রামসোনা-লাউয়ারী-তালুকদানা গণহত্যা (ফুলপুর, ময়মনসিংহ)
রামসোনা-লাউয়ারী-তালুকদানা গণহত্যা (ফুলপুর, ময়মনসিংহ) সংঘটিত হয় ৪ঠা অক্টোবর। এদিন পাকসেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সংঘটিত রামসোনা-লাউয়ারী-তালুকদানা যুদ্ধ-এর পর পাকিস্তানি সেনারা এ ৩টি গ্রামে হানা দিয়ে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে।
রামসোনা, লাউয়ারী ও তালুকদানা গ্রাম তিনটি ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানার ছনধরা ইউনিয়নের অন্তর্গত। ফুলপুর উপজেলা সদর থেকে রামসোনা, লাউয়ারী ও তালুকদানার দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। ছনধরা থেকে ধারা বাজার, হালুয়াঘাট হয়ে ভারতে যাওয়ার একটি সহজ ও নিরাপদ পথ ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় এদিক দিয়ে প্রতিদিন শতশত মানুষ মালিঝি নদী পার হয়ে ভারতে যেত। স্থানীয় রাজাকার ও দালাল আবুল হোসেন চেয়ারম্যানের মাধ্যমে এ খবর পেয়ে পাকিস্তানি সেনারা এখানে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ৪ঠা অক্টোবর ভোরে মালিঝি নদী পার হওয়ার সময় হানাদার পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। ফলে এখানে দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে ২৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ২শ থেকে আড়াইশ পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার নিহত হয়। যুদ্ধের সময় ও যুদ্ধের পরে পাকিস্তানিদের আক্রমণে রামসোনা ও লাউয়ারী গ্রামের ৪-৫ শত সাধারণ মানুষ শহীদ হন। ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা সেদিন পাকিস্তানিদের হাতে আটক হন। অমানবিক নির্যাতন শেষে তাঁদের হত্যা করা হয়।
তালুকদানা গ্রামে সেদিন ৭৯ জন নিরীহ মানুষ পাকিস্তানিদের আক্রমণে নিহত হন। মালিঝি নদীর ঘাট থেকে তালুকদানা পর্যন্ত স্থানে প্রায় ২শ নারী ও পুরুষের লাশ পড়ে ছিল। নিহত অনেকের লাশ নদীতে ভেসে যায়। লাউয়ারী গ্রামের মফিজ উদ্দিনের স্ত্রী সালেহা খাতুন ও গফুরের মা-সহ বেশ কয়েকজন নারীকে পাকিস্তানি সেনারা ধর্ষণ করে। রামসোনা-লাউয়ারী-তালুকদানা গণহত্যায় নিহতদের মধ্যে মাত্র কয়েকজনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- আব্দুল জব্বার, আব্দুস শহীদ, জয়নাল আবেদীন, সাইন উদ্দিন, আব্দুল কুদ্দুস, আজিম উদ্দিন ওরফে বাসা, গালিম শেখ, ইন্নাছ আলী, নবী হোসেন, হামেদ আলী, আমছর আলী, হুরমত আলী, চরণ আলী মির্জা, সাহেদ আলী, সৈয়দ আলী, মিরাজ আলী, গোলাপ শেখ, মফিজ উদ্দিন, সিরাজ আলী, লাল মামুদ, বুইদ্যা শেখ, মালিম উদ্দিন ও আকবর আলী। [আলী আহাম্মদ খান আইয়োব]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড