শমশেরনগর চা-বাগান অপারেশন (কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার)
শমশেরনগর চা-বাগান অপারেশন (কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার) পরিচালিত হয় ২রা ডিসেম্বর। এতে পাকসেনাদের অনেকে হতাহত হয়।
২৮শে মার্চ সংঘটিত শমশেরনগর প্রতিরোধযুদ্ধ-এ একজন ক্যাপ্টেন-সহ ১১ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হওয়ার পর পাকবাহিনী শমশেরনগর ডাকবাংলো, শমশেরনগর চা- বাগান বাংলো ও চাতলাপুর চা-বাগান বাংলোয় শক্তিশালী ক্যাম্প স্থাপন করে। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে ২রা ডিসেম্বর কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের কাছে মনু নদী অতিক্রম করে মুক্তিযোদ্ধারা শমশেরনগরের দিকে অগ্রসর হতে থাকলে প্রথমে চাতলাপুর চা- বাগানের ম্যানেজারের বাংলোয় অবস্থানরত পাকসেনাদের সঙ্গে তাঁদের যুদ্ধ হয়। ঘটনাস্থলের তিনদিকে ভারত সীমান্তঘেঁষা চা-বাগান ও পাহাড়ি এলাকা থাকায় পেছনে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তিশালী অবস্থান ছিল। এ-যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের অনেকে হতাহত হয়। এখান থেকে বেঁচে যাওয়া পাকবাহিনীর সদস্যরা পিছু হটে শমশেরনগরের কানিহাটি চা-বাগান বাংলো ও বাগানের প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্যাম্পে অবস্থান নেয়।
পাকবাহিনী ও রাজাকাররা শমশেরনগর চা-বাগানের জোড়া সেতু এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রযাত্রা প্রতিরোধের জন্য একটি ঘাঁটি স্থাপন করে। এখানে অগ্রসরমাণ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তাদের তীব্র গুলি বিনিময় হলে হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা পিছু হটে শমশেরনগর বাজার হয়ে মুন্সীবাজারের দিকে সরে যায়। এ-যুদ্ধে সেকেন্ড লে. ওয়াকিউজ্জমান, সৈয়দ মহসীন আলী (আওয়ামী লীগ নেতা ও পরে মন্ত্রী), আব্দুল মান্নান, আব্দুল বাছিত, ময়না মিয়া, আব্দুল হাই, নির্মল কুমার দাশ, ক্ষিতীশ চন্দ্র মল্লিক প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন।
এ অপারেশন থেকে সৈয়দ মহসীন আলী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশ হাজীপুর ও পতনউষার ইউনিয়ন হয়ে শমশেরনগর- মৌলভীবাজার সড়কের রাধানগর ও মরাজানের পার গ্রাম এলাকায় পাকবাহিনীর সঙ্গে এক খণ্ডযুদ্ধে লিপ্ত হয়। শমশেরনগর চা-বাগান অপারেশন শেষ করে ৩রা ডিসেম্বর শমশেরনগর মুক্ত করে শমশেরনগর-মৌলভীবাজার সড়কে মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের ধাওয়া দিলে তারা মৌলভীবাজারে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের আর একটি দল দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মুন্সীবাজারে অবস্থানরত পাকসেনারা মৌলভীবাজারে চলে যেতে বাধ্য হয়। [মুজিবুর রহমান রঞ্জু]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড