You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর বিক্রম সুলতান আহমেদ - সংগ্রামের নোটবুক

বীর বিক্রম সুলতান আহমেদ

সুলতান আহমেদ, বীর বিক্রম সুবেদার মেজর ও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত হাটহাজারী উপজেলার ফতেহাবাদে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা মোখলেছুর রহমান এবং মাতা আজব খাতুন।
চাকরি জীবনের প্রথম পর্যায়ে সুলতান আহমেদ পাকিস্তান পুলিশ বাহিনীর সদস্য ছিলেন। ১৯৪৮ সালে এ বাহিনীতে যোগদান করে তিনি কোয়েটা পুলিশ ট্রেনিং একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন।
পরবর্তীতে ১৯৫৯ সালে যখন ইপিআর বাহিনী পুনর্গঠিত করে পুলিশ বাহিনীর চৌকস সদসদ্যের এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়, সুলতান আহমেদকে তখন এ বাহিনীতে নিয়োগ করা হয়। ৭১-এ সুলতান তাঁর কর্মস্থল ছিল পিলখানায় (ইপিআর সদর দপ্তর)। ২৫শে মার্চ কালরাতে তিনি রাষ্ট্রপতি ভবনে কর্তব্যরত ছিলেন। পিলখানা থেকে তাঁদের প্রতিদিনের খাবার সরবরাহ করা হতো। কিন্তু সারাদিন অপেক্ষার পরও খাবার না আসায় কয়েকজন সঙ্গীসহ তিনি গাড়ি নিয়ে খাবার আনতে পিলখানায় যান। গাড়ি ১ নম্বর গেটের কাছে রেখে ভেতরে প্রবেশ করার পর একটা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি টের পান। মধ্যরাতে গোলাগুলি শুরু হলে পরিস্থিতি বুঝতে পেরে তিনি সঙ্গীদের নিয়ে ড্রেনে অবস্থান নেন। এরপর সতর্কতার সঙ্গে দেয়াল টপকে পিলখানার বাইরে বের হয়ে ডেমরায় চলে যান। সেখান থেকে ২৮শে মার্চ তিনি ক্যাপ্টেন মতিউর রহমানের সঙ্গে যোগ দেন এবং নরসিংদী জেলার পাঁচদোনায় গিয়ে ডিফেন্স পজিশন নেন। ২৯শে মার্চ পাকবাহিনী ঢাকা থেকে নরসিংদীর দিকে অগ্রসর হতে থাকলে সুলতান আহমেদ প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে চারদিক থেকে তাদের ঘিরে ফেলেন এবং ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম হন। এক পর্যায়ে পাকবাহিনীর অপর একদল সৈন্য এসে তাঁদের ওপর ব্যাপকভাবে আর্টিলারি গোলা নিক্ষেপ করতে থাকে। এ অবস্থায় সঙ্গীদের নিয়ে সুলতান আহমেদ নিজেদের অবস্থান থেকে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যান। পরবর্তীতে ১১ই এপ্রিল পাকবাহিনী বিমান হামলাসহ রি-ইনফোর্সমেন্টের মাধ্যমে সৈন্য সংখ্যা বাড়ালে তিনি পিছু হটে মাধবপুরে অবস্থান নেন। সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধ শুরু হলে তিনি ৩ নম্বর সেক্টরের অধীনে এবং ব্রিগেড ফোর্স গঠিত হওয়ার পর ‘এস’ ফোর্সে অন্তর্ভুক্ত হয়ে মাধবপুর, আখাউড়া ও আশুগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে অংশ নিয়ে বীরত্বের পরিচয় দেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা প্রদর্শন ও বীবত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সুলতান আহমেদকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ১ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রী জরিনা খাতুন। ১৯৭৯ সালের ১২ই এপ্রিল বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান আহমেদ মৃত্যুবরণ করেন। [হারুন রশীদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড