শতক প্রাথমিক বিদ্যালয় রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ (নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ)
শতক প্রাথমিক বিদ্যালয় রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ (নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ) পরিচালিত হয় ৫ই ডিসেম্বর। মুক্তিযোদ্ধাদের এ আক্রমণে অত্যাচারী রাজাকার কমান্ডার রাজা কাজী পালিয়ে গেলেও ক্যাম্পের বাকি রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করে এবং অনেক অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
নবীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব সীমান্ত বরাবর দিনারপুর পরগণা। এর অধিকাংশ জায়গা জুড়ে দিনারপুরের পাহাড়। মৌলভীবাজার জেলার কিছু অংশও এ পাহাড়ের অন্তর্ভুক্ত। পাহাড়ের পাদদেশে ছোট-বড় অনেকগুলো গ্রাম। ২৫শে মার্চের পর থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ পরগণায় কয়েকবার হামলা করে। তারা এখানে অসংখ্য মানুষ হত্যা এবং বহু নারীকে ধর্ষণ করে। লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি চলে সমগ্র পরগণা জুড়ে। এ অঞ্চলের কুখ্যাত রাজাকার রাজা কাজী এ এলাকায় রাজাকার বাহিনী গঠন, হানাদার বাহিনীর লুটপট ও বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনমূলক কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। সে এলাকার বহু নারীকে ধরে নিয়ে হবিগঞ্জে পাকবাহিনীর ক্যাম্পে উপঢৌকন হিসেবে দিয়েছে। নভেম্বর মাসে কাউফলা বাজারে ক্যাপ্টেন সাজ্জাদুর রহমানের নেতৃতে মুক্তিযোদ্ধারা একটি অপারেশন পরিচালনা করেন। এতে একজন রাজাকার ধরা পড়ে। এ ঘটনায় রাজা কাজী কিছুটা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে রাজাকারদের এনে শতক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জড়ো করে নিজের শক্তি বৃদ্ধি করে অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সমগ্র দিনারপুর পরগণাকে সে একটি কসাইখানায় পরিণত করে।
ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে কুলাউড়ার কৃষক ও কমিউনিস্ট নেতা সুশীল চন্দ্র দেবের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল দিনারপুর পৌঁছলে সেখানকার জনগণ তাঁদের স্বাগত জানিয়ে রাজা কাজীর অত্যাচার থেকে রক্ষার অনুরোধ জানায়। মুক্তিযোদ্ধারা রাজা কাজীর বাড়ি ঘেরাও করে। কিন্তু সুচতুর রাজা কাজী টের পেয়ে ঘরের পেছন দিক দিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর ৫ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারদের শতক প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্যাম্প আক্রমণ করেন। এখানে তখন ৫৭ জন রাজাকার অবস্থান করছিল। তাদের সঙ্গে ৩৪টি রাইফেলসহ অন্যান্য অস্ত্র ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত আক্রমণে রাজাকাররা কোনোরকম প্রতিরোধ করার সুযোগ পায়নি। এমতাবস্থায় তারা পালাবার কোনো পথ না পেয়ে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। স্কুলঘর থেকে বেরিয়ে হাতের অস্ত্র মাটিতে রেখে তারা একে-একে আত্মসমর্পণ করলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সবাইকে বন্দি করেন। সে-সময় রাজাকারদের কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ৩৪টি ৩০৩ রাইফেল ও অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র হস্তগত করেন। এ ঘটনার পর দিনারপুর এলাকার মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে আসে। স্থানীয় মানুষের মনোবল বৃদ্ধি পায়। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড