বীর বিক্রম সিরাজুল হক
সিরাজুল হক, বীর বিক্রম মুজাহিদ ও একজন অকুতোভয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। তিনি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলাস্থ দোরকারা ইউনিয়নের কাপরচৌতুলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম লাল মিয়া এবং মাতার নাম হাজেরা খাতুন।
সিরাজুল হক মুজাহিদ বাহিনীতে চাকরি করতেন। কিছুদিন চাকরি করার পর চাকরি থেকে অব্যাহত নিয়ে বাড়িতে এসে কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত হন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশকে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হাত থেকে মুক্ত করার দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ১৪ই এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী চৌদ্দগ্রাম বাজার আক্রমণ করলে সিরাজুল হক সহযোদ্ধাদের নিয়ে তা প্রতিহত করেন এবং ৩০-৩৫ জন পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করেন। ২৯ ও ৩০শে মে এখানে পাকবাহিনীর সঙ্গে পুনরায় যুদ্ধের এক পর্যায়ে তিনি কৌশলগত কারণে পিছু হটে অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ভারতীয় এলাকায় অবস্থান নেন। সেখানে তিনি নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর ৪র্থ রেজিমেন্টের সঙ্গে যুক্ত হন এবং ২ নম্বর সেক্টরের মন্দবাগ সাব-সেক্টরের বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নিয়ে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করের। সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে পাকবাহিনী পুনরায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালালে ৩ জন সহযোদ্ধাসহ সিরাজুল হক বাংকারে অবস্থান নিয়ে তা প্রতিহত করতে থাকেন। যুদ্ধের এক পর্যায়ে শত্রুপক্ষের নিক্ষিপ্ত মর্টারের গোলা বাংকারে এসে পড়লে ঘটনাস্থলেই ৩ জন সহযোদ্ধাসহ সিরাজুল হক শাহাদত বরণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান এবং আত্মোৎসর্গের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তিনি ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত হন। তিনি ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম সরিফা খাতুন। [হারুন রশীদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড