You dont have javascript enabled! Please enable it! লালার হাটখোলা যুদ্ধ (মতলব দক্ষিণ, চাঁদপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

লালার হাটখোলা যুদ্ধ (মতলব দক্ষিণ, চাঁদপুর)

লালার হাটখোলা যুদ্ধ (মতলব দক্ষিণ, চাঁদপুর) সংঘটিত হয় নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে। এতে ২৬ জন পাকসেনা নিহত ও অনেকে আহত হয়। এছাড়া মতলবের কুখ্যাত রাজাকার সুলতান (বারোঠালিয়া) নিহত হয়।
লালার হাটখোলা মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদর থেকে ২ কিমি পূর্ব দিকে মতলব-নারায়ণপুর সড়কের পাশে অবস্থিত। নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে এখানে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। হানাদার বাহিনী ও স্থানীয় রাজাকাররা থানা আওয়ামী লীগ এর নেতা, সংগ্রাম কমিটির সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক আমিনের বাড়ি ও নওগাঁও আড়ং বাজারে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। লুণ্ঠিত মালামাল রাজাকারদের মাধ্যমে নৌকায় করে মতলব-লালার হাটখোলা-ভাঙ্গারপাড় খাল দিয়ে তাদের ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়। পাকবাহিনী ও রাজাকার বাহিনীর প্রায় অর্ধ শতাধিক সদস্য সড়ক পথে সামরিক কায়দায় সারিবদ্ধভাবে বিজয়ীর বেশে নওগাঁও থেকে মতলবের দিকে আসতে থাকে। নওগাঁও গ্রাম ও আড়ং বাজারে তাদের আক্রমণের খবর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছলে হানাদার বাহিনীকে মোকাবেলা করতে তাঁরা একত্রিত হতে থাকেন। তাঁরা বাবুরপাড়া- ভাঙ্গারপাড়-পৈলপাড়া এই তিন দিক থেকে পাকিস্তানি বাহিনীকে আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নেন। আক্রমণের আগে মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এলাকার সাধারণ জনগণকে নিরাপদে সরিয়ে দেন। হানাদার বাহিনীর দলটি মতলব-লালার হাটখোলা সড়কের পাশে কবরস্থানের কাছাকাছি আসা মাত্র মুক্তিযোদ্ধারা তাদের তিনদিক থেকে অতর্কিতে আক্রমণ করেন। অতর্কিত আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে। টিকতে না পেরে তাদের কিছু সংখ্যক সদস্য সড়কের দক্ষিণ দিকে পানিতে এবং অবশিষ্টরা উত্তর দিকের খালের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তাদের অধিকাংশই নিহত হয়। রাতের বেলা মতলব হাইস্কুল ক্যাম্প থেকে পাকিস্তানি সৈন্যরা এসে পলায়নরত তাদের জীবিত সৈন্যদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। মতলব থানার দারোগা নজরুল ইসলাম এ-যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষে অংশগ্রহণ করে।
মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে সুবেদার জহিরুল হকের টু-আই-সি বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেলিম হাওলাদার (বরুড়া), সিরাজ বকাউল (পৈলপাড়া), এনামুল হক (পৈলপাড়া), সাইদুর রহমান রতন (বহরী), জয়নাল আবেদীন প্ৰধান (শোভনকর্দি) প্রমুখ এ-যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। সিরাজ বকাউল একটি এলএমজি দিয়ে প্রথমে আক্রমণ করেন। যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর ২৬ জন সৈন্য নিহত এবং অনেকে আহত হয়। তাছাড়া মতলবের কুখ্যাত সুলতান রাজাকার (বারোঠালিয়া) এ-যুদ্ধে নিহত হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর অনেক আধুনিক অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। [তৌহিদুল আলম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড