যশোর সেনানিবাস গণকবর (যশোর সদর)
যশোর সেনানিবাস গণকবর (যশোর সদর) যশোর সদর উপজেলায় অবস্থিত। এখানে ১৭ জন শহীদ বাঙালি সৈনিককে গণকবর দেয়া হয়।
২৬শে মার্চ থেকে সারাদেশে সর্বাত্মক মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। বাঙালিরা যার হাতে যা ছিল তা-ই নিয়ে পাকিস্তানি হানাদারদের মোকাবেলা করতে থাকে। যশোর সদর উপজেলায় অবস্থিত সেনানিবাসে ২৬শে মার্চ থেকেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকদের আত্মসমর্পণ করতে বলে। কিন্তু বাঙালি যোদ্ধারা আত্মসমর্পণ করেননি। তাঁরা ৩০শে মার্চ থেকে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাদের হাতে যেমনি ছিল শক্তিশালী অস্ত্র, তেমনি ছিল সেনাশক্তি। তাই দুই পক্ষের মধ্যে এটি ছিল অসম যুদ্ধ। এ যুদ্ধে ১৭ জন বাঙালি সৈনিক শহীদ হন। শহীদরা হলেন সুবেদার মুজেম্মেল হক, সুবেদার রোকনুজ্জামান মিয়া, নায়েক সুবেদার মোফাজ্জেল হোসেন, হাবিলদার নুর মোহাম্মদ, হাবিলদার আবদুল আমিন, হাবিলদার আলী মোহাম্মদ, নায়েক পান মোহাম্মদ, নায়েক আলতাফ হোসেন, নায়েক আমিন মিয়া, ল্যান্স নায়েক সুলতান মোল্যা, সিপাহি ইদ্রিস আলী, সিপাহি আবদুস সালাম, সিপাহি আবদুস সাত্তার, সিপাহি সেকেন্দার আলী, সিপাহি আলতাফ হোসেন, সিপাহি মোহাম্মদ আলী ও সিপাহি আবুল বাশার। শহীদদের লাশ দীর্ঘ সময় খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকে। অবশেষে পাকিস্তানি হানাদররা লাশগুলো সেনানিবাসের পাশে গর্ত করে পুঁতে রাখে। স্বাধীনতার পর শহীদদের কঙ্কাল উদ্ধার করে মনোহরপুর গ্রামের কাছে ধর্মীয় মর্যাদায় কবরস্থ করা হয়। এর পাশে ‘গৌরবাঙ্গন’ নামে একটি স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে। স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষও এখানে শহীদ সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
যশোর সেনানিবাস গণকবর স্থানে ১৭টি স্মৃতিফলক নির্মিত হয়েছে। প্রতিটি স্মৃতিফলক লাল ইটের গাথুনিতে নির্মিত এই সমাধিগুলোর পাশে ১৯৯৫ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর নির্মাণ করা হয় ‘রক্তঋণ’ নামে একটি স্মৃতিসৌধ। ১০ ফুট উঁচু ৪টি লাল রঙের পিলারের ওপর একটি হেলমেট স্থাপন করা হয়েছে, যার ব্যাস ১৬ ফুট ৮ ইঞ্চি। স্মৃতিসৌধটি ৮৮০ বর্গগজ এলাকার ওপর স্থাপিত। [মহসিন হোসাইন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড