শলুয়া বাজার যুদ্ধ (ডুমুরিয়া, খুলনা)
শলুয়া বাজার যুদ্ধ (ডুমুরিয়া, খুলনা) সংঘটিত হয় ১৪ই ডিসেম্বর। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ-যুদ্ধ হয়। এতে ১৪ জন ভারতীয় সেনা শহীদ হন এবং পাকসেনারা পালিয়ে যায়।
ডুমুরিয়া উপজেলার রংপুর ইউনিয়নের একটি স্থান শলুয়া বাজার। বাজারটি দৌলতপুর থেকে চুকনগরগামী রাস্তার ওপরে অবস্থিত।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল যশোর ক্যান্টনমেন্ট। ৪ঠা ও ৫ই ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী যশোর ক্যান্টনমেন্টের তিনদিকে শক্তিশালী অবস্থান নেয়। মিত্রবাহিনী ক্যান্টনমেন্টের ওপর ব্যাপকভাবে কামানের গোলা নিক্ষেপ করে। এ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কোনোরকম প্রতিরোধ না করে খুলনা শহরে তাদের ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার্স স্থানান্তর করে। যশোর সেনানিবাসের সৈনিকদেরও খুলনায় স্থানান্তর করা হয়। ফলে খুলনায় পাকিস্তানি বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়।
ভারতীয় সীমান্ত থেকে খুলনা শহরে মিত্রবাহিনী প্রবেশের সম্ভাব্য সব পথে পাকিস্তানি বাহিনী অবস্থান নেয়। এ রকম একটি প্রবেশপথ ছিল শলুয়া বাজার সংলগ্ন দৌলতপুর অভিমুখী রাস্তা। এ রাস্তার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি বাহিনী বাংকার খনন করে। শলুয়া বাজারের পশ্চিম পাশে খালপাড়ের বাংকারে পাকিস্তানি গোলন্দাজ বাহিনীর একটি দলের অবস্থান ছিল। এ-সময় যশোর থেকে মিত্রবাহিনী সড়কপথে খুলনায় প্রবেশের চেষ্টা করলে শিরোমণি নামক স্থানে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে তাঁদের কয়েকদিনব্যাপী ট্যাংক যুদ্ধ হয়। ভারতীয় বিমানবাহিনীও এ-সময় পাকিস্তানি সেনা অবস্থানের ওপর বিমান হামলা করতে থাকে। শিরোমণিতে যখন মিত্রবাহিনী ব্যাপক যুদ্ধে লিপ্ত, তখন মিত্রবাহিনী পার্শ্ববর্তী অন্য কোনো পথে খুলনা শহরে প্রবেশের চেষ্টা করতে থাকে। এ অবস্থায় মিত্রবাহিনী শলুয়া বাজারের ওপর দিয়ে দৌলতপুর হয়ে খুলনা শহরে প্রবেশের চেষ্টা করে।
শলুয়া বাজারের পশ্চিমদিকে তখন একটি খাল ছিল। খালের ওপর একটি ব্রিজও ছিল, তবে তা ছিল হালকা যানবাহন চলাচলের উপযোগী। ১৪ই ডিসেম্বর সকাল দশটার দিকে দুটি ভারতীয় সাঁজোয়া যান শলুয়া বাজার সংলগ্ন খালের পশ্চিম তীরে এসে থামে। ব্রিজের ওপর দিয়ে ট্যাংক নিয়ে পার হওয়া যাবে কি-না মিত্রবাহিনী তা পরীক্ষা করার জন্য ট্যাংক থামিয়ে দেয়। তাঁরা ভ্রাম্যমাণ কোনো ব্রিজ তৈরি করে এ খাল পার হওয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু এ-সময় খালের পূর্ব তীরে অবস্থান নেয়া পাকিস্তানি সেনারা আকস্মিকভাবে ট্যাংক বিধ্বংসী কামানের গোলা নিক্ষেপ শুরু করে। এ গোলার আঘাতে ভারতীয় সাঁজোয়া যানদুটি ধ্বংস হয়ে যায় এবং ট্যাংক বহরের সঙ্গে থাকা ১৪ জন ভারতীয় সৈনিক প্রাণ হারান। ট্যাংক হানানোর কিছুক্ষণ পর শলুয়ায় পাকিস্তানি সেনা অবস্থানের ওপর মিত্রবাহিনী বিমান হামলা শুরু করে। এর ফলে ঐ দিনই পাকিস্তানি বাহিনী পশ্চাদপসরণ করে খুলনা শহরের দিকে পালিয়ে যায়। ফলে পুরো এলাকায় মিত্রবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। [দিব্যদ্যুতি সরকার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড