You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব

মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৫) সুবেদার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৫ সালের ৭ই মার্চ কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার শ্রীমন্তপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হায়দার আলী ও মাতার নাম আয়ফলের নেছা।
মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে সুবেদার আব্দুল ওহাব ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে জয়দেবপুর সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পিলখানাসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থান ও দেশের অন্যান্য স্থানে একযোগে নিরস্ত্র বাঙালি ও বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে বাঙালি সৈনিকদের হত্যায় ঝাঁপিয়ে পড়লে তিনি মেজর কে এম সফিউল্লাহ, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে জয়দেবপুরে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রাথমিক প্রতিরোধ যুদ্ধের পর সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধ শুরু হলে তিনি মেজর সফিউল্লাহর নেতৃত্বাধীন ৩ নম্বর সেক্টরে এবং পরবর্তীতে তাঁরই নেতৃত্বে ‘এস’ ফোর্স গঠিত হলে সে ফোর্সের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যুদ্ধ করেন। মেজর সফিউল্লাহ ক্যাপ্টেন মতিউর রহমানের নেতৃত্বে কিছু ইপিআর-সহ ২য় বেঙ্গলের ১ কোম্পানি সেনাসদস্যকে নরসিংদীতে নিয়োজিত করেন। সুবেদার আব্দুল ওহাব তাঁদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি আড়িয়াল খাঁ নদীর রেলওয়ে ব্রিজ অপারেশন, বেলাবো যুদ্ধ এবং ২ নম্বর সেক্টরের মন্দভাগ সাব-সেক্টরে সালদা নদীর তীরবর্তী এলাকার যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আড়িয়াল খাঁ নদীর রেলওয়ে ব্রিজ অপারেশন সংঘটিত হয় ১১ই জুলাই। তাঁর নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ বিস্ফোরক দিয়ে ব্রিজটি উড়িয়ে দেন। বেলাবো যুদ্ধে তিনি নেতৃত্ব দেন। তিনি গোপনে জানতে পারেন যে, বানার নদী দিয়ে লঞ্চে করে পাকসেনাদের একটি দল আসবে। ওহাব তাঁর সহযোদ্ধাদের নিয়ে গোপন স্থানে অপেক্ষা করতে থাকেন। শত্রুসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের পরিকল্পনা ও অবস্থান পূর্বেই তাদের দালালদের মাধ্যমে জেনে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভ্রান্ত করে কাঠের নৌকায় তারা গোপনে নদী পার হয়ে আসে। মুক্তিসেনারা তাদের আগমনের বিষয়টি আদৌ জানতে পারেননি। লঞ্চ ঠিকই নদী পথে এগিয়ে আসছিল, তবে তাতে কোনো পাকসেনা ছিল না। মুক্তিযোদ্ধারা দেখামাত্র লঞ্চের ওপর গুলিবর্ষণ করে। প্রতারণার ফাঁদে পড়ে মুক্তিসেনারা পেছন থেকে শত্রুসেনাদের দ্বারা প্রচণ্ড আক্রমণের সম্মুখীন হন, যা ছিল তাদের কল্পনারও বাইরে। পাকসেনারা তাদের ঘিরে ফেলে। দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ও নৈতিক মনোবলে শক্তিশালী মুক্তিসেনারা পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেন। তাঁদের কিছু সদস্য পাকহানাদারদের ঘেরাও থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। অনেকে শহীদ হন ১৯শে জুলাই পাকসেনাদের একটি কোম্পানি সালদা নদীতে নৌকাযোগে অগ্রসর হচ্ছিল। সুবেদার ওহাবের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি প্লাটুন মন্দভাগ বাজারের নিকট থেকে হানাদারদের ওপর প্রচণ্ড আঘাত হানে। এ আক্রমণে হানাদার বাহিনীর কুখ্যাত অফিসার ক্যাপ্টেন বোখারীসহ ৬০-৭০ জন শত্রুসেনা গুলিবিদ্ধ এবং কেউ-কেউ পানিতে নিমজ্জিত হয়ে প্রাণ হারায়। এমতাবস্থায় হানাদাররা পিছু হটে। এ আক্রমণের পর মন্দভাগ ও সালদা নদীতে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের নিয়ন্ত্রণ পূর্বাপেক্ষা সংহত করতে সমর্থ হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব-কে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। তিনি ৫ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম মোছা. রওশনআরা। [শেখ সাইয়েদুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড