সুতারকান্দি যুদ্ধ (বিয়ানীবাজার, সিলেট)
সুতারকান্দি যুদ্ধ (বিয়ানীবাজার, সিলেট) সংঘটিত হয় ২৪শে মে। এতে ২৯ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত ও ২ জন বন্দি হয়। অপরদিকে এক বাঙালি রাখাল বালক শহীদ ও ২ জন মুক্তিযোদ্ধা গুরুতর আহত হন।
সিলেট শহরে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধারা এপ্রিলের ১০ তারিখের পর ভারত সীমান্তের বড়গ্রাম বিওপি এলাকায় প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। আর পাকিস্তানি বাহিনী অবস্থান নেয় শেওলা ফেরিঘাটে। ৪ নম্বর সেক্টরের গোলাপগঞ্জে মুক্তিবাহিনীর যে প্রতিরক্ষাব্যূহ ছিল, এপ্রিল মাসের শেষের দিকে তা সরিয়ে নেয়া হয় বড়গ্রাম বিওপি-তে। সেখানে গড়ে ওঠে নতুন ডিফেন্স। শেওলাঘাট দিয়ে কুশিয়ারা নদী অতিক্রম করে পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ করার একটি পরিকল্পনা ছিল মুক্তিবাহিনীর। বিয়ানীবাজার ও জকিগঞ্জ তখনো মুক্ত। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের একটি বাহিনী এসে শেওলা ফেরিঘাটে ডিফেন্স নেয়। দ্বিতীয় সপ্তাহে তাদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়। বড়গ্রাম থেকে মাঝে-মধ্যে ক্যাপ্টেন রব তাঁর দলবল নিয়ে শেওলায় অবস্থিত পাকবাহিনীর অবস্থানের ওপর আক্রমণ করলেও বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষ হয়নি। এ অবস্থায় ২৪শে মে পাকবাহিনী কুশিয়ারা নদী অতিক্রম করে ধীরে-ধীরে অগ্রসর হতে থাকে। দুটি কোম্পানি নিয়ে তারা এগিয়ে আসে। ক্যাপ্টেন রবও প্রস্তুত। পাকসেনারা তাঁদের অস্ত্রের আওতায় আসামাত্র ক্যাপ্টেন রব তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি ছোড়ার নির্দেশ দেন। সঙ্গে-সঙ্গে বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষিত হতে থাকে। এতে পাকবাহিনীর অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই পাকহানাদাররা আর্টিলারি এবং অন্যান্য স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের সাহায্যে পাল্টা আক্রমণ করে। পাকিস্তানিদের এক কোম্পানি সুতারকান্দি এবং অপর কোম্পানি বড়গ্রাম আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা সংখ্যায় ছিলেন কম, ১ কোম্পানির মতো। এরপরও তাঁরা বীর বিক্রমে পাকসেনাদের মোকাবেলা করেন। পাকসেনারা চরমভাবে মার খায়। মুক্তিবাহিনী দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। এক পর্যায়ে মুক্তিবাহিনীর গোলাবারুদ শেষ হয়ে এলে তাঁরা পিছু হটতে বাধ্য হন। দিনব্যাপী এ-যুদ্ধে ক্রসফায়ারে পড়ে এক বাঙালি রাখাল বালক প্রাণ হারায়। গুরুতর আহত হন দুই মুক্তিযোদ্ধা। অপরদিকে পাকিস্তানি বাহিনীর ২৯ জন সৈন্য নিহত এবং ২ জন বন্দি হয়। [জগন্নাথ বড়ুয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড