You dont have javascript enabled! Please enable it! সীমাখালী যুদ্ধ (গফরগাঁও, ময়মনসিংহ) - সংগ্রামের নোটবুক

সীমাখালী যুদ্ধ (গফরগাঁও, ময়মনসিংহ)

সীমাখালী যুদ্ধ (গফরগাঁও, ময়মনসিংহ) দুবার সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে অর্ধশত পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয় এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ ৪ জন গ্রামবাসী শহীদ হন।
সীমাখালী একটি নদীর নাম। যাত্রাসিদ্ধি ও কন্যামণ্ডল গ্রাম দুটির মাঝখান দিয়ে এটি প্রবহমান। মুক্তিযুদ্ধকালে নদীর ওপর নির্মিত কাঠের ব্রিজ ছিল দুই গ্রামের যোগাযোগের মাধ্যম। দুই মাসের ব্যবধানে এখানে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
১ম যুদ্ধ হয় সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি। মুক্তিযোদ্ধারা জানতে পারেন গফরগাঁও থেকে পাকিস্তানি সৈন্যরা দত্তেরবাজার অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছে। এ খবর পেয়ে এখানকার মুক্তাঞ্চলে অবস্থানরত ইকবাল-ই-আলম কামাল ও মঞ্জুর কাদেরের নেতৃত্বে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা হানাদার বাহিনীকে প্রতিহত করতে প্রস্তুত হন। তাঁরা সীমাখালী নদীর পাড়ে এম্বুশ নেন। হানাদার বাহিনী টার্গেটের মধ্যে চলে এলে মুক্তিযোদ্ধারা গুলিবর্ষণ শুরু করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আকস্মিক আক্রমণে তাৎক্ষণিক কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয়। বাকি সৈন্যরা দুভাগে বিভক্ত হয়ে রাস্তার দুদিকে অবস্থান নিয়ে পাল্টা গুলিবর্ষণ শুরু করে। উভয় পক্ষের মধ্যে ৬-৭ ঘণ্টা তীব্র যুদ্ধ শেষে নিহত ও আহত মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত হতাহত সৈন্য নিয়ে হানাদার বাহিনী পালিয়ে যায়। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ী হন।
২য় যুদ্ধ হয় প্রথম যুদ্ধের প্রায় দেড় মাস পর। পুনরায় পাকিস্তানি বাহিনী দত্তেরবাজার অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছে মর্মে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে খবর আসে। পূর্বের মতোই তাঁরা হানাদার বাহিনীকে প্রতিহত করতে এম্বুশ নেন। এদিন তাঁদের সঙ্গে আরো শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা যোগ দেন। তাঁদের মধ্যে ২০ জনের একটি প্রটেকশন গ্রুপও রাখা হয়। অপরদিকে ১ম যুদ্ধে ভরাডুবির ফলে হানাদাররা এবার ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। তারা ৭০- ৮০ জন সশস্ত্র রাজাকারকে ফ্রন্ট প্রটেকশনে রাখে। পাকবাহিনীর ভারী অস্ত্র, ব্যাপক প্রস্তুতি ও হিংস্রতায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রটেকশন ভেঙ্গে পড়ে। এক পর্যায়ে প্রটেকশন গ্রুপের ২০ জনসহ মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশ নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেলেও কমান্ডার মঞ্জুর কাদেরের নেতৃত্বে অন্যরা প্রতিরোধ চালিয়ে যান। কয়েক ঘণ্টার যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা মান্নান (পাকুন্দিয়া নগর) ও মাহতাব (লামকাইন) এবং নিরীহ দুই গ্রামবাসী মো. মোবারক (উত্তর হারিনা) ও করিম (যাত্রাসিদ্ধি) শহীদ হন। কোম্পানি কমান্ডার মঞ্জুর কাদের ও খালেক বীরত্বের সঙ্গে পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করতে থাকা অবস্থায় এক পর্যায়ে নিজেদের অরক্ষিত আবিষ্কার করেন এবং গাছের আড়ালে গা- ঢাকা দেন। যুদ্ধ শেষে হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজে বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং ক্রুদ্ধ হয়ে ২০টির অধিক বাড়িঘর আগুনে জ্বালিয়ে দেয়। তারা রাস্তায় যাদের পায়, তাদেরকেই হত্যা করে। তাদের হিংস্রতা ও বিদ্বেষের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, যাত্রাসিদ্ধি গ্রামের ফকির বাড়ি মসজিদের ইমাম আফতাব উদ্দিন খোনকারকেও এত্তেকাফ (গভীর রাতে নিমগ্ন চিত্তে ইবাদত)রত অবস্থায় তারা হত্যা করে। [নিপা জাহান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড