You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.09 | রামনগর যুদ্ধ (রায়পুরা, নরসিংদী) - সংগ্রামের নোটবুক

রামনগর যুদ্ধ (রায়পুরা, নরসিংদী)

রামনগর যুদ্ধ (রায়পুরা, নরসিংদী) সংঘটিত হয় ৯ই ও ১১ই ডিসেম্বর। এতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর ৫৭ ব্রিগেডের বেশকিছু সৈন্য হতাহত হন। ৯ই ডিসেম্বর রাতে পাকসেনাদের দুটি কোম্পানি রামনগর গ্রামের উত্তর দিকে নতুন বাজার সংলগ্ন স্থানে অবস্থান নেয়। আবুল কাশেম ভূঁইয়ার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গ্রুপ একই গ্রামের দক্ষিণে রেল লাইনে অবস্থান করছিল। পাকবাহিনীর আসার খবর তাঁরা সকাল ৮টা পর্যন্ত জানতে পারেননি। পাকবাহিনী যখন ফায়ারিং শুরু করে দক্ষিণে রেল লাইনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, তখন মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা ফায়ারিং শুরু করেন। কিন্তু পাকবাহিনীর মর্টার ও মেশিনগানের সম্মুখে তাঁরা বেশিক্ষণ টিকতে না পেরে রেল লাইন ছেড়ে আরো পশ্চিমে দৌলতকান্দি হাইস্কুল ও বেলতলীতে অবস্থান নেন। এ সুযোগে পাকবাহিনী রেল লাইন ধরে অগ্রসর হয়ে রামনগর গ্রাম ও রেল লাইনে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা তখন নদীপথে গৌরীপুর, স্থলপথে তুলাতলি ও দৌলতকান্দি রেল লাইন এবং দৌলতকান্দি এম বি হাইস্কুলে অবস্থান করছিলেন। ১০ই ডিসেম্বর বেলা ১টার মধ্যে ভারতীয় মাউন্টেইন ডিভিশনের কর্নেল দুর্বাজের নেতৃত্বে একটি ব্যাটালিয়ন দৌলতকান্দি রেল স্টেশনে অবস্থান নেয়। এ কারণে পাকবাহিনী পশ্চিম দিকে আর অগ্রসর হতে পারেনি।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হক ও কাশেম ভূঁইয়া মিত্রবাহিনীর কর্নেল কোয়েলি ও ফ্লাইট লে. দীপকের সঙ্গে আলোচনা করে ভারতীয় বাহিনীকে তুলাতুলি, কাকন নদীর পাড়ে মহিউদ্দিন ভূঁইয়া হাইস্কুল ও নওয়াজ আলীর বাড়ি পর্যন্ত অবস্থান নিতে সাহায্য করেন, যাতে রামনগর গ্রাম ও রেল লাইনে অবস্থানরত পাকবাহিনী এদিকে অগ্রসর হতে না পারে।
বিকেলে মিত্রবাহিনী ও পাকবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। ১১ই ডিসেম্বর রাতে পাকবাহিনীর নতুন এক ব্যাটালিয়ন সৈন্য ভৈরব থেকে এসে রামনগর গ্রামের পশ্চিম পাড়ে কাকন নদীর পাড়ে অবস্থান নেয়। এছাড়া রামনগর গ্রামের রেল লাইন ও বাঙ্কারেও কিছু সৈন্য অবস্থান নেয়। এ-সময় পাকবাহিনীর ভারী অস্ত্রের গোলাবর্ষণের ফলে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারতীয় ৫৭ ব্রিগেডের বেশকিছু সৈন্য হতাহত হন। কর্নেল দুর্বাজ, ফ্লাইট লে. দীপক এবং কাশেম ভূঁইয়া রেল লাইনের পাশে ব্রিজের নিচে শেল্টার নিয়ে রক্ষা পান। পাকিস্তানি বাহিনীর শেলের আঘাতে জনৈক নওয়াজ আলীর স্ত্রীর মৃত্যু হয়। সকালে ঘাগটিয়া গ্রামে ভারতীয় বাহিনীর ৭-৮ জন সৈন্যের মৃতদেহের সৎকার করা হয়। [মুহম্মদ ইমাম উদ্দিন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড