সাজিউড়া গণহত্যা (কেন্দুয়া, নেত্রকোনা)
সাজিউড়া গণহত্যা (কেন্দুয়া, নেত্রকোনা) সংঘটিত হয় ৩১শে আগস্ট। এর সঙ্গে রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার মেরেঙ্গা গ্রামের কুখ্যাত আতাউর রহমান খান ওরফে মেরেঙ্গা খান প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল। ২৬শে এপ্রিল কেন্দুয়া থানায় ক্যাম্প স্থাপনের পর পাকবাহিনী রাজাকার ও দালালদের সহায়তায় থানার হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামগুলোর তালিকা প্রস্তুত করে পর্যায়ক্রমে গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, নারীধর্ষণ ও লুণ্ঠন শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় সাজিউড়া গণহত্যা সংঘটিত হয়। এতে ৪ জন নিরীহ গ্রামবাসী প্রাণ হারায়।
কেন্দুয়া সদর থেকে ৩ কিমি পূর্বদিকে চিরাং ইউনিয়নে সাজিউড়া গ্রাম অবস্থিত। এ গ্রামে অনেক খ্যাতিমান মানুষের জন্ম হয়েছিল। কলকাতার এক সময়ের মেয়র ও অভিবক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী নলিনী রঞ্জন সরকার সাজিউড়া গ্রামের সন্তান ছিলেন।
৩১শে আগস্ট দুপুরে হানাদার পাকবাহিনী রাজাকারদের সহযোগিতায় এ গ্রামে হামলা চালায়। তারা প্রথমে ডা. খগেন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস (পিতা গোপীনাথ বিশ্বাস), সতীশ চন্দ্র ঘোষ (পিতা হরচরণ ঘোষ), যতীন্দ্র নমোদাস (পিতা রাম দয়াল নমোদাস), ধনেশ নমোদাস, আশুতোষ সরকার, ডা. শংকর সরকার, নীহার রঞ্জন দে ও হরিদাস নমোদাসকে আটক করে। এরপর তারা সাজিউড়া-কেন্দুয়া সড়কের উত্তর পার্শ্বে ডা. খগেন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস, সতীশ চন্দ্র ঘোষ, যতীন্দ্র নমোদাস, ধনেশ নমোদাস এবং হরিপদ দে দুখু-কে দড়ি দিয়ে বেঁধে এক সারিতে দাঁড় করিয়ে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ ৫ জন মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলে ডা. খগেন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস, সতীশ চন্দ্র ঘোষ, যতীন্দ্র নমোদাস ও ধনেশ নমোদাস নিহত হন। আশুতোষ সরকার, ডা. শংকর সরকার, নীহার রঞ্জন দে, হরিদাস নমোদাস কোনো রকমে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন। হানাদার পাকবাহিনী চলে যাওয়ার পর নিহতদের ডা. শংকর সরকারের বাড়ির পেছনে দাহ করা হয়। [সন্তোষ সরকার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড