিকার শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ১৯৯৬ সালে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। মঠবাড়ীয়ার মানুষ মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সূর্যমণি বেড়িবাঁধের লোমহর্ষক স্মৃতি এখনো বহন করে চলছে। [মো. মাসুদুর রহমান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড