মুক্তিযুদ্ধে লৌহজং উপজেলা (মুন্সীগঞ্জ)
লৌহজং উপজেলা (মুন্সীগঞ্জ) রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী হওয়ায় লৌহজং উপজেলার জনগণ বরাবরই ছিল রাজনীতি সচেতন। প্রতিটি জাতীয় আন্দোলনে তারা সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও তার প্রতিফলন ঘটে। এ এলাকা থেকে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ থেকে বিপুল ভোটে জয়ী হন যথাক্রমে কফিল উদ্দিন চৌধুরী (যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রী) ও শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান থেকে জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ ২টি আসন বাদে বাকি ১৬৭টি (৭টি মহিলা আসনসহ) আসন লাভ করে। বাঙালি জাতির অবিসম্বাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হবে এটাই ছিল সকলের প্রত্যাশা। কিন্তু শুরু হয় ইয়াহিয়া-ভুট্টোর ষড়যন্ত্র। তারা বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা না দেয়ার ফন্দি আটতে থাকে। এর ফলে জনমনে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১লা মার্চ স্থগিত ঘোষণা করেন। এ ঘোষণা শুনে সারা দেশের মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ২রা মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলন-এর ডাক দেন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে জনগণ এ আন্দোলনে শরিক হয়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ২রা মার্চ ঢাকায় এবং ৩রা মার্চ সারাদেশে হরতাল পালিত হয়। লৌহজং-এর মানুষও এসব আন্দোলন ও হরতালে সর্বাত্মকভাবে অংশগ্রহণ করে। ২৫শে মার্চ পর্যন্ত একটানা অসহযোগ আন্দোলন চলে। এদিকে ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু ঢাকার রেসকোর্স ময়দান (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)-এ এক ঐতিহাসিক ভাষণ রাখেন। তাতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, মুক্তিযুদ্ধ অত্যাসন্ন। তিনি তাঁর ভাষণে সকলকে ‘যার যা আছে তাই নিয়ে’ প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে লৌহজং-এর মানুষও মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে।
বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ-এর পর মুন্সীগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নির্ধারণের জন্য আলোচনায় বসেন। মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার জন্য ১০ই মার্চ ডা. আবদুল কাদিরকে আহ্বায়ক করে মহকুমা সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। এর সদস্য ছিলেন এডভোকেট নূর মোহাম্মদ খন্দকার, হারুন-অর-রশিদ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা), আবুল কাশেম তারা মিয়া, মকবুল হোসেন মিজি, সুলতান মিয়া, কফিলউদ্দিন আহমেদ, আনোয়ার হোসেন অনু, আনিসুজ্জামান, খালেকুজ্জামান খোকা, শহিদুল আলম সাঈদ, মোহাম্মদ হোসেন বাবুল প্রমুখ। মহকুমা কমিটির উদ্যোগে সকল থানায়ও সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। লৌহজং থানায় এম কোরবান আলীকে প্রধান উপদেষ্টা এবং ডা. আমির হোসেন, ফকির আবদুল হামিদ, হারুন-উর-রশিদ খান, ঢালী মোয়াজ্জেম হোসেন, খন্দকার হেদায়েতুল ইসলাম কাজল, ইকবাল হোসেন, শহিদুল ইসলাম লাল, শামসুদ্দিন মোল্লাহ্, খলিল মাস্টার প্রমুখকে সদস্য করে সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য তিনটি বাহিনী সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে একটি সরকার স্বীকৃত এফএফ (ফ্রিডম ফাইটার) এবং অপর দুটি এমএফ- (মুক্তিফৌজ) ও মুজিব বাহিনী (বিএলএফ)। এফএফ বাহিনীর প্রধান ছিলেন ঢালী মোয়াজ্জেম হোসেন, মুক্তিফৌজের প্রধান ছিলেন হেদায়েতুল ইসলাম কাজল এবং মুজিব বাহিনীর প্রধান ছিলেন শহিদুল আলম সাঈদ (শ্রীনগর, লৌহজং ও সিরাজদিখান থানা)। এঁদের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ, পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কুমারভোগ নিবাসী অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক মো. বাবুল ভারতের চাকুলিয়া সিএন্ডসি স্পেশাল গ্রুপের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং জুন মাসে দেশে ফিরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
শিমুলিয়াচরে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল। সেখানে অনেকেই প্রশিক্ষণ নেন। সাবেক সেনাকর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। এছাড়া যে যার মতো দা, কুড়াল, বাঁশের লাঠি, বৈঠা, বল্লম, টেটা ইত্যাদি নিয়ে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অনেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য ভারতে যান। সেখানে প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
লৌহজং থানা ছাত্রলীগ-এর সভাপতি মো. খলিলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মো. ইউনুছ, জেলা ছাত্রলীগের নেতা গোফরান, ছাত্রনেতা আ. রশিদ আক্তার প্রমুখ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে কাজ করেন। তাঁরা পাড়ায়- পাড়ায় গিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে পাকিস্তানি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা কামাল, লৌহজং থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি ডা. হোসেন মোল্লা, সেক্রেটারি অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ, মাহবুবুল রহমান, ইরশাদ আলী মাস্টার, শাহজাহান মোড়ল, আবদুর রশিদ মোল্লা ও আ. শহীদ খান সেন্টু মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
স্বাধীনতার পক্ষের বিভিন্ন দল ও সংগঠন সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়ন-এর কর্মিগণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম ও সিরাজুল মনির। ন্যাপকমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে নেতৃত্ব প্রদান করেন কনকসার নিবাসী আ. রহমান মাস্টার। তাঁর তিন পুত্র মনোয়ার মাহবুব, নূহ-উল-আলম লেনিন এবং মনোয়ার রফিকও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এঁদের সঙ্গে সার্বক্ষণিকভাবে ছিলেন ঝাউটিয়া গ্রামের মো. শাহজাহান মিয়া। ন্যাপনেতা ক্যাপ্টেন হালিম চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ-সময় ভারতে থেকে যুদ্ধের সংগঠক হিসেবে গুরুদায়িত্ব পালন করেন কফিল উদ্দিন চৌধুরী এমএনএ, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন এমপিএ এবং জামাল উদ্দিন চৌধুরী।
লৌহজং উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডাররা হলেন- মো. সোলায়মান (যশলদিয়া; গোয়ালীমান্দ্রা; আগলা-গালিমপুর ও কমরগঞ্জ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন), আতিকুল্লাহ খান মাসুদ (মেদিনী মণ্ডল; গোয়ালীমান্দ্রা ও শ্রীনগর এলাকার যুদ্ধ পরিচালনা করেন), ঢালী মোয়াজ্জেম হোসেন (হলদিয়া; গোয়ালীমান্দ্রা, হলদিয়া ও শিমুলিয়া যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন), মিজানুর রহমান (ভরাকর; নিজ এলাকায় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলেন), হুমায়ুন কবির (করার বাগ; ২০-২৫ জন মুক্তিযোদ্ধার গ্রুপ লিডার ছিলেন; তাঁর সহ-কমান্ডার ছিলেন শাহ আলম), শাহজাহান মোড়ল (খড়িয়া; এঁর দলটি গোয়ালীমান্দ্রা ও এর আশেপাশে যুদ্ধ পরিচালনা করে) এবং সার্জেন্ট (অব.) ওমর আলী (আগলা-গালিমপুর যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন)। এছাড়া কয়েকজন সাবসেক্টর কমান্ডার ছিলেন। তাঁরা হলেন— উইং কমান্ডার হামিদুল্লা খান, মেজর জয়নাল আবেদীন, জামাল উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।
পাকবাহিনী জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে লৌহজং উপজেলায় প্রবেশ করে এবং থানার ডাকবাংলোয় ক্যাম্প স্থাপন করে। লৌহজং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও তাদের একটি ক্যাম্প ছিল।
পাকবাহিনী লৌহজং-এ প্রবেশ করার পর স্থানীয় মুসলিম লীগ নেতারা তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। তাদের মধ্যে রুস্তম আলী সিকদার (বড় নওপাড়া), সুলতান খলিফা (শিমুলিয়া), ফজলুল করিম ভূঁইয়া ওরফে সাচ্চা ভূঁইয়া (কলমা), খলিল শিকদার (ধাইধা; ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান), ইয়াছিন বেপারী (বেজগাঁও), ফকির সবদর আলী (কলমা), আনোয়ার হোসেন সিনহা (ডহরী), আলীমুল্লাহ্ ভূঁইয়া (নওপাড়া), পাঠান শফিক (নাগেরহাট), জালাল মুন্সী (খড়িয়া), শামসুদ্দিন আহমেদ (হাড়িদিয়া), আইউব আলী শেখ (ভোজগাঁও), দৌলত খান (দিঘলি), ডা. আবুল কাসেম গাজী (যশলদিয়া), আ. মজিদ বেপারী ( তেউটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান) প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। ফজলুল করিম ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক করে এখানে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়, যার সদস্য ছিল- ইয়াছিন মিয়া (দিঘলি), দৌলত খান, ডা. আবুল কাসেম গাজী, হাজী সায়েজ উদ্দিন বেপারী (কাহেতারা), মোহাম্মদ হোসেন, শামসুদ্দিন আহমেদ ও সুলতান খলিফা।
পাকবাহিনী লৌহজং-এ প্রবেশ করে শিমুলিয়া বাজারে নিরীহ বাঙালিদের ওপর অত্যাচার শুরু করলে আবেদ আলী নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বাধা দেন। পাকবাহিনী তাঁকে সেখানেই গুলি করে হত্যা করে। একই সময়ে লৌহজং-এর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গোপাল সাহাকেও হত্যা করে। অক্টোবর মাসের ২৬ তারিখ সংঘটিত গোয়ালীমান্দ্রার যুদ্ধ-এর পর পাকসেনারা গোয়ালীমান্দ্রা থেকে হলদিয়া পর্যন্ত খালের দু- পাশের সমস্ত বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়।
পাকবাহিনী প্রধানত লৌহজং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ক্যাম্পটি নির্যাতনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে। এখানে অগণিত নারী-পুরুষকে ধরে এনে নির্যাতন ও নারীদের ধর্ষণসহ তাদের ওপর নানারকম নৃশংস অত্যাচার চালায়।
লৌহজং উপজেলায় হানাদারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তিনটি উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ হয়— লৌহজং থানা যুদ্ধ, আগলা-গালিমপুর যুদ্ধ ও গোয়ালীমান্দ্রার যুদ্ধ। লৌহজং থানা যুদ্ধ হয় ১৪ই আগস্ট মুজিব বাহিনীর প্রধান শহিদুল আলম সাঈদের নেতৃত্বে। থানায় তখন ইপিআর, রাজাকার ও মিলিশিয়ারা ছিল। তাদের অনেকে হতাহত হয়, কয়েকজন আত্মসমর্পণ করে এবং অন্যরা পালিয়ে যায়। এ মাসেই মুক্তিযোদ্ধারা লৌহজং মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খলিল শিকদারকে হত্যা করলে লৌহজং, টঙ্গীবাড়ি ও সিরাজদিখান থানার শান্তি কমিটির সদস্যরা আত্মগোপনে চলে যায়। আগলা-গালিমপুর যুদ্ধ হয় সেপ্টেম্বরের শেষদিকে কমান্ডার সার্জেন্ট (অব.) ওমর আলীর নেতৃত্বে। এ-যুদ্ধে একজন ক্যাপ্টেনসহ কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। পাকবাহিনীর ক্যাপ্টেনের আইডি কার্ড সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধারা মুজিবনগর সরকারের কাছে জমা দেন। গোয়ালীমান্দ্রার যুদ্ধ সংঘটিত হয় ২৬শে অক্টোবর ঢালী মোয়াজ্জেম হোসেন, মো. সোলায়মান প্রমুখের নেতৃত্বে। প্রায় ২৮ ঘণ্টাব্যাপী এ-যুদ্ধে পাকবাহিনী পরাজিত হয় এবং ৩৫ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত ও ৬০ জন ধরা পড়ে। পরে তাদের হত্যা করে পদ্মা নদীতে ফেলে দেয়া হয়। এছাড়া সেপ্টেম্বরের শেষদিকে শিমুলিয়ায় একটি খণ্ডযুদ্ধ হয়।
১৩ই নভেম্বর রাতে পাকবাহিনী লৌহজং ছেড়ে চলে যায়। পরের দিন ১৪ই নভেম্বর সমগ্র এলাকায় মুজিব বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী উল্লাসে মেতে ওঠে। তাঁরা সকলে একত্রিত হয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে পুরো এলাকা প্রকম্পিত করে তোলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা হাতে জনগণ রাস্তায় বেরিয়ে আসে। এই বিজয় মিছিলে নেতৃত্ব দেন স্থানীয় কমান্ডারবৃন্দ। থানায় মুক্তিযুদ্ধের স্থায়ী ক্যাম্প নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ইউনিয়নেও এই ক্যাম্পের কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে। বিবন্দি বাজারের মিশু মল্লিকের বাড়িতেও একটি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়, যা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে একটি মিনি ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে পরিচিত পায়। এছাড়া শিবচরের সাতগাঁও করলিচরে মুক্তিযোদ্ধাদের হেডকোয়ার্টার্স স্থাপন করা হয়। সেখান থেকে লৌহজং এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হতো। ১৪ই নভেম্বর লৌহজং-এ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং মুক্তিযোদ্ধারা প্রশাসনিক কার্যক্রম নিজেদের দখলে নিয়ে নেন। আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট নূর মোহাম্মদ খন্দকার বেসামরিক প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর অধীনে প্রতিটি ইউনিয়নে স্থানীয় প্রশাসক নিয়োগ করা হয়।
উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- এম হামিদুল্লাহ খান, বীর প্রতীক (পিতা দবিরুদ্দিন খান, মেদেনীমণ্ডল), মোহাম্মদ মতিউর রহমান, বীর প্রতীক (পিতা আবদুল আলী শেখ, সাতঘরিয়া)।
সরকারি গেজেট অনুযায়ী লৌহজং উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা ৩৯১ জন। তাঁদের মধ্যে শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- আবেদ আলী (শিমুলিয়া), জয়নাল (কলমা), মফিজ (কলমা), সিরাজুম মুনীর এবং বাদল (কুমারভোগ), মনু মিয়া (পিতা শেখ ইয়াকুব আলী), মনিরুল হক মিন্টু (পিতা শাহাদাৎ হোসেন), মিনহাজ উদ্দিন ভূঁইয়া (পিতা আইনদ্দিন ভূঁইয়া), মোবারক হোসেন (পিতা মো. কবির উদ্দিন ঢালী, হলদিয়া), সিরাজুল ইসলাম (পিতা সাহেদ আলী), আ. লতিফ শেখ (পিতা একিন আলী শেখ, মেদিনী মণ্ডল), মোয়াজ্জেম হোসেন (পিতা মীরবক্স মিয়া), এম এ সালাম (পিতা আ. রহমান), নায়েক রিসালাত ইমতিয়াজ উদ্দিন (পিতা ইয়াকুব আলী) এবং ক্যাপ্টেন আ. হামিদ খান (পিতা আ. জব্বার খান)।
লৌহজং উপজেলার গোয়ালীমান্দ্রায় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে একটি বিজয়স্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। এছাড়া শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল ও মফিজের নামে কলমা গ্রামে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে এবং মফিজ- জয়নাল নামে একটি স্মৃতিসংসদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। [মুহাম্মদ জমির হোসেন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড