You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.09 | যাত্রাপুর বাজার অপারেশন (কুড়িগ্রাম সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

যাত্রাপুর বাজার অপারেশন (কুড়িগ্রাম সদর)

যাত্রাপুর বাজার অপারেশন (কুড়িগ্রাম সদর) পরিচালিত হয় ৯ই নভেম্বর। এতে ৩ জন পাকসেনা ও ৯ জন রাজাকার নিহত হয়।
কুড়িগ্রাম সদর থানার যাত্রাপুর ইউনিয়নের অবস্থান ধরলা নদীর পূর্ব দিকে দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বেষ্টিতI যাত্রাপুর হাট পূর্ব থেকেই গবাদিপশুর কেনা-বেচা এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে প্রসিদ্ধ। ২৭শে মে-র পর পাকসেনারা যাত্রাপুর দখল করে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। যাত্রাপুর বাজারের সঙ্গে লাগোয়া নদী এবং নদীর পূর্ব ও উত্তরে ভারতের বিশাল সীমান্ত থাকায় যাত্রাপুর বাজারের অনেক গুরুত্ব ছিল। সীমান্তে ইপিআর-এর একটি বর্ডার আউট পোস্ট ছিল। এখান থেকেই পাকবাহিনী ভারতীয় সীমান্তের দিকে নজর রাখত। তাছাড়া নিকটেই ভিতরবন্দ এলাকায় জামায়াতে ইসলামী নেতা কুড়িগ্রাম, শান্তি কমিটির সম্পাদক খন্দকার শামসুল হকের নেতৃত্বাধীন শান্তি কমিটি ও রাজাকারদের বিশেষ তৎপরতা ছিল। খন্দকার শামসুল হকের নেতৃত্বে ভিতরবন্দ, পাঁচগাছি, ঘোগাদহ, কালিগঞ্জ, ভোগডাঙ্গা, হাসনাবাদসহ গোটা নাগেশ্বরীতে ব্যাপক লুটতরাজ হয়। খন্দকার শামসুল হক নিজেই ভিতরবন্দ জমিদার বাড়ির দখল নেয় এবং হিন্দু বাড়িঘরে লুটতরাজ করে। সে এবং তার ছোট ভাই খন্দকার মোজাম্মেল হক ডা. তারাকান্ত ভৌমিক ও তার শ্যালক সুরেশ ঘোষ-সহ অনেক বাঙালিকে হত্যা করে। পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের এ ধরনের নির্যাতনের খবর সাব- সেক্টর কমান্ডারের কাছে এলে তিনি যাত্রাপুর আপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। ২রা নভেম্বর ক্যাপ্টেন নওয়াজিস উদ্দিনের নির্দেশে যাত্রাপুর অপারেশনের দায়িত্ব পান সৈয়দ মনসুর আলী টুংকু। তিনি প্রথমে নদীর অপরদিকে দৈ খাওয়া ও মাদারগঞ্জ এলাকায় ক্যাম্প স্থাপন করে যাত্রাপুর অপারেশনের পরিকল্পনা করেন। ৯ই নভেম্বর পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের আগমনের খবর পেয়ে তাঁরা যাত্রাপুর বাজারে অবস্থান নেন। পাকবাহিনী বাজারে প্রবেশমাত্রই মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিত আক্রমণ করেন এবং উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ৩ জন পাকসেনা ও ৯ জন রাজাকার নিহত হয় এবং পাকবাহিনীর অপর সদস্যরা পালিয়ে কুড়িগ্রামের দিকে চলে যায়। এ ঘটনায় যাত্রাপুর ও আশপাশ এলাকার রাজাকাররা বেশ ভীত হয়ে পড়ে এবং শতাধিক রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। ঐদিন (৯ই নভেম্বর) যাত্রাপুরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। [এস এম আব্রাহাম লিংকন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড