You dont have javascript enabled! Please enable it! মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মঘাতী দল 'সুইসাইডাল স্কোয়াড' (বরিশাল সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মঘাতী দল ‘সুইসাইডাল স্কোয়াড’ (বরিশাল সদর)

সুইসাইডাল স্কোয়াড (বরিশাল সদর) মুক্তিযুদ্ধকালে বরিশাল শহরে গড়ে ওঠা মুক্তিযোদ্ধাদের একটি আত্মঘাতী দল। সিরাজ সিকদারের দলছুট কমান্ডার রেজায়ে সাত্তার ফারুকের নেতৃত্বে এ স্কোয়াড গঠিত হয়। সাত্তার ফারুক ছিলেন এ বাহিনীর গ্রুপ লিডার। তিনি সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে স্বরূপকাঠির আটঘর-কুড়িয়নায় পাকিস্তানি হানাদার ”বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন যুদ্ধে সাহসিকতা ও নৈপুণ্যের পরিচয় দেন। এক পর্যায়ে সিরাজ সিকদারের নিকট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ৯নং সেক্টরের নির্দেশে তিনি সুইসাইডাল স্কোয়াড গঠন করেন। এ স্কোয়াড গঠনের উদ্দেশ্য ছিল বরিশাল শহরে বোমা ইত্যাদি নিক্ষেপ করে হানাদার বাহিনী, শান্তি কমিটি – ও রাজাকারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। বরিশাল সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মাধবপাশায় এ স্কোয়াডের ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। স্কোয়াডের উল্লেখযোগ্য সদস্যরা হলেন- সুলতান আলম মজনু, সিরাজুল আলম জাহাঙ্গীর, মো. শাহজাহান হাওলাদার, শেখ ইব্রাহিম রবিন, মোফাজ্জেল, তোফাজ্জেল হোসেন খোকা, আবদুল বারেক, স্বরুপ আলী, মজিবুর মাস্টার, লেহাজউদ্দিন, কুমুদরঞ্জন, বাবুল চন্দ্র ঘোষ, রাখালচন্দ্র সেন প্রমুখ। এঁরা একযোগে বরিশাল শহরের প্রধান-প্রধান স্থানে বোমা হামলা করার সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী ২১শে অক্টোবর কমান্ডার রেজায়ে সাত্তার ফারুক বরিশাল বি এম স্কুলের মাঠ থেকে রিভলবারের গুলি ছুড়ে সংকেত দিলে শহরের অন্যান্য স্থানে একযোগে একের পর এক তাঁরা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চতুর্দিক প্রকম্পিত করেন। কুমুদরঞ্জন হাসপাতালের নিকট, বাবুল চন্দ্র ঘোষ ও রাখাল চন্দ্র সেন বিসমিল্লাহ বোর্ডিং এবং সোনালী সিনেমা হল, মালেক মোসলেম রেস্টুরেন্ট, রবিন বটতলা এবং ফারুক সিএসডিতে এ বোমা হামলা করেন। পরবর্তীতে তাঁরা প্রায়ই শহরে বোমা হামলা করতেন।
৩০শে নভেম্বর বরিশাল শহরে শান্তি কমিটির নেতা শাহজাহান চৌধুরী, এডভোকেট আ. রব ও এডভোকেট শমসের আলীর নেতৃত্বে ভারতবিরোধী এক শোভাযাত্রা বের হয়। এদের সঙ্গে -আলবদর বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্রসহ এতে যোগ দেয়। রেজায়ে সাত্তার ফারুকের নেতৃত্বে সুইসাইডাল স্কোয়াড ঐ শোভাযাত্রার ওপর ঝটিকা আক্রমণ চালায়। বাজার রোডে এ শোভাযাত্রার ওপর রকেট নামে ১৩ বছরের এক ছাত্র, জেলখানার নিকট গিয়াসউদ্দিন এবং হাসপাতাল রোডে আওয়ামী লীগ নেতা কাজেম মিয়ার বাসা থেকে কুমুদরঞ্জন কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে বোমা হামলা করেন। এতে স্বাধীনতাবিরোধীদের কয়েকজন হতাহত হয়। শোভাযাত্রা ভেঙ্গে গেলে হানাদার বাহিনী ক্ষোভে কাজেম মিয়া এবং ছাত্রনেতা আলতাফ হোসেন অরুণের বাড়ি ও পাড়া জ্বালিয়ে দেয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ঝাউতলা থেকে তারা মতি সেন, ক্যাপ্টেন ইউ এন গুহ এবং মোজাম্মেলকে গ্রেফতার করে। পরের দিন মতি সেন ও ক্যাপ্টেন ইউ এন গুহকে টাউন হলে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধকালে বরিশাল শহরে সুইসাইডাল স্কোয়াডের এ ধরনের তৎপরতা অনেককে অবাক করে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে উজ্জীবিত করে। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড