You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক সাইদুর রহমান - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক সাইদুর রহমান

সাইদুর রহমান, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫২) বীর মুক্তিযোদ্ধা, কাদের সিদ্দিকী, বীর উত্তমএর ঘনিষ্ঠ জন ও তাঁর নেতৃত্বাধীন বাহিনীর একজন গ্রুপ কমান্ডার। তিনি ১৯৫২ সালে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কামার্তী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সিরাজুর রহমান ও মাতার নাম বছিরন নেছা।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সাইদুর রহমান টাঙ্গাইল জেলার করটিয়া সা’দত কলেজে অধ্যয়নরত ছিলেন। ছাত্ররাজনীতিতে পূর্ব থেকেই তিনি জড়িত ছিলেন। ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-এর বিজয়, পাকিস্তানি সামরিক জান্তার নির্বাচনের রায় নস্যাৎ করতে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ, ৭১-এর অগ্নিঝরা মার্চের ঘটনাবলি, ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে শত্রুর মোকাবেলায় গণযুদ্ধের প্রস্তুতি ইত্যাদি তাঁকে গভীরভাবে আলোড়িত করে। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়লে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে টাঙ্গাইলে সাইদুর রহমান হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামে যুক্ত হন। টাঙ্গাইলের গণপ্রতিরোধ ভেঙ্গে পাকবাহিনী শহরের নিয়ন্ত্রণ নিলে কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে তিনি নতুন করে মুক্তিসেনাদের সংগঠিত করতে গ্রামাঞ্চলে চলে যান। ক্রমান্বয়ে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে এক বিশাল মুক্তিবাহিনী গড়ে ওঠে।
সাইদুর রহমান কালিহাতী সেতু, বল্লা, নাগরপুর পুলিশ স্টেশন, দেওপাড়া, ভূঞাপুর, বাথুলী, করটিয়া, মির্জাপুর, গোড়াই, এলাসিনসহ অত্র অঞ্চলে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বহু যুদ্ধে সাহসী ভূমিকা পালন করেন। এর মধ্যে কালিহাতী সেতুর যুদ্ধ, বল্লার যুদ্ধ ও নাগরপুর পুলিশ স্টেশনে শত্রুর ঘাঁটিতে আক্রমণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯শে মে পাকহানাদার বাহিনীর একটি কনভয় কালিহাতী সেতু অতিক্রমকালে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে একজন মেজরসহ প্রায় ৩০০ শত্রুসেনাকে হত্যা করেন। শত্রুদের ৫-৬টি গাড়ি ব্রিজের নিচে গভীর খাদে পড়ে যায় এবং তাতেও অনেক শত্রুসেনা নিহত হয়। এখানকার যুদ্ধে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং বেশ কয়েকজন আহত হন।
জুন মাসের ১২ তারিখ কালিহাতীর বল্লা বাজারের নিকটস্থ নদীর তীরে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এক যুদ্ধ হয়। এখানে কাদের সিদ্দিকীর পাশে থেকে সাইদুর রহমান অসীম সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। এ-যুদ্ধে বেশকিছু পাকসেনা হতাহত হয়। শোচনীয় পরাজয় মেনে নিয়ে হানাদাররা কালিহাতীর দিকে সরে যায়। বল্লার যুদ্ধের পর ঐ এলাকার জনগণের মনে আস্থা ও সাহস বৃদ্ধি পায়। নাগরপুর পুলিশ স্টেশনে পাকহানাদার বাহিনীর একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। কাদের সিদ্দিকী এ ঘাঁটি আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী সাইদুর রহমানসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে ৩০শে নভেম্বর ঘাঁটিতে আক্রমণ চালান। দেড়দিন যুদ্ধ চলার পরও ঘাঁটির পতন ঘটানো সম্ভব হয়নি। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চাদপসরণ করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার সাইদুর রহমান-কে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। তিনি ২ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম শাহীনা পারভীন। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড