রসুলপুর গণহত্যা (গফরগাঁও, ময়মনসিংহ)
রসুলপুর গণহত্যা (গফরগাঁও, ময়মনসিংহ) ১লা জুন সংঘটিত হয়। হানাদার বাহিনী এতে ৬ জন মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে।
রসুলপুর গ্রামে নিশিবাবুর বিশাল বাড়িতে ‘ধর’ ও ‘দেব’- এ দুই পরিবারের বসবাস; আশেপাশেও ছিল হিন্দু বাড়ি। এ পাড়া কায়স্থপাড়া নামে পরিচিত। ইউনিয়ন পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন নিশিরঞ্জন ধর এবং রসুলপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্পাদক ছিলেন তাঁর ছোট ভাই শিশির রঞ্জন ধর। রাজনৈতিকভাবে সচেতন এ পরিবার মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহায়তা করে আসছিল। পাকিস্তানিদের স্থানীয় দোসর রাজাকার আলবদররা এ খবর হানাদারদের ক্যাম্পে পৌঁছে দেয়। সাম্প্রদায়িক পরিচয় ও মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করায় রাজাকারদের দেয়া তথ্য মোতাবেক গফরগাঁও সদর থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ১লা জুন রসুলপুর গ্রামের নিশিবাবুর বাড়িতে পাকিস্তানি হানাদাররা এক নির্মম গণহত্যা সংঘটিত করে। মুক্তিযোদ্ধা রবীন্দ্র চন্দ্ৰ দেব (পিতা হরিবল চন্দ্র দেব) এবং সনৎ কুমার ধর (পিতা নিশিরঞ্জন ধর) এ গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী।
১লা জুন খুব ভোরে পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের দোসরদের সহযোগিতায় নিশি বাবুর বাড়ি চারদিক থেকে ঘেরাও করে। হানাদারদের উপস্থিতি টের পেয়ে রবীন্দ্র চন্দ্র দেব স্ত্রীসহ ৪/৫ জনকে নিয়ে ঘর থেকে পশ্চিম দিকে জঙ্গল দিয়ে পাটক্ষেতে আশ্রয় নেন। ঘুমন্ত ছোট মেয়েটিকে নিয়ে যাবার জন্য ঘরে প্রবেশ করলে রবীন্দ্র চন্দ্র দেব ও তার আত্মীয় রতন কুমার রায় (নিশ্চিন্তপুর, পাকুন্দিয়া, কিশোরগঞ্জ; সহকারী শিক্ষক, রসুলপুর হাইস্কুল) আরো কয়েকজনসহ পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে ধরা পড়েন। তারা পুরুষ সদস্যদের নির্যাতন করতে-করতে দক্ষিণ দিকের একটি ঘরে আটকে রাখে। এক পর্যায়ে তাদেরকে গুলি করে হত্যা করে এবং ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে তাদের শরীর পুড়ে প্রায় ভস্ম হয়ে যায়। কাউকে সনাক্ত করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে এর পূর্বে রবীন্দ্র চন্দ্র দেব দৌড়ে পালাতে সক্ষম হন। এ গণহত্যায় নিশিবাবুর বাড়ির ৫ জন ছাড়া তাঁর একজন ভাগ্নে রতন কুমার রায় শহীদ হন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী চলে যাবার পর বাড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম পাশের ভিটার শেষ সীমানায় একটি গর্ত করে ৬ জনকে গণকবরে সমাহিত করা হয়। রসুলপুর গণহত্যা নিশিবাবুর বাড়ির গণহত্যা নামেও পরিচিত। [নিপা জাহান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড