You dont have javascript enabled! Please enable it! স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা দল শাহ্ আলম গ্রুপ (পটিয়া, চট্টগ্রাম) - সংগ্রামের নোটবুক

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা দল শাহ্ আলম গ্রুপ (পটিয়া, চট্টগ্রাম)

শাহ্ আলম গ্রুপ (পটিয়া, চট্টগ্রাম) বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম (কচুয়াই, পটিয়া; বামপন্থী সংগঠক)-এর নামে গঠিত একটি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা দল। এ দল চট্টগ্রামের পটিয়া ও বোয়ালখালী এলাকার মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শাহ্ আলম গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের আসাম রাজ্যের তেজপুরে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সেখানে ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য একটি ক্যাম্প খোলা হয়েছিল। শাহ্ আলম গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারা এ ক্যাম্পের দ্বিতীয় ব্যাচে প্রশিক্ষণ নিয়ে করিমগঞ্জে আসেন। সেখান থেকে তেলিয়ামুড়ার হল্টিং স্টেশন, বাইকোরার ট্রানজিট ক্যাম্প ও ফেনী হয়ে রামগড়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। ভারতীয় সীমান্তে তাঁদের বিদায় দেন কমরেড পূর্ণেন্দু কানুনগো, কমরেড আবদুস সাত্তার ও ক্যাপ্টেন দাশ। মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশে ঢুকে বিভিন্ন পথ অতিক্রম করে রাঙ্গুনিয়ার বেতাগি গ্রামে আসেন। তাঁদের পথপ্রদর্শক ছিলেন রাউজানের কাগতিয়া গ্রামের কল্যাণ চৌধুরী (বড়ুয়া)। মুক্তিযোদ্ধারা বেতাগি থেকে বোয়ালখালী ও পটিয়ায় এসে ক্যাম্প স্থাপন করেন। এ গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- কমান্ডার শাহ্ আলম, ডেপুটি কমান্ডার উদয়ন নাগ (সারোয়াতলী, বোয়ালখালী), মিয়া মোহাম্মদ জাফর (বাকলিয়া), ভূপাল দাশগুপ্ত (আনোয়ারা), সুজিত বড়ুয়া (তেকোটা, পটিয়া), শামসুজ্জামান হীরা (খলিসাদহ, পাবনা), আনোয়ার হোসেন (রাঙ্গুনিয়া), ফজল আহমদ (তেকোটা, পটিয়া), শেখর দস্তিদার (ধলঘাট, পটিয়া), দেওয়ান মোহাম্মদ আলী (ফরিদপুর), আবুল কাসেম (মিরসরাই), সুশীল চক্রবর্তী (পশ্চিম শাকপুরা), প্রিয়তোষ চৌধুরী (ঠেগরপুনি, পটিয়া), পুলক কুমার দাশ (রতনপুর, পটিয়া), মোয়াজ্জম হোসেন (খুলনা), মোহাম্মদ ইউসুফ (মরিয়মনগর, রাঙ্গুনিয়া), মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (দক্ষিণ রাউজান), মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (মিরসরাই), তপন দস্তিদার প্রমুখ। উল্লেখ্য, বোয়ালখালী ও পটিয়ায় ক্যাম্প স্থাপনের পর স্থানীয় আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধা এ গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হন।
শাহ্ আলম গ্রুপ বোয়ালখালী ও পটিয়া অঞ্চলে একক ও যৌথভাবে অনেক অপারেশন পরিচালনা করে। এক্ষেত্রে পটিয়া ইন্দ্রপুল অপারেশন, ধলঘাট রেললাইন অপারেশন, গৈড়লার টেক অপারেশন, উত্তর ভূর্ষি অপারেশন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ইন্দ্রপুল অপারেশন সংঘটিত হয় ১৯শে নভেম্বর। শাহ্ আলম গ্রুপ, শাহজাহান ইসলামাবাদী গ্রুপ, ১১৭ নম্বর আবদুল গফুর গ্রুপ, ১১২ নম্বর এ কে এম সামছুল আলম গ্রুপ এবং মহসিন খান গ্রুপ যৌথভাবে এ অপারেশন পরিচালনা করে। অপারেশন পরিচালনার আগে ১৭ ও ১৮ই নভেম্বর রেকি করা হয়। ১৯শে নভেম্বর গ্রুপগুলোর মুক্তিযোদ্ধারা ইন্দ্রপুল ব্রিজ ধ্বংস করেন। ধলঘাট রেললাইন অপারেশন সংঘটিত হয় ৭ই ডিসেম্বর। কমান্ডার শাহ্ আলমের নেতৃত্বে তাঁর গ্রুপ ও সুনীল চক্রবর্তীর নেতৃত্বাধীন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা যৌথভাবে ধলঘাট ইউনিয়নের অন্তর্গত ধলঘাট রেলস্টেশনে এ অপারেশন পরিচালনা করেন। ধলঘাট স্টেশনের আশপাশের অনেক লোকও এতে অংশ নেয়। বস্তুত এসব লোকের অংশগ্রহণ ব্যতীত এ অপারেশন সফল করা সম্ভব ছিল না। অপারেশনের দিন মুক্তিযোদ্ধারা ধলঘাট রেলস্টেশনে পৌঁছে দুদলে বিভক্ত হয়ে বেঙ্গুরা সায়রাপুলের নিকট একদল এবং কৃষ্ণাখালী রেলসেতুর দক্ষিণে অপর দল পজিশন নিয়ে কৃষ্ণাখালী রেলসেতুর দক্ষিণে রেললাইনে প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ বসান। এরপর ধলঘাট স্টেশনের স্টোর রুমের দরজা ভেঙ্গে রেললাইনের সরঞ্জামাদি বের করা হয়। এসবের সাহায্যে মুক্তিযোদ্ধারা প্রায় আধা কিলোমিটার রেললাইন উপড়ে ফেলেন। এ কাজে তাঁদের সহযোগিতা করে স্থানীয় লোকজন। তাদের প্রত্যেকের হাতে কোদাল ও টুকরি ছিল। রেললাইনের স্থানে-স্থানে মাটি কেটে জমির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়। যখন রেললাইন উপড়ানোর কাজ চলছিল, তখন বেঙ্গুরা স্টেশনে রাজাকার কমান্ডার শাহ্জাহান ও তার দল তা টের পেয়ে বেঙ্গুরা স্টেশন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে গুলিবর্ষণ করে। মুক্তিযোদ্ধারাও রাজাকারদের উদ্দেশে গুলি ছুড়ে পাল্টা জবাব দেন। রেললাইন ওপড়ানোর কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে কৃষ্ণাখালী রেলসেতুর দক্ষিণে রেললাইনে যুক্ত করা প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ বিস্ফোরিত হয়। তখন রাজাকার কমান্ডার শাহ্জাহান ও তার দলের ফায়ার বন্ধ হয়ে যায়। [শামসুল আরেফীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড