মুক্তিযুদ্ধে শিবচর উপজেলা (মাদারীপুর)
শিবচর উপজেলা (মাদারীপুর) একটি ঐতিহাসিক স্থান। এ উপজেলার শামাইল গ্রামে ইসলাম ধর্ম সংস্কারক ও বিখ্যাত কৃষক আন্দোলনের নেতা হাজি শরীয়তুল্লাহ (১৭৮১- ১৮৪০) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুত্র দুদু মিয়া (১৮১৯- ১৯৬২) এ অঞ্চলে ফরায়েজি প্রভাবিত পঞ্চায়েত প্রথা প্রবর্তন করেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শিবচরের মানুষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আত্মীয়তার সূত্রে ও রাজনৈতিক কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাধিকবার শিবচর থানার দত্তপাড়া গ্রাম ও অন্যান্য জায়গায় আসেন। তাঁর আগমনের ফলে এলাকার ছাত্র-যুবক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আওয়ামী লীগ-এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় এবং বাঙালির স্বাধিকার ও সার্বিক মুক্তির আন্দোলনের পক্ষে ইতিবাচক সাড়া পড়ে।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে শিবচর থানার ছাত্র-জনতা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে শিবচর থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বিপুল ভোটে এমপিএ নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় যোগ দিতে শিবচর থেকে বিপুলসংখ্যক লোক ঢাকায় যায়। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণে দেয়া নির্দেশ অনুযায়ী শিবচর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. আব্দুল লতিফ খান (টিপু ডাক্তার)-এর নেতৃত্বে শিবচর থানা সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন- ইয়াছিন খান (শিবচর পৌরসভা), মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী তারা মিয়া, চৌধুরী মেজবাহ উদ্দিন (চান মিয়া), শিশু মিয়া, এ কে ফজলুল হক মিয়া, সেলিম মোল্লা, ডা. পুষ্প ধর, ডা. মাহতাব মল্লিক, সিরাজ মোল্লা, এসহাক মাতবর, কফিল গাজী (শিরোয়াইল ইউনিয়ন), দলিল উদ্দিন ফকির (বন্দরখোলা ইউনিয়ন), রফিউদ্দিন মাতবর, মনছার আলী, জয়নাল আবেদীন হাওলাদার (বহেরাতলা ইউনিয়ন), ডা. আব্দুর রাজ্জাক, দেরাজ উদ্দিন শিকদার (বাঁশকান্দি ইউনিয়ন), আব্দুল মজিদ সরকার, ছামাদ খান (চরজানাবাত ইউনিয়ন), আবুল হোসেন হাওলাদার (কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়ন), আবুবকর শিকদার (কুতুবপুর ইউনিয়ন), নূর মহম্মদ চোকদার, আব্দুল মজিদ বেপারী, আকসার মাতবর (কাদিরপুর ইউনিয়ন), লুৎফর রহমান খান, আব্দুল মজিদ শিকদার (ভদ্রাসন ইউনিয়ন) প্রমুখ। শিবচর থানার সকল ইউনিয়নেও সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়।
২৬শে মার্চের পর শিবচর বরহমগঞ্জ কলেজ ও নন্দকুমার হাইস্কুলের ছাত্রদের অংশগ্রহণে বি এন সি ক্লাবের মাঠে বাঁশের লাঠি নিয়ে পিটি প্যারেড শুরু হয়। ছুটিতে বাড়িতে আসা পাকিস্তান নৌবাহিনীর সৈনিক মোসলেম উদ্দিন খান এখানে প্রধান প্রশিক্ষক ছিলেন। আনসার সদস্য শের আলী হাওলাদারও কিছুদিন প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন (এই শের আলী পরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে চাকরিতে যোগদান করে। এক ফরমান বলে আনসার বাহিনীকে রাজাকার বাহিনীতে রূপান্তরিত করা হলে রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে নিহত হয়)। শিবচরে প্রথম দিকে ৩৫-৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্য থেকে মোসলেম উদ্দিন খানের নেতৃত্বে ২০ জনের একটি দল ১৬ই এপ্রিল ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মাদারীপুর যায়। এই ২০ জনের দলে ছিলেন— মোসলেম উদ্দিন খান, শাহজাহান মোল্লা, সামসুদ্দিন খান, রেজাউল করিম তালুকদার, খবির উদ্দিন তালুকদার, রেজাউল করিম তারা গোমস্তা, তাছাদ্দেক হোসেন তোতা, আবদুস সালাম খান, আলমগীর গোমস্তা, মো. সেলিম মিয়া, আমির হাসেম খান, শাহনেওয়াজ তোতা, আমির হোসেন খান, সুধীর কুমার চক্রবর্তী, ওসমান হাসেম খান, জসিম উদ্দিন শিকদার, আবুবকর সিদ্দিক খান, হাবিবুর রহমান দাদন, ইউসুফ চৌধুরী, মো. ফিরোজ মিয়া ও বাদশা গোমস্তা। খলিল তালুকদার, সালাম মোল্লা, আবদুল মান্নান খান ও আমির হোসেন হাওলাদার বি এন সি ক্লাব মাঠে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
মাদারীপুর নাজিমউদ্দিন কলেজ মাঠে ক্যাপ্টেন (পরবর্তীকালে কর্নেল) শওকত আলী কর্তৃক বাছাইকৃত ১৬৪ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য ১৭ই এপ্রিল স্টুয়ার্ড মুজিবের তত্ত্বাবধানে লঞ্চযোগে ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ভারতে যাওয়া মাদারীপুরের এ প্রথম দলের মধ্যে শিবচর থানার ২০ জন মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন। তাঁরা ভারতের কাঠালিয়া ও অম্পিনগর ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শেষে ১০ই জুন শিবচরে
ফিরে আসেন। ইন্ডাকশন ক্যাম্প সোনামুড়াতে মোসলেম উদ্দিন খানকে মাদারীপুর মহকুমার ২নং এরিয়া কমান্ডার মো. শাহ্জাহান মোল্লাকে শিবচর থানা কমান্ডার এবং সামছুল আলম খানকে জাজিরা থানা কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। জুলাই মাসের শেষদিকে রেজা শাজাহানের নেতৃত্বে মুজিব বাহিনীর একটি দল এবং আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে মুক্তিবাহিনীর বেশ কয়েকটি সশস্ত্র দল শিবচরে প্রবেশ করে ক্যাম্প স্থাপন করে। অক্টোবর মাসের দিকে এ এইচ আ মান্নান খানের নেতৃত্বে মুজিব বাহিনীর একটি শক্তিশালী দল শিবচরে আসে। মুজিব বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন দল এভাবে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত শিবচরে এসে যুদ্ধে অংশ নেয়। মোশারফ হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে মুজিব বাহিনীর অপর একটি দলও শিবচর থানায় আসে।
শিবচরে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরা হলেন- ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী এমপিএ (মুজিব বাহিনীর কোষাধ্যক্ষ), আমির হোসেন খান (শিবচর পৌরসভা), ডা. আবদুল লতিফ খান (শিবচর পৌরসভা), ইয়াছিন খান (শিবচর পৌরসভা), মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী তারা মিয়া (দত্তপাড়া ইউনিয়ন), চৌধুরী মেজবাহ উদ্দিন চান মিয়া (দত্তপাড়া ইউনিয়ন), এ কে ফজলুল হক মিয়া (দত্তপাড়া ইউনিয়ন), শিশু মিয়া (দত্তপাড়া ইউনিয়ন), সেলিম মোল্লা (শিরোয়াইল ইউনিয়ন), ডা. পুষ্প ধর (শিরোয়াইল ইউনিয়ন), ডা. মাহতাব মল্লিক (শিরোয়াইল ইউনিয়ন), সিরাজ মোল্লা (শিরোয়াইল ইউনিয়ন), এসহাক মাতবর (শিরোয়াইল ইউনিয়ন), কফিল গাজী (শিরোয়াইল ইউনিয়ন), দলিল উদ্দিন ফকির (বন্দরখোলা ইউনিয়ন), রফিউদ্দিন মাতবর (বহেরাতলা ইউনিয়ন), মনছার আলী (বহেরাতলা ইউনিয়ন), জয়নাল আবেদীন হাওলাদার (বহেরাতলা ইউনিয়ন), ডা. আবদুর রাজ্জাক (বাঁশকান্দি ইউনিয়ন), দেরাজ উদ্দিন শিকদার (বাঁশকান্দি ইউনিয়ন), আব্দুল মজিদ সরকার (চরজানাজাত ইউনিয়ন), ছামাদ খান (চরজানাজাত ইউনিয়ন), আবুল হোসেন হাওলাদার (কাঠালবাড়ি ইউনিয়ন), আবুবকর শিকদার (কুতুবপুর ইউনিয়ন, নূর মহম্মদ চোকদার (কাদিরপুর ইউনিয়ন), আব্দুল মজিদ বেপারী (কাদিরপুর ইউনিয়ন), আকসার মাতবর (কাদিরপুর ইউনিয়ন), লুৎফর রহমান খান (ভদ্রাসন ইউনিয়ন), আব্দুল মজিদ শিকদার (ভদ্রাসন ইউনিয়ন), আমির হোসেন (ভান্ডারীকান্দি ইউনিয়ন), চুন্নু ঢালী (ভান্ডারীকান্দি ইউনিয়ন), হাজী চেরাগ আলী মাতবর (ভান্ডারীকান্দি ইউনিয়ন), আদেল উদ্দিন মোল্লা (উমেদপুর ইউনিয়ন) ও ওয়াজউদ্দিন ফকির (উমেদপুর ইউনিয়ন)।
শিবচর থানার মুক্তিবাহিনী ও মুজিব বাহিনীর কমান্ডাররা হলেন- মোসলেম উদ্দিন খান (২নং এরিয়া কমান্ডার, মুক্তিবাহিনী), মো. শাহজাহান মোল্লা (শিবচর থানা কমান্ডার, মুক্তিবাহিনী), এ এইচ আব্দুল মান্নান খান (শিবচর থানা কমান্ডার, মুজিব বাহিনী), সামসুদ্দিন খান (জাজিরা থানা কমান্ডার, মুক্তিবাহিনী), রেজাউল করিম তালুকদার (ইউনিট কমান্ডার, মুক্তিবাহিনী), রেজাউল করিম তারা (ইউনিট কমান্ডার, মুক্তিবাহিনী), মোশারফ হোসেন চৌধুরী (দত্তপাড়া আঞ্চলিক কমান্ডার, মুজিব বাহিনী), মো. শাহজাহান চৌধুরী (ইউনিট কমান্ডার, মুজিব বাহিনী), হোসেন কামাল (ইউনিট কমান্ডার, মুজিব বাহিনী), লতিফ মাতবর (ইউনিট কমান্ডার, মুক্তিবাহিনী), বাবুল শিকদার (ইউনিট কমান্ডার, মুক্তিবাহিনী), মো. কামরুজ্জামান (ইউনিট কমান্ডার, মুক্তিবাহিনী), রেজা শাজাহান (ইউনিট কমান্ডার, মুজিব বাহিনী) ও চান মিয়া মাতবর (ইউনিট কমান্ডার, মুজিব বাহিনী)।
১৭ই মে সোমবার সকালবেলা মাদারীপুর এ আর হাওলাদার জুটমিলস-এর সেনা ক্যাম্প থেকে তিনটি লঞ্চ বোঝাই পাকিস্তানি সেনা এসে শিবচর থানা আক্রমণ করে। চরশামাইল ও গুয়াতলা গ্রামে তারা গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই মাদারীপুরে ফিরে যায়। দ্বিতীয়বার আগস্ট মাসের মধ্যভাগে শিবচর থানায় এসে ৩-৪ দিন অবস্থান করে। তাদের অবস্থানকালে শিবচর বাজারে কার্ফু জারি করে রাখে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শিবচর থানায় স্থায়ীভাবে কোনো ক্যাম্প স্থাপন করেনি।
মাদারীপুর মহকুমা সদরে রাজাকার বাহিনী গঠনের পর শিবচর থানায়ও রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। শিবচর থানার আনসার বাহিনীর সদস্যরা রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলে। আনসার বাহিনীর সদস্য ছাড়া নতুন রিক্রুট করা রাজাকারদের মাদারীপুর সদরের আনসার ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো।
মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পীর মোহসেন উদ্দিন দুদু মিয়ার নেতৃত্বে ১৮-সদস্য বিশিষ্ট শিবচর থানা শান্তি কমিটি গঠিত হয়। কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিল- আব্দুর রসিদ মল্লিক, আবুল কাসেম মোল্লা, হুমায়ুন আহমেদ মোল্লা, লালমিয়া গোমস্তা, আব্দুল মান্নান মোড়ল, আব্দুল ওয়াহেদ কাজী, জসিম উদ্দিন শিকদার, মধু মোড়ল, মনু মোল্লা প্রমুখ। এরা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতায় পাকবাহিনীকে সর্বাত্মক সহায়তা করে।
১৭ই মে সকালে মাদারীপুর সেনা ক্যাম্প থেকে পাকিস্তানি হানাদাররা শিবচরে আসে। তারা রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে উত্রাইল লঞ্চঘাটে নামে। তারপর চরশামাইল গ্রামের কয়েকটি হিন্দু বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এরপর তারা এ গ্রামের কয়েকজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। এ ঘটনা চরশামাইল গণহত্যা নামে পরিচিত।
একইদিন পাকসেনার চরশামাইল গ্রাম থেকে গুয়াতলা গ্রামে ঢোকে। এ গ্রামে তারা ৩৮ জন নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। গুয়াতলা গণহত্যা মাদারীপুর জেলায় পাকবাহিনীর নৃশংসতার এক বড় নিদর্শন।
গুয়াতলা গ্রাম থেকে পাকবাহিনী ১৪ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে হাত-পা বেঁধে পার্শ্ববর্তী উত্রাইল নদীতে ফেলে দেয়। এখানে একজন ছাড়া বাকিদের সলিল সমাধি ঘটে। এ নিষ্ঠুর ঘটনা উত্রাইল গণহত্যা নামে পরিচিত।
পাকবাহিনী দ্বিতীয়বার শিবচরে আসে আগস্ট মাসে। এ- সময় তারা শিবচর বাজারের কয়েকটি স্বর্ণের দোকান লুণ্ঠন করে কয়েক মণ স্বর্ণ নিয়ে যায়।
শিবচর থানার গুয়াতলা গ্রামে গুয়াতলা গণকবর রয়েছে। ১৭ই মে গুয়াতলা গ্রামে যারা গণহত্যার শিকার হন তাদের এখানে কবর দেয়া হয়। উৎরাইল নদীর যে জায়গায় ১৩ জন গ্রামবাসীকে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়েছিল সেটি নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে।
২৪শে নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা শিবচর থানা আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্ব দেন শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম তালুকদার। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে গুলিবর্ষণ শুরু হলে থানায় অবস্থানকারী রাজাকাররা শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের দুঃসাহসী আক্রমণের কাছে তারা পরাস্ত হয়। শিবচর থানা যুদ্ধ-এ ১৪ জন রাজারাকার নিহত হয়। অপরপক্ষে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
২৪শে নভেম্বর শিবচর থানা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ের মধ্য দিয়ে ২৫শে নভেম্বর এ এলাকা সম্পূর্ণভাবে হানাদারমুক্ত হয়।
উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হলেন- ওয়াজেদ আলী মিয়া, বীর প্রতীক (পিতা তাহের উদ্দিন মাতব্বর, মোল্লাকান্দি) শিবচরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন— শেখ খোরশেদ আলম (পিতা আমজাদ আলী খালাসী, সরকারেরচর, বহেরাতলা, শিবচর, সৈনিক), আজিজ চৌধুরী (পিতা আমিন উদ্দিন চৌধুরী, চরদত্তপাড়া), মোতাহার হোসেন হাওলাদার (পিতা মৌ. মোসলেম উদ্দিন, রাজারচর, মৌলবীকান্দি, বন্দরখোলা), আব্দুস সালাম মিয়া (পিতা হাফেজ আব্দুল হক, চরশামাইল, শিরোয়াইল), মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়া (পিতা আজিম উদ্দিন মাতব্বর, খাড়াকান্দি, আর্য দত্তপাড়া), আব্দুল খালেক মুন্সি (পিতা আ. কাদির মুন্সি, কাদিরপুর), গোলাম মোস্তফা (পিতা আব্দুল গনি মাতব্বর, কেশবপুর, কুতুবপুর), এ কে এম রেজাউল করিম ফিরোজ (পিতা মোতাহার উদ্দিন খান, খানকান্দি, বরহামগঞ্জ), আব্দুল মালেক মাতবর (পিতা হালিম মাতবর, বাখরেরকান্দি) এবং আব্বাস মোড়ল (পিতা হাফিজ উদ্দিন মোড়ল, গুয়াতলা, বরহামগঞ্জ, সৈনিক)।
মুক্তিযুদ্ধ স্মরণে শিবচরে ‘স্বাধীনতা’ চত্বর, ‘৭১ চত্বর’, ‘প্রবহমান ৭১’, ‘বিজয় চত্বর’, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরীর নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজ। এ কলেজের প্রবেশদ্বারে বঙ্গবন্ধু এবং ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী এমপিএ- এর প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়েছে। [বেনজীর আহম্মদ টিপু]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড