বীর প্রতীক রফিকুল আহসান
রফিকুল আহসান, বীর প্রতীক (১৯৪৭-১৯৯২) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৭ সালে বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা ইউনিয়নের দুর্গাপাশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আসমত আলী, মাতার নাম রাবেয়া খাতুন। রফিকুল আহসানের ডাকনাম বাদশা। তিনি রফিকুল আহসান বাদশা নামে পরিচিত। জন্মের এক বছর পরই তাঁর পিতা মারা যান। এরপর তাঁর মা রাবেয়া খাতুনের সঙ্গে মোহাম্মদ আলী খানের বিয়ে হয়। এ পরিবারেই রফিকুল আহসান বড় হন।
রফিকুল আহসান ছাত্রাবস্থায় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু করলে রফিকুল আহসান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাঁর পিতার একটি বন্দুক ছিল। তা নিয়েই তিনি যুদ্ধ শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তিনি বাকেরগঞ্জের স্থানীয় নাসির বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হন।
বাকেরগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করে বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধযুদ্ধসহ পাকিস্তানি সেনাদের ঘাঁটি, লঞ্চ ও গানবোট আক্রমণে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য ভারতে যান।
ভারত থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে তিনি ৯ম সেক্টরে মেজর জলিলের অধীন কমান্ডার নাসিরের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন। পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার কালিশুরী যুদ্ধ, বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী নদীতে পাকিস্তানি লঞ্চ আক্রমণ, শ্যামপুরের যুদ্ধ এবং ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার চাচৈর যুদ্ধ-এ তিনি বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
বাকেরগঞ্জ থানায় স্বাধীনতাবিরোধী মালেক দারোগার নেতৃত্বে কয়েকশ পুলিশ ও রাজাকার অবস্থান করত। তারা এলাকায় ব্যাপক নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ এবং হত্যাযজ্ঞ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল সাব-সেক্টর কমান্ডার শাহজাহান ওমরের নেতৃত্বে বাকেরগঞ্জ থানার পাশে পাদ্রীশিবপুরে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা আত্মসমর্পণের আহ্বান জানালে পুলিশরাজাকাররা তা প্রত্যাখ্যান করে। এরপর মুক্তিযদ্ধোরা বাকেরগঞ্জ থানা আক্রমণ করেন। ৫ই ডিসেম্বর সকাল থেকে যুদ্ধ শুরু হয়ে ৭ই ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে। মুক্তিযোদ্ধাদের সাঁড়াশি আক্রমণে শেষ পর্যন্ত ৭ই ডিসেম্বর রাজাকারদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বারেকগঞ্জ থানা হানাদারমুক্ত হয়। বাকেরগঞ্জ থানা আক্রমণের যুদ্ধে মীর মোস্তাক হোসেন সেন্টু, গৌরনদীর শাহজাহানসহ ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এ-যুদ্ধে রফিকুল আহসান যথেষ্ট সাহসের পরিচয় দেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা প্রদর্শন ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মো. রফিকুল আহসানকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ১৯৯২ সালের ২রা অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। নিজ গ্রামের বাড়ি দুর্গাপাশায় তাঁকে সমাহিত করা হয়। তাঁর স্ত্রীর নাম পারভীন আহসান। এ দম্পতির ২ পুত্র সন্তান রয়েছে। জীবদ্দশায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আহসান তাঁর খেতাব প্রাপ্তির কথা জেনে যেতে পারেননি। মৃত্যুর পর জানা যায় তিনি ‘বীর প্রতীক’ খেতাবপ্রাপ্ত। [রেহানা পারভীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড