রক্ত গৌরব স্মৃতিসৌধ (রংপুর সদর)
রক্ত গৌরব স্মৃতিসৌধ (রংপুর সদর) ৭১-এর মার্চে রংপুর ক্যান্টনমেন্টের কাছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে যেসব প্রতিরোধযোদ্ধাকে হত্যা করে, তাদের স্মরণে নির্মিত। ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন নিসবেতগঞ্জ এলাকায় এটি নির্মিত হয়েছে। ১৯৭১ সালের উত্তাল মার্চে সারা দেশের মতো রংপুরের সাধারণ ছাত্র-জনতাও মিছিল- মিটিং আর প্রতিবাদের আগুনে জ্বলে ওঠে। ২৫শে মার্চ রাত ১২টার পর পাকিস্তানি বাহিনী রংপুর শহরে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অস্ত্রহাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। একই সঙ্গে রংপুরের ইপিআর বাহিনীর ১০নং উইং সদর দপ্তরে অবস্থানরত বাঙালিদের আক্রমণ করে। এতে অনেক নিরীহ মানুষ নিহত ও আহত হয়। ২৬শে মার্চ ২৩ ব্রিগেডের সৈনিকরা সারাদিন রংপুর শহর ও আশপাশে টহল দেয়। রংপুরে সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে যে, বহু বাঙালি সৈনিককে সেনানিবাসে হত্যা এবং অনেককে বন্দি করা হয়েছে। এ সংবাদ বাইরে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে-সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সাধারণ জনগণ আরো উত্তেজিত হয়ে ওঠে। ২৮শে মার্চ ওরাও, সাঁওতাল ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীসহ মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ ঢোল বাজিয়ে ঘাঘট নদীর পাড়ে একত্রিত হয়ে সেনানিবাসের দিকে যাত্রা করে। দেশপ্রেমে উন্মত্ত বাঙালি জনগণ দা, বল্লম, তীর-ধনুক, লাঠি ইত্যাদি হাতের কাছে যা ছিল তাই নিয়ে প্রস্তুত হয় বর্বর পাকিস্তানিদের সঙ্গে লড়াই করতে। তারা সেনানিবাসের ৪০০ গজের মধ্যে আসতেই পাকিস্তানি বাহিনীর ট্যাংক আর ব্রাউনিং মেশিন গানের গুলিতে পাখির মতো মাটিতে লুটিয়ে পড়ে শতশত জন। পাকসেনারা এরপর মৃত-অর্ধমৃত প্রায় ৫০০ জন মুক্তিকামী মানুষকে নিসবেতগঞ্জ এলাকায় পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলে। স্মৃতিসৌধে উৎকীর্ণ ফলকে এসব লেখা আছে। সেদিন নিসবেতগঞ্জ এলাকায় বাঙালিদের এ মহান আত্মোৎসর্গকে স্মরণীয় করে রাখতে ঘাঘট নদীর তীরে নির্মিত হয়েছে ‘রক্ত গৌরব’ নামের এ স্মৃতিস্তম্ভ। উল্লেখ্য, ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘রক্ত গৌরব’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সেনাবাহিনী প্রধান লে. জেনারেল মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, বীর বিক্রম এনডিসি, পিএসসি। ২০০২ সালের নভেম্বরে এটি উদ্বোধন করেন মেজর জেনারেল আ ত ম জহিরুল আলম পিএসসি। [গীতিময় রায়]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড