ইপিআর সৈনিক ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক শামসুল হক
শামসুল হক, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫১) ইপিআর সৈনিক ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার চারগাছ ইউনিয়নের হাতুরাবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুর রাজ্জাক খান, মাতার নাম চন্দ্রা বানু। ৭ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।
শামসুল হক ইপিআর বাহিনীতে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে তিনি সিলেট হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত ছিলেন। চাকরিকালীন সময়ে তিনি পাকিস্তান সরকারের বাঙালিদের প্রতি বৈষম্যমূলক নীতি প্রত্যক্ষ করেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ওপর নৃশংস গণহত্যা শুরু করলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেয়ার পর তিনি ২ নম্বর সেক্টরের গঙ্গাসাগর সাব-সেক্টর এলাকায় কমান্ডার মেজর আইনউদ্দিনের অধীনে যুদ্ধ করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৫ কিমি উত্তরে চন্দ্রপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শক্ত ঘাঁটি স্থাপন করে। ১৮ই নভেম্বর মিত্রবাহিনীর একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মেজর আইনউদ্দিনের সঙ্গে পরামর্শ করে যৌথভাবে চন্দ্রপুর- লাতুয়ামুড়ায় আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। মুক্তিবাহিনী ও যৌথবাহিনী দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ২২শে নভেম্বর পাকিস্তানি হানাদার ক্যাম্প আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলে ছিলেন সিপাহি শামসুল হক। উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে হানাদার বাহিনী পিছু হটে এবং মুক্তিযোদ্ধারা চন্দ্রপুর দখল করেন। কিন্তু তাঁরা বেশিক্ষণ এ অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। কয়েক ঘণ্টা পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আরো শক্তি সঞ্চয় করে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ করে। হানাদার বাহিনীর ভারী অস্ত্রের মুখে মুক্তিযোদ্ধারা টিকতে পারেননি। যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর একজন মেজর (কোম্পানি কমান্ডার), ৩ জন জুনিয়র কমিশন অফিসারসহ ৪৫ জন এবং মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট খন্দকার আব্দুল আজিজসহ ২২-২৩ জন শহীদ হন। হানাদার বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করে। সিপাহি শামসুল হক চন্দ্রপুর-লাতুয়ামুড়া যুদ্ধে শহীদ হন। পরের দিন মুক্তিযোদ্ধারা মাত্র ৮ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহস ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার সিপাহি শামসুল হক-কে ‘বীর প্রতীক’ (মরণোত্তর) খেতাবে ভূষিত করে। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড