রক্ষাকালী মন্দির গণহত্যা (পাবনা সদর)
রক্ষাকালী মন্দির গণহত্যা (পাবনা সদর) ১১ই এপ্রিল সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দ্বারা সংঘটিত এ গণহত্যায় ২০-২৫ জন মানুষ শহীদ হন।
ঘটনার দিন বিকেলে পাকিস্তানি বাহিনী পাবনা শহরে প্রবেশ করে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে পুলিশ লাইন্স, সার্কিট হাউস, নূরপুর ডাকবাংলো, বিসিক ও ওয়াপদার দিকে এগুতে থাকে। তাদের একটি দল পলিটেকনিক পার হয়ে ডানদিকে ফজলুল রোড দিয়ে রক্ষাকালী মন্দিরের কাছে তিন মাথায় পৌঁছায়। সেখানে ডা. বিহারীলাল সাহার গোবিন্দ বাড়ি মন্দিরে অনেক লোকজন এসে আশ্রয় নিয়েছিল। হানাদার বাহিনী ঐ বাড়ির মন্দিরের ভেতরে আশ্রয় নেয়া এবং রাস্তার আশপাশে লুকিয়ে থাকা সবাইকে ধরে রক্ষাকালী মন্দিরের সামনে এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে নৃশংসভাবে গুলি চালায়। সেখানে ২০-২৫ জন মানুষ নিহত হয়। গণহত্যার পর গভীর রাতে জিলাপাড়ার লোকজন কয়েকজন মুসলমান শহীদের লাশ রক্ষাকালী মন্দিরের পাশের রাস্তা মনসেফ বাবু রোড (বর্তমান শহীদ মওলানা কছিম উদ্দিন রোড)-এ নিয়ে গণকবরে সমাহিত করে। হিন্দুদের সৎকার করা সম্ভব না হওয়ায় তাদের লাশগুলো সেখানেই পড়ে থাকে এবং কয়েকদিন ধরে শেয়াল, কুকুর, শকুনে খায়। স্বাধীনতার পর রফিকুল ইসলাম বকুলের উদ্যোগে মনসেফ বাবু রোডে শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। মনসেফ বাবু রোডে গণকবরে সমাহিত ৮ জন শহীদ হলেন- মো. আশরাফ আলী আক্কেল (পিতা আহেদ আলী; পাবনা বাজারে মনোহারী দোকানদার), মো. আকবর আলী (পিতা বাবু খাঁ, জিলাপাড়া; পাবনা বাজারের দর্জি), পুলিশ সদস্য মো. আফছার আলী (পিতা শেখ মেছের আলী, জিলাপাড়া), মো. মোশারফ হোসেন মুশা (পিতা আলতাফ হোসেন, জিলাপাড়া; ব্যবসায়ী), এডভোকেট মো. শফিউদ্দিন (পিতা জয়নাল আবেদীন), জেল পুলিশ সদস্য মো. নূরুল হক (জিলাপাড়া), মো. শফিউন্নবী সূর্য (পিতা সোহরাব আলী; ড্রাইভার) ও মো. হারুনর রশিদ (কাঠ মিস্ত্রী)। এদিন রক্ষাকালী মন্দিরে বিচ্ছু ওরফে ভেগু (পিতা রমজান; নিউ মার্কেটের দর্জি দোকানদার) ও বদর উদ্দিন শেখ চেরু (পিতা আহেদ আলী শেখ; সুতোর মিস্ত্রী) পাকিস্তানি সৈন্যদের গুলিতে আহত হয়ে বেঁচে যান। রক্ষাকালী মন্দিরের শাহীদদের মধ্যে বেশির ভাগ ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। তাদের সবার নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তাদের একজন ছিলেন বিভূতিভূষণ সাহা (পিতা ডা. বিহারীলাল সাহা; সোনাপট্টির মুখে ঔষধের দোকানের মালিক)। তার লাশ পচেগলে মাটিতে মিশে যায়। [মো. ছাবেদ আলী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৯ম খণ্ড