You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর উত্তম শফিক উদ্দিন চৌধুরী - সংগ্রামের নোটবুক

বীর উত্তম শফিক উদ্দিন চৌধুরী

শফিক উদ্দিন চৌধুরী, বীর উত্তম (১৯৪৫-১৯৭১) শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৫ সালে সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার রণকিনি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল করিম চৌধুরী এবং মাতার নাম কমলা বেগম। তিনি ১৯৬৩ সালে গোলাপগঞ্জ এম সি একাডেমিতে ৮ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)-এ যোগ দেন। তিনি ছিলেন এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম সোনারা বেগম।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে শফিক উদ্দিন চৌধুরী যশোর জেলার কালীগঞ্জে ইপিআর-এর ‘ই’ কোম্পানিতে নায়েক পদে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকাসহ দেশের বিভন্ন স্থানে ব্যাপক গণহত্যা ও নির্যাতন শুরু করলে তাঁর কমান্ডিং অফিসার মেজর আবু ওসমান চৌধুরীর নেতৃত্বে শফিক উদ্দিনসহ অন্যান্য ইপিআর সদস্যগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা কালীগঞ্জ ইপিআর ঘাঁটি ত্যাগ করে যশোর সেক্টরের অন্য তিনটি কোম্পানির সঙ্গে ঝিকরগাছায় এসে সমবেত হন। ৩১শে মার্চ শফিক উদ্দিন ও তাঁর সহযোদ্ধারা যশোর মুক্ত করার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১১ই এপ্রিল তিনি যশোর-বেনাপোল সড়কে অগ্রসরমাণ পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে এবং ২৩ ও ২৪শে এপ্রিল কাগজপুকুর ও বেনাপোল প্রতিরক্ষা যুদ্ধে অসাধারণ বীরত্ব ও সাহসিকতার পরিচয় দেন। পরবর্তীতে সেক্টর ভিত্তিক যুদ্ধ শুরু হলে শফিক উদ্দিন ৮ নম্বর সেক্টরের অধীন প্রথমে মেজর আবু ওসমান চৌধুরী ও পরে মেজর মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে বিভিন্ন যুদ্ধে সফলতার
সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য যে, শফিক উদ্দিন অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে একবার বিনাযুদ্ধে শুধু গেরিলা কৌশল অবলম্বন করে ৬টি এলএমজি ও প্রায় ১০০০ রাউন্ড গুলিসহ ৬ জন পাকিস্তানি সৈন্যকে বন্দি করতে সমর্থ হন।
১৯৭১ সালে বর্তমান সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলা সামরিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ছিল। এখানকার বালিয়াডাঙ্গায় মুক্তিবাহিনীর একটি প্রতিরক্ষা ঘাঁটি স্থাপন করা হয়। ১৬ই সেপ্টেম্বর তাঁদের অবস্থানের ওপর পাকিস্তানি বাহিনী আর্টিলারির সাহায্যে প্রচণ্ড আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাপ্টেন শফিক উল্লাহ, বীর প্রতীকএর নেতৃত্বে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। অসীম সাহস ও মনোবল নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুসেনাদের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালান। এক পর্যায়ে শত্রুসৈন্যদের ছোড়া আর্টিলারি গোলার আঘাতে শফিক উদ্দিন চৌধুরী শহীদ হন। এ-যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর অনেক সদস্য হতাহত হয়। সহযোদ্ধারা শফিক উদ্দিনকে ভারতীয় সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডের নিকট বাংলাদেশ ভূখণ্ডে সমাহিত করেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য শহীদ নায়েক শফিক উদ্দিন চৌধুরীকে বাংলাদেশ সরকার ‘বীর উত্তম’ (মরণোত্তর) খেতাবে ভূষিত করে। এছাড়াও এ বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিকে সংরক্ষণ করার জন্য তাঁর নামে নিজ গ্রামের একটি সড়কের নামকরণ করা হয়। [সাজাহান মিয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড