You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.11 | রামজীবনপুর যুদ্ধ (শ্যামনগর, সাতক্ষীরা) - সংগ্রামের নোটবুক

রামজীবনপুর যুদ্ধ (শ্যামনগর, সাতক্ষীরা)

রামজীবনপুর যুদ্ধ (শ্যামনগর, সাতক্ষীরা) সংঘটিত হয় ১১ই আগস্ট এস এম মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে। সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলায় রাজাকারদের সঙ্গে সংঘটিত মুক্তিযোদ্ধাদের এ-যুদ্ধে দুর্ধর্ষ রাজাকার মাওলানা আব্দুস সাত্তার নিহত হয়।
স্থানীয় নৈকাঠী ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা পূর্বেই জানতে পেরেছিলেন যে, ১১ই আগস্ট রাজাকার কমান্ডাররা শ্যামনগর থানায় মিটিং করবে এবং নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে। এ খবর জানার পর মুক্তিযোদ্ধারা ঐ মিটিং বানচাল করার সিদ্ধান্ত নেন এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী কমান্ডার এস এম মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ১০-১২ জন মুক্তিযোদ্ধা ঘটনার দিন সন্ধ্যাবেলা শ্যামনগর থানার উদ্দেশে যাত্রা করেন। অপারেশনের জন্য কমান্ডার মিজানুর রহমান চারজন চৌকস মুক্তিযোদ্ধা বাছাই করেন, যাঁরা সুইসাইড স্কোয়াডে যেতে প্রস্তুত। তাঁদের প্রত্যেকের হাতে ছিল এসএলআর ও অন্যান্য গোলাবারুদ। অন্যদের হাতে ছিল রাইফেল। কমান্ডারের নির্দেশ ছিল যে-করেই হোক রাজাকারদের আক্রমণ করতে হবে। প্রয়োজন হলে তাদের সভাস্থলে গিয়ে ভবনের ভেতরে গ্রেনেড ছুড়তে হবে। অপারেশনের আগে মুক্তিযোদ্ধারা অন্ধকারের উপযোগী কালো রঙের প্যান্ট ও গেঞ্জি পরিধান করেন। বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য সকলে একখানা করে গামছাও সঙ্গে নেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের দলে ছিলেন গাজী মিজানুর রহমান, ডি এম ইব্রাহিম খলিল, এম এ মজিদ, এন্তাজ, হাবিল প্রমুখ। তাঁরা প্রবল বৃষ্টির মধ্যে যাত্রা শুরু করেন এবং গ্রামের কর্দমাক্ত পথ দিয়ে অনেক কষ্টে নূরনগরে গিয়ে পৌঁছান। সেখানে গিয়ে তাঁরা বার্তাবাহক মারফত জানতে পারেন যে, – শ্যামনগরের নকীপুর হাটে পাকসেনা এসেছে। তৎক্ষণাৎ তাঁরা বার্তবাহককে সঙ্গে নিয়ে উক্ত হাটের উদ্দেশে যাত্রা করেন। পথিমধ্যে রামজীবনপুরে পৌঁছানোর পর বিপরীত দিক থেকে একদল লোক আসার শব্দ পেয়ে তাঁরা দ্রুত রাস্তার দুপাশের ঢালুতে পজিশন নেন। দলটি কাছাকাছি আসতেই তাঁরা ‘হল্ট, হ্যান্ডস আপ’ বলে কমান্ড করেন। তারা ছিল রাজাকার এবং সঙ্গে-সঙ্গে ঐ রাজাকাররা গুলিবর্ষণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা সামনে ভেবে তারা রাস্তা বরাবর সোজাসুজি গুলি করে। তাই তাদের সব গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এদিকে মুক্তিযোদ্ধারাও গুলি করেন। তাঁদের গুলিতে এলাকার ত্রাস ও তিন থানার রাজাকার কমান্ডার মওলানা আব্দুস সাত্তার নিহত হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়। তাদের দলে আরো ছিল গাজী রহমান, সিদ্দিকী, ফজলু প্রমুখ ডাকসাইটে রাজাকার। তাদের পথপ্রদর্শক ছিল সোরাপ রাজাকার।
রাজাকাররা পালিয়ে যাওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা নিহত আব্দুস সাত্তারের পকেট থেকে একটি কাগজ উদ্ধার করেন। তাতে হত্যার উদ্দেশ্যে প্রায় ২০০ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম ও পোড়ানোর উদ্দেশ্যে ত্রিশটি বাড়ির ঠিকানা লেখা ছিল। তালিকার ১নং-এ ছিল মুক্তিযোদ্ধা করিমের নাম। রামজীবনপুর যুদ্ধের দুদিন পূর্বে মওলানা সাত্তারের নির্দেশে রাজাকার ইব্রাহিম মোল্লা তাঁকে হত্যা করে। পরে মুক্তিযোদ্ধারা ইব্রাহিম মোল্লাকে হত্যা করে এর প্রতিশোধ নেন। সাত্তার মওলানাকে হত্যার কারণে রাজাকাররা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং পরবর্তীকালে তারা বেশ কয়েকজন নিরীহ লোককে হত্যা করে।
রামজীবনপুর যুদ্ধ ঐ সময় গণমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র- মুক্তিযোদ্ধাদের এ বিজয়ের কথা একাধিকবার গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করে। [মিজানুর রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড