You dont have javascript enabled! Please enable it! শিমুলপাড়া বিহারি কলোনি যমঘর (নারায়ণগঞ্জ সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

শিমুলপাড়া বিহারি কলোনি যমঘর (নারায়ণগঞ্জ সদর)

শিমুলপাড়া বিহারি কলোনি যমঘর (নারায়ণগঞ্জ সদর) একটি বধ্যভূমি। আদমজীনগর জুট মিলসের ভেতরে এর অবস্থান। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী, রাজাকার ও বিহারিরা এ কলোনিকে একটি বধ্যভূমি বা যমঘরে পরিণত করে এবং এখানে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে।
সিদ্ধিরগঞ্জে অনুপ্রবেশের পর পাকবাহিনী আদমজীনগর জুট মিলসে একটি বড় ক্যাম্প স্থাপন করে। এ ক্যাম্পের বাংকারগুলো ছিল উঁচু এবং দোতলা। শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর দিয়ে স্টিমার, লঞ্চ ও নৌকায় যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষের ওপর পাকসেনারা এসব বাংকার থেকে আক্রমণ চালাত। প্রতিদিন হাজার- হাজার যুবক ও শ্রমিককে ধরে এনে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা নির্যাতন করত।
অনেককে শিমুলপাড়া বিহারি কলোনির যমঘরে নিয়ে রাজাকাররা ধারালো ছুরি দিয়ে জবাই করত। মুসলিম লীগ-এর বাদশা মেম্বারসহ বিহারি যুবকরা ছিল নির্মম নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা। পাকসেনা ও রাজাকাররা সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি, গোদনাইল, চিটাগাং রোড, ডেমরা ও নারায়ণগঞ্জ সড়কে যানবাহন থামিয়ে বাঙালি যুবকদের ধরে আনত। এরপর শিমুলপাড়া বিহারি কলোনির যমঘরে রাজাকারদের হাতে তুলে দিত। এখানে রাজাকাররা ধারালো অস্ত্র ও ইলেকট্রিক শক দিয়ে ধৃতদের হত্যা করত। এরপর যমঘর সংলগ্ন পুকুরে লাশগুলো ফেলে দিত। কোনো-কোনো সময় যমঘরের পার্শবর্তী ডোবার পচা জল নিষ্কাশনের পাম্পের মুখে মৃতদেহ নিক্ষেপ করত। জল নিষ্কাশনের সময় লাশগুলো পাইপের ভেতর দিয়ে শিমুলপাড়ার খালে গিয়ে পড়ত। অনেক সময় রাজাকাররা যমঘর লাগোয়া পাঁচিলের ওপাশে লাশ ছুঁড়ে ফেলত। রাজাকার ও বিহারিরা ১৬ই ডিসেম্বরের পূর্ব পর্যন্ত শিমুলপাড়া যমঘরে অসংখ্য নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। [রীতা ভৌমিক]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড