সাতানীপাড়া খাকুরভিটা গণহত্যা (কালীগঞ্জ, গাজীপুর)
সাতানীপাড়া খাকুরভিটা গণহত্যা (কালীগঞ্জ, গাজীপুর) সংঘটিত হয় ২৭শে নভেম্বর। এ গণহত্যায় রাঙামাটিয়ার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মুক্তিযোদ্ধা অনিল ডি কস্টাসহ ১০ জন মানুষ শহীদ হন।
২৪শে নভেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কালীগঞ্জের খ্রিস্টান অধ্যুষিত রাঙামাটিয়ায় ট্রেনে করে আসতে শুরু করে। এ খবর জানতে পেরে এন্ড্রু ডি কস্টার আহ্বানে সাড়া দিয়ে শান্ত রোজারিও, সুনীল, আই ডি কস্টাসহ এলাকার ছাত্র-যুবকরা একত্রিত হয়। হানাদারদের প্রতিরোধে তারা আশকোনা রেলওয়ে ব্রিজ ভেঙ্গে ফেলে। ২৫শে নভেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যরা একটি মালগাড়ি বোঝাই হয়ে ব্রিজ ঠিক করতে আসে। ফিরে যাওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর হামলা করলে তারা গ্রামের দিকে ফিরে আসে। হানাদাররা যাতে গ্রামে ঢুকতে না পারে সেজন্য গ্রামের হাজার-হাজার মানুষ একত্রিত হয়ে রেললাইন উপড়ে ফেলতে শুরু করে। এ সময় হানাদার বাহিনী মালগাড়ি এবং ৩টি হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ করে জনগণকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ২৬শে নভেম্বর কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা দড়িপাড়া ব্রিজটি ধ্বংস করেন। ২৭শে নভেম্বর দুপরের পর হানাদার বাহিনীর ৩ শতাধিক সদস্য গ্রামের দিকে আসতে শুরু করে। হানাদারদের দেখে গ্রামের মানুষজন এদিক-সেদিক পালাতে থাকে। হানাদাররা গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করে বাড়ি-ঘরে আগুন দিতে থাকে। পথিমধ্যে তারা প্রার্থনারত অবস্থায় গেদু কস্টা এবং ঘর থেকে উঁকি দেয়া অবস্থায় অসুস্থ পিটার ডি কস্টাকে গুলি করে হত্যা করে। হানাদারদের ভয়ে ছোট সাতানীপাড়ার খাকুরভিটার নিকট ১০-১১ জন নারী-পুরুষ আশ্রয় নেয়। কিছুক্ষণ পর পাকিস্তানি হানাদাররা এসে প্রথমে সবাইকে লাইনে দাঁড় করায়। এরপর একসঙ্গে গুলি করলে সকলে পানিতে পড়ে যায়। হানাদারদের গুলিতে মুক্তিযোদ্ধা অনিল ডি কস্টা (পিতা মনাই কস্টা), পল রড্রিক্স, কেতু রড্রিক্স, মার্থা কস্টা (স্বামী লুকাস কস্টা), ফেলু কস্টা (পিতা বিলু কস্টা), মোরিজোসিনতা রড্রিক্স ও ডা. পিটার শহীদ হন। হানাদারদের দেয়া আগুনে পুড়ে একজন শহীদ হন। এ গণহত্যায় ঊষা মারিয়া কস্টা (পিতা এলিয়াস কস্টা) আহত হয়ে বেঁচে যান। গণহত্যায় যারা শহীদ হন, তাদের অধিকাংশই ছিলেন নিরপরাধ বয়স্ক মানুষ। পরবর্তীতে শহীদদের খ্রিস্টান কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড