শুভখিলা রেলব্রিজ বধ্যভূমি (নান্দাইল, ময়মনসিংহ)
শুভখিলা রেলব্রিজ বধ্যভূমি (নান্দাইল, ময়মনসিংহ) ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার মুশুল্লী ইউনিয়নে অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়।
নান্দাইল উপজেলার নরসুন্দা নদীর কোল ঘেঁষা একটি গ্রাম শুভখিলা। এ গ্রামের ভেতর দিয়ে গেছে ভৈরব-ময়মনসিংহ রেললাইন। শুভখিলা গ্রামের প্রায় শেষ প্রান্তে নরসুন্দা নদীর ওপর রয়েছে একটি রেলসেতু। সেতুটি এলাকাবাসীর কাছে কালিগঞ্জ সেতু বা শুভখিলা রেলব্রিজ নামে পরিচিত। এ সেতুর ওপর মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে পাকবাহিনীর গতিরোধ করার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা এ ব্রিজ ধ্বংস করে দেন। এ সংবাদ পেয়ে কিশোরগঞ্জের পাকসেনারা ক্ষুব্ধ হয়ে শুভখিলা ব্রিজে হাজার- হাজার লোককে হত্যা করে। নিহতদের মরদেহ তারা নদীতে ফেলে দেয়। পাকবাহিনী ও তাদের দোসরা ২২শে এপ্রিলের পর পর্যায়ক্রমে জামালপুর ময়মনসিংহ, ঈশ্বরগঞ্জ, সোহাগী, আঠারবাড়ি, নান্দাইল, ভৈরব কুলিয়ারচর, বাজিতপুর, সরাররচর, মানিকখালী, গচিহাটা, কিশোরগঞ্জ, নীলগঞ্জ ইত্যাদি স্থান থেকে নিরীহ মানুষদের ধরে এখানে এনে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। তারা পুরুষ-নারী-শিশুদের সেতু সংলগ্ন তাবুতে রেখে নির্মম নির্যাতন করত। নান্দাইল উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের খামারগাঁও গ্রামের স্কুল শিক্ষক হীরেন্দ্র চন্দ্র মজুমদার, পল্লি চিকিৎসক খগেন্দ্র চন্দ্ৰ মজুমদার ও ভূপেন্দ্র চন্দ্র মজুমদার এ তিন ভাইকে এলাকার রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদাররা এখানে নৃশংসভাবে হত্যা করে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রেনে নিরীহ লোকদের এখানে এনে হত্যা করে লাশ ব্রিজের নিচে নদীতে ফেলে দেয়া হতো। শুভখিলা ব্রিজ বধ্যভূমিতে অসংখ্য মানুষ হত্যাযজ্ঞের শিকার হন। [শফিকুল ইসলাম কাদির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড