রাধুটিলা গণহত্যা (বিয়ানীবাজার, সিলেট)
রাধুটিলা গণহত্যা (বিয়ানীবাজার, সিলেট) সংঘটিত হয় ২৪শে জুলাই। এতে ১৪ জন নারী-পুরুষ ও শিশু-বৃদ্ধ নিহত হয়।
২৩শে জুলাই দেশের ভেতরের সংবাদ সংগ্রহ করতে মুক্তিযোদ্ধাদের একজন কুরিয়ার বিয়ানীবাজার আসেন। তাঁর নাম গোলাম মোস্তফা। আশ্রয় গ্রহণ করেন বিয়ানীবাজার থানা সদরের অদূরে সুপাতলা গ্রামে। এ গ্রামের মনোরঞ্জন ঘোষ তাঁকে অত্যন্ত গোপনে নিজ বাড়িতে রাখেন। কিন্তু পাকহানাদার বাহিনীর দালালদের মাধ্যমে এ সংবাদ গণ্ডলের মজলিশে শুরায় পৌঁছে যায়। সঙ্গে-সঙ্গে একদল সৈন্য মনোরঞ্জনের বাড়িতে এসে হাজির হয়। সঙ্গে অসংখ্য রাজাকার। ততক্ষণে গোলাম মোস্তফা তথ্য সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন করে গ্রাম ছেড়ে চলে যান। কিন্তু মনোরঞ্জন ঘোষের পরিবার পাক হায়েনাদের আক্রমণের শিকার হয়। বন্দি করা হয় তার পরিবারের সকল সদস্যকে। তাদের মধ্যে ছিলেন- মনোরঞ্জন ঘোষ, তার স্ত্রী হিরণ বালা ঘোষ, তার কন্যা অমিতা রাণী ঘোষ (চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী), দেড় বছরের শিশুপুত্র মলয় ঘোষ, চারু বালা ঘোষ, নিখিল রঞ্জন ঘোষ, হীরেন্দ্র কুমার ঘোষ, ক্ষেত্রময়ী ঘোষ, মুকুল ঘোষ, সীতা রাণী ঘোষ, উমানন্দ ঘোষ, মহানন্দ ঘোষ, কৃষ্ণ চন্দ্র ঘোষ ও নরেশ চন্দ্র ঘোষ। তাদের সবাইকে ক্যাম্পে আটকে রেখে রাতব্যাপী অমানুষিক নির্যাতন চলে। ২৪শে জুলাই তাদের সবাইকে একত্রে নির্যাতন করতে-করতে নিয়ে যাওয়া হয় বিয়ানীবাজারের রাধুর টিলায়। বিয়ানীবাজার-সিলেট সড়কের পাশ ঘেঁষে অবস্থিত এ টিলার ওপর নিয়ে সবাইকে এক সারিতে দাঁড় করায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তাদের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল সশস্ত্র পাকসেনা। তারা ফায়ার করার সঙ্গে-সঙ্গে লুটিয়ে পড়ে ঘোষ পরিবারের স্ত্রী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধসহ ১৪টি তাজা প্রাণ। এ গণহত্যার স্থানেই তাদের গণকবর দেয়া হয়। পরবর্তীকালে রাধুটিলার নামকরণ করা হয় শহীদ টিলা। এ নিমর্ম গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে টিলার ওপর স্থাপিত হয়েছে “বিয়ানীবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিসৌধ’।
মনোরঞ্জন ঘোষের পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর তাদের বাড়ি প্রথমে লুটপাট এবং পরে অগ্নিসংযোগ করে ভস্মীভূত করা হয়। এ গ্রামের মিছির আলীকেও পাকসেনারা ধরে নিয়ে হত্যা করে। বিয়ানীবাজার উপজেলা কমপ্লেক্সে অবস্থিত কাঁঠালতলা বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। [জগন্নাথ বড়ুয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড