শাহবাজপুর যুদ্ধ (বড়লেখা, মৌলভীবাজার)
শাহবাজপুর যুদ্ধ (বড়লেখা, মৌলভীবাজার) সংঘটিত হয় ১০ই আগস্ট। এ-যুদ্ধে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
শাহবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে কয়েকশ গজ দূরে অবস্থিত ইপিআর ক্যাম্পটিকে পাকসেনারা তাদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করত। ক্যাম্পের পূর্বপাশে অন্য একটি টিলার ওপর তাদের মর্টার পোস্ট ছিল। এ ক্যাম্পে ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের এক কোম্পানি সৈন্য, এক প্লাটুন স্কাউট এবং কিছু রাজাকার থাকত।
শাহবাজপুর ক্যাম্প গুঁড়িয়ে মুক্তাঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং অগ্রবর্তী ক্যাম্প স্থাপনের পরিকল্পনা থেকে ১০ই আগস্ট বারোপুঞ্জি সাব-সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা শাহবাজপুর অপারেশন শুরু করেন। সাব-সেক্টর কমান্ডার আব্দুর রবের নেতৃত্বে ৫ কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা এ অপারেশনে অংশ নেন। ঐদিন ভোরে অপারেশন শুরু হয় ৷ দুই ঘণ্টা যুদ্ধ শেষে শাহবাজপুর রেলস্টেশনসহ বিরাট এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। এরপর তাঁরা পাকবাহিনীর ক্যাম্পের দিকে অগ্রসর হন।
সকাল ৭টায় পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর প্রচণ্ড পাল্টা- আক্রমণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ করে তারা বিরামহীনভাবে আর্টিলারির গোলাবর্ষণ করতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা-আক্রমণ করলে তীব্র যুদ্ধ হয়। এ অপারেশনে যে ৫টি কোম্পানি অংশগ্রহণ করে তাদের একটিকে নিয়োজিত করা হয়েছিল শাহবাজপুর-বড়লেখা সড়কের নান্দুয়া গ্রামের পার্শ্ববর্তী একটি সেতু বিধ্বস্ত করে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং সড়কের পাশে মাইনফিল্ড তৈরি করা। উদ্দেশ্য, শত্রুরা যাতে ক্রলিং করে যাওয়ার পথে মাইনফিল্ডে আক্রান্ত হয়।
সেতুর ওপর রাজাকারদের পাহারা ছিল। তাদের অজ্ঞাতে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গ্রুপ সেতুর নিচে প্রবেশ করে। তাঁরা তাড়াহুড়ো করে বিস্ফোরক স্থাপন করতে গেলে অসাবধানতাবশত বিস্ফোরণ ঘটে। এতে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস শহীদ চৌধুরী খুশীর দুটি হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মাইন বিস্ফোরিত হওয়ার শব্দে পাকবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে আসে। ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের পুরো কোম্পানি আক্রান্ত হয়। অবশেষে তাঁরা পাকবাহিনীর মুখোমুখি দাঁড়াবার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। তাই ডিফেন্স ছেড়ে দেন। পাকবাহিনীর একটি বিরাট দল ইতোমধ্যে বড়লেখা থেকে প্রচণ্ড গুলিবর্ষণ করে শাহবাজপুরের দিকে অগ্রসর হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের দল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। দখলকৃত এলাকা টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত তাঁদের পিছু হটতে হয়। মুক্তিযোদ্ধারা শাহবাজপুর দখলে রাখতে না পারলেও পাকসেনাদের ফেলে যাওয়া প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ তাঁদের হস্তগত হয়। এ- যুদ্ধে ইপিআর হাবিলদার ও কৃতী ফুটবলার কুতুবউদ্দিন, নায়েক আব্দুল মান্নান, নায়েক মুজাহিদ আলী, মোহাম্মদ ফয়েজ মিয়া ও সিগন্যালম্যান মোস্তফা কামাল শহীদ হন। [মোস্তফা সেলিম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড