You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.24 | শিবচর থানা যুদ্ধ (শিবচর, মাদারীপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

শিবচর থানা যুদ্ধ (শিবচর, মাদারীপুর)

শিবচর থানা যুদ্ধ (শিবচর, মাদারীপুর) সংঘটিত হয় ২৪শে নভেম্বর। এদিন শিবচর থানার দখল নেয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা গভীর রাতে আক্রমণ করেন। রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুললে দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ১৪ জন রাজাকার নিহত হয়। এখানে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ২৫শে নভেম্বর শিবচর থানা হানাদারমুক্ত হয়।
নভেম্বর মাসে একাধিক মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে অস্ত্রসহ শিবচরে ফিরে এলে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এ-সময় সকল মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ মিলে শিবচর থানা দখল করার পরিকল্পনা করে। ২৪শে নভেম্বর রাতে শিবচর থানা দখলের যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম তালুকদার। থানা কমান্ডার মো. শাহজাহান মোল্লা তখন আরো গোলাবারুদ আনার উদ্দেশ্যে ভারতে ছিলেন বলে রেজাউল করিম তালুকদার ভারপ্রাপ্ত থানা কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন।
রাত পৌনে ৩টায় মুক্তিযোদ্ধারা থানায় আক্রমণ করেন। কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে চতুর্দিক থেকে থানা ঘেরাও করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন লতিফ মাতবর, বাবুল শিকদার, মুজিব বাহিনীর প্রধান চান মিয়া মাতবর প্রমুখ।
২৪শে নভেম্বর রাত ৩টায় মুক্তিযোদ্ধারা ফায়ার ওপেন করেন। কমান্ডার রেজাউল করিমের নেতৃত্বে একটি গ্রুপের দায়িত্ব ছিল থানার উত্তর দিকে বাসাবাড়ি এলাকায়। সেখানে একটি দোতলা বাড়িতে কিছু রাজাকার থাকত। তাদের পাশ কাটিয়ে থানার দিকে অগ্রসর হওয়ার উপায় ছিল না। আক্রান্ত হওয়ার পর তারা শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধারা পেছন দিক থেকে বাড়ির মধ্যে গ্রেনেড চার্জ করলে ১৪ জন রাজাকার নিহত হয়। তাদের পরিণতি দেখে থানায় অবস্থানরত পুলিশ ও অন্য রাজাকাররা রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায়। কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার হাকিম খাঁ শিবচর থানা থেকে পালিয়ে মাদারীপুর শহরে গেলে সেখানে সে নিহত হয়। বাছেত ভূঁইয়া নামে শিবচর থানায় তখন এক পুলিশ ছিল। সে ছিল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচুর ক্ষতি সাধন করে। এলাকার সাধারণ মানুষদের নানাভাবে অত্যাচার করে। থানা দখলের যুদ্ধে সে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে নিহত হয়। তার বাড়ি ছিল মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানায়।
শিবচর থানা দখলের যুদ্ধে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাঁরা হলেন- সদরপুর থানা কমান্ডার মোশারফ হোসেন, ভাঙ্গা থানার কমান্ডার দেলোয়ার হোসেন এবং দত্তপাড়ার আবদুল আজিজ ও দেলোয়ার হোসেন। শিবচরে তাঁদের দাফন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা নেছার উদ্দিন তালুকদার (ঘটকচর, মাদারীপুর সদর থানা) আহত হন। [ বেনজীর আহম্মদ টিপু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড