বীর প্রতীক মোহাম্মদ হোসেন
মোহাম্মদ হোসেন, বীর প্রতীক (১৯৫১-১৯৭১) নৌকমান্ডো এবং অপারেশন জ্যাকপট ও অপর নৌ অপারেশনে অংশগ্রহণকারী শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫১ সালে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার ধলই ইউনিয়নের পশ্চিম ধলই (শফিনগর, কাঠিরহাট) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আহাম্মদ মিয়া এবং মাতার নাম তম্বিয়া খাতুন। মোহাম্মদ হোসেন ৫ বোন ও ১ ভাইয়ের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ছিলেন। তিনি পশ্চিম ধলই আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন।
মোহাম্মদ হোসেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরে চেইনম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিরত অবস্থায় তিনি রাজনৈতিক সচেতনতা লাভ করেন। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন ও বাঙালি বিদ্বেষ-নীতির প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ক্রমান্বয়ে তিনি আওয়ামী লীগ-এর সক্রিয় সমর্থকে পরিণত হন। ৭১-এর মার্চে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে তিনি তাতে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রথমদিকে মোহাম্মদ হোসেন একাধিক প্রতিরোধ যুদ্ধে যোগ দেন। জুন মাসে তিনি ভারতে যান। মেঘালয় যুব ক্যাম্প থেকে তাঁকে বাংলাদেশের নৌকমান্ডো দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এখান থেকে তিনি ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী পলাশিতে অবস্থিত নৌকমান্ডো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যান। সেখানে অন্য কমান্ডোদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। মোহাম্মদ হোসেনকে মাইন বুকে বেঁধে শত্রুপক্ষের জাহাজ ডুবানোর বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি আগস্টে পরিচালিত অপারেশন জ্যাকপট-এ অংশ নেন। এ অপারেশন সফল হওয়ার পর তিনি ফারুক ই আজম, বীর প্রতীকএর নেতৃত্বে ২৭শে সেপ্টেম্বরের বহির্নোঙর জাহাজ অপারেশনে অংশ নেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এ অপারেশন ব্যর্থ হয়। মোহাম্মদ হোসেন অন্য ৩ বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুন নূর মাওলা, বীর প্রতীক, মোহাম্মদ আমীর হোসেন, প্রতীক ও মো. নূরুল হক, বীর প্রতীকএর সঙ্গে পাকসেনাদের হাতে ধরা পড়েন। দীর্ঘ সময় সাঁতার কাটার কারণে তাঁরা সবাই তখন মৃতপ্রায় অবস্থায় ছিলেন। পাকসেনারা ধৃত এ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালায়। সবচেয়ে বেশি নির্যাতন চলে মোহাম্মদ হোসেনের ওপর। কারণ তিনি বিস্ফোরকসহ ধরা পড়েন। এক পর্যায়ে তিনি নির্যাতনের মুখে শহীদ হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার মোহাম্মদ হোসেনকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর এ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নামে কিছু প্রতিষ্ঠান ও সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশবিদ্যালয়ের প্রবেশ পথ জিরো পয়েন্টে তাঁর নামে একটি স্মৃতি ম্যুরাল নির্মিত হয়েছে। হাটহাজারী উপজেলা সদরে শহীদ মোহাম্মদ হোসেন অডোটরিয়াম রয়েছে। কাঠিরহাট থেকে পশ্চিম ধলই পর্যন্ত রাস্তাটি তাঁর নামে করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ২০১০ সালে পশ্চিম ধলই গ্রামে এ বীর শহীদের বাড়িতে মোহাম্মদ হোসেন স্মৃতিভবন নির্মাণ করে দিয়েছে। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড