বীর প্রতীক শওকত আলী
শওকত আলী, বীর প্রতীক (১৯৫৫-২০২০) মুক্তিযুদ্ধকালে কোম্পানি কমান্ডার, একজন অকুতোভয় সৈনিক এবং পরবর্তীতে মেজর। তিনি ১৯৫৫ সালে নওগাঁ জেলার অন্তর্গত রাণীনগর উপজেলার খাট্টেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতার নাম শিরিন আরা বেগম এবং পিতার নাম এম. আশরাফ আলী।
শওকত আলী মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২য় বর্ষ অনার্সের ছাত্র ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ শুনে পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পেরে তিনি ঢাকা থেকে পিতার কর্মস্থল চট্টগ্রামে চলে যান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সমবয়সী বন্ধুদের নিয়ে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। শওকত আলী কালুরঘাট যুদ্ধে অংশ নিয়ে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। এরপর মীর শওকতের নেতৃত্বে খাগড়াছড়ি, মহালছড়ি ও বুড়িরঘাটে ক্যাম্প স্থাপন করে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যান। মহালছড়ির যুদ্ধে তিনি সাহসিকতার পরিচয় দেন। রামগড়ে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর ভয়াবহ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং শত্রুপক্ষের ট্যাংক ও বিমান হামলায় পিছু হটে তাঁর বাহিনীর সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরায় চলে যান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শওকত আলী বাংলাদেশ প্রথম ওয়ার কোর্সে মনোনীত হয়ে কমিশনপ্রাপ্ত হন। কমিশন লাভের পর ১ নম্বর সেক্টরের মনুঘাট সাব-সেক্টরে কোম্পানি কমান্ডারের দায়িত্ব পান। পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে ফটিকছড়ির যুদ্ধে তাঁর বাহিনী ব্যাপক সফলতা লাভ করে। এ-যুদ্ধে বহু পাকসেনা হতাহত হয়। হোঁয়াকো ও নাজিরহাট এলাকায়ও তাঁর বাহিনী বীরত্বের পরিচয় দেয়। এ-যুদ্ধে পাকবাহিনীকে হটিয়ে দিয়ে তাঁরা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখায় বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত হন। তিনি ১ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম নাসিমা বেগম। তিনি ২০২০ সালের ৪ঠা জুলাই চট্টগ্রাম সিএমএইচ-এ মৃত্যুবরণ করেন। [হারুন রশীদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড