You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক সাইদুল আলম - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক সাইদুল আলম

সাইদুল আলম, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫২) নায়েক, যশোর প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী, ৮নং সেক্টর ও ‘জেড’ ফোর্সের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫২ সালের ২০শে মার্চ বরিশাল জেলার সদর উপজেলার চরকরমজি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. ইসরাইল বিশ্বাস ও মাতার নাম লাল বানু বিবি। ৫ ভাই এবং ২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। স্থানীয় হাইস্কুলে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করে ১৯৬৯ সালের ২০শে মার্চ তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।
সাইদুল আলম মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে যশোর ক্যান্টমেন্টে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। ১ম ইস্ট বেঙ্গলের অধিকাংশ সেনা তখন ছুটি ও প্রশিক্ষণকালীন মহড়ায় সেনানিবাসের বাইরে অবস্থান করছিলেন। তবে সাইদুল আলম কর্মস্থলেই ছিলেন। আকস্মিকভাবে সেখানে বালুচ রেজিমেন্টের সেনারা অপ্রস্তুত বাঙালি সেনাদের আক্রমণ করে হত্যা করতে থাকে। এমতাবস্থায় বাঙালি সেনারা ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিনের নেতৃত্বে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। সেনানিবাস ত্যাগ করে তাঁরা যশোরের নাভারন, বেনাপোল, ইটাগাছা, ঝিকরগাছা, লোহাগড়া ইত্যাদি স্থানে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। এরপর প্রথমে মেজর আবু ওসমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ৮ নম্বর সেক্টর এবং পরে মেজর জিয়ার নেতৃত্বাধীনে ‘জেড’ ফোর্স গঠিত হলে তিনি ১ম ইস্ট বেঙ্গলের অধীনে যুদ্ধ করেন। তাঁর ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক মেজর জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে তিনি সিলেটের জকিগঞ্জ, আটগ্রাম, সিলেট এম সি কলেজ ইত্যাদি স্থানে হানাদারদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সাইদুল আলম ছিলেন ভারী মেশিনগানার। সিলেটের গৌরীপুরের যুদ্ধে তিনি অসীম সাহসিকতার সঙ্গে মেশিনগান চালিয়ে শত্রুপক্ষকে পলায়নে বাধ্য করেন। ১৪ই ডিসেম্বর সিলেটের এম সি কলেজে অবস্থানরত পাকসেনাদের ঘাঁটি আক্রমণে তিনি বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নায়েক সাইদুল আলমকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চাকরিতে বহাল হন এবং ১৯৭৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম সেলিমা আলম। তিনি ১ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। বর্তমানে তিনি ঢাকার সাভারে বসবাস করছেন। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড