You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ

সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, বীর প্রতীক (১৯৪২-১৯৭২) বীর মুক্তিযোদ্ধা, ‘ন্যাভাল সিরাজ’ নামে স্থানীয়ভাবে অধিক পরিচিত। তিনি ১৯৪২ সালে নরসিংদী সদর থানার অন্তর্গত পাঁচদোনা ইউনিয়নের নেহাব গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. জবেদ আলী। সাত ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সপ্তম। তিনি গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর ঘোড়াশাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৬ সালে ম্যাট্রিক পাশ করে পরের বছর পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগ দেন। চাকরিরত অবস্থায় তিনি করাচি ইসলামিয়া ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। তাঁর চার ছেলে ও এক মেয়ে।
পাকিস্তান নৌবাহিনীতে সিরাজ উদ্দিন আহমেদের পদবি ছিল লিডিং রাইটার। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ ঢাকায় পাকসেনাদের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পূর্বেই তিনি ছুটি কাটাতে নিজ গ্রাম নেহাবে আসেন। ফেব্রুয়ারি মাসেই তাঁর ছুটি শেষ হয়ে যায়। কিন্তু দেশে তখন সঙ্কটপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছিল। চারদিকে রাজনৈতিক অসন্তোষ ও অস্থিরতা। এ অবস্থায় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ ক্লাসের ছাত্র একই গ্রামের মুহম্মদ ইমাম উদ্দিনের সঙ্গে ঢাকার এবং দেশের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বুঝতে পারেন যে, দেশ দ্রুত সংঘাতময় পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অতএব কর্মস্থলে যোগদান না করে আরো কিছুদিন ছুটি কাটানোর জন্য ইমাম উদ্দিন তাঁকে পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী তিনি আরো কিছুদিন অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছুটি বর্ধিত করণের আবেদন জানান।
২৫শে মার্চ পাকসেনাদের বর্বরতম গণহত্যার পরপরই শুরু হয় সিরাজ উদ্দিন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধের কার্যক্রম। তিনি জনগণকে সংগঠিত করার জন্য সাংগঠনিক কার্যক্রম, মুক্তিযোদ্ধাদের স্থানীয়ভাবে ট্রেনিং প্রদানের জন্য ট্রেনিং সেন্টার খোলা, যুদ্ধের তত্ত্বাবধান করাসহ মুক্তিযুদ্ধকে সুপরিকল্পিতভাবে পরিচালনা করার যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ করেন এবং অত্যন্ত দক্ষতা, যোগ্যতা ও সাহসিকতার সঙ্গে স্থানীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নেন। যুদ্ধে কৃতিত্ব, দক্ষতা ও সাহসিকতার জন্য স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে।
১৯৭২ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর স্থানীয় পুরিন্দা বাজারে একদল সন্ত্রাসী অত্যন্ত নির্মমভাবে পিটিয়ে তাঁকে হত্যা করে। তাঁর মৃত্যুর পর জনগণের ইচ্ছানুযায়ী পাঁচদোনা স্যার কে জি গুপ্ত হাইস্কুলের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে তাঁকে সমাহিত করা হয়। বাক্তিগত প্রচেষ্টায় তাঁর কবরটি বাঁধানো হলেও বর্তমানে অযত্ন অবহেলায় সেটি কোনোরকমে টিকে আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ন্যাভাল সিরাজ বাহিনী নামে স্থানীয় একটি মুক্তিবাহিনী গঠন করেছিলেন, যা মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখে। [মুহম্মদ ইমাম উদ্দিন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড