You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর বিক্রম রংগু মিয়া - সংগ্রামের নোটবুক

বীর বিক্রম রংগু মিয়া

রংগু মিয়া, বীর বিক্রম (শহীদ ১৯৭১) একজন নির্ভীক সৈনিক ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। তিনি কুমিল্লা জেলার লাঙ্গলকোট উপজেলার মোকরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম এয়াকুব আলী (আকু মিয়া) এবং মাতার নাম রংমালা।
রংগু মিয়া ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ‘ই এম ই’ কোরে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ সমাপ্তির পর তিনি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে নিয়োজিত হন। এর কয়েক বছর পর তিনি রংপুরের সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে যোগদান করেন এবং সেখানে কর্মরত অবস্থায় ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে অংশ নেন। ৭১-এ তাঁকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বদলি করা হয়। এ-সময় তিনি হাবিলদার পদে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হতে পারে এ আশঙ্কা থেকে তিনি পরিবার- পরিজন গ্রামের বাড়িতে রেখে আসেন।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২৫শে মার্চের সশস্ত্র আক্রমণ ও গণহত্যা শুরুর পরপরই রংগু মিয়া ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয়ে যান। পালিয়ে বাড়ি না গিয়ে তিনি ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বিভিন্ন প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। প্রতিরোধযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায় শেষে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে দেখা করার জন্য তিনি গ্রামের বাড়িতে যান। সেখানে কয়েকদিনের জন্য ছাত্র-যুবকদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেন। এরপর চৌদ্দগ্রামে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গমণেচ্ছুদের প্রশিক্ষণ দেন। সরাসরি যুদ্ধ করতে তিনি এক পর্যায়ে ভারতের আগরতলায় চলে যান। সেখান থেকে ভারতের মেলাঘর হয়ে ৬ নম্বর সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স বুড়িমারীতে যুক্ত হন। প্রথমে সাহেবগঞ্জ সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন নওয়াজিশ উদ্দিন এবং পরবর্তীতে পাটগ্রাম সাব- সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মতিউর রহমানের নেতৃত্বে তিনি বিভিন্ন যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি তিস্তা রেলসেতু, হাতীবান্ধা, হাতীবান্ধা পাকবাহিনী ক্যাম্প, বাউরা, শিঙ্গমারী বিওপি, বড়খাতা প্রভৃতি অপারেশন ও যুদ্ধে অসাধারণ সাহসিকতা ও বীরত্বের পরিচয় দেন। ২২শে নভেম্বর বড়খাতা যুদ্ধে বীর বিক্রমে যুদ্ধ করেন এবং যুদ্ধরত অবস্থায় শহীদ হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান ও আত্মোৎসর্গ করায় তাঁকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ১ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম জয়তুন নেছা। [হারুন রশীদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড