বীর বিক্রম মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী খান
মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী খান, বীর বিক্রম (১৯৩৬- ১৯৮১) ক্যাপ্টেন, ৭নং সেক্টরের হামজাপুর সাব-সেক্টর কমান্ডার ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর জন্ম ১৯৩৬ সালে ঢাকার মিরপুরে। তাঁর পিতার নাম নওশের আলী খান এবং মাতার নাম মোছা. হাবিবুন নেছা। পেশাগত জীবনের শুরুতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইএমই কোর্সে ভর্তি হন এবং সেখানে কমিশনপ্রাপ্ত হওয়ার পর তাঁকে পশ্চিম পাকিস্তানে পোস্টিং দেয়া হয়। কিছুদিন চাকরি করার পর পশ্চিম পাকিস্তানিদের বৈষম্যমূলক আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি স্বেচ্ছায় সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে দেন। পরে দেশে ফিরে তিনি কুষ্টিয়ার জগতি সুগার মিলসে চাকরি নেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি বগুড়ার জয়পুরহাট সুগার মিলসে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালিদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে গণহত্যা শুরু করলে তিনি কর্মস্থল ত্যাগ করে সরাসরি প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধযুদ্ধের এক পর্যায়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদের সংকট দেখা দিলে তিনি ভারতীয় সীমান্তে অবস্থান নিয়ে সেখান থেকে শত্রুর ঘাঁটিত গেরিলা আক্রমণ পরিচালনা করেন।
পরবর্তীতে জুন মাসে সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধ শুরু হলে মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী খান ৭ নম্বর সেক্টরের হামজাপুর সাব-সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম দিকে তিনি রেইড, এম্বুশ ও গেরিলা পদ্ধতিতে আক্রমণ চালাতে থাকেন। এরপর পাকসেনাদের যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ট্রেন লাইন অকেজো করতে প্রকৌশলগত অভিজ্ঞতা কাজে লাগান। লেদ মেশিনে স্টিলের পাইপ দিয়ে ৬টি তিন ইঞ্চি মর্টারের ব্যারেল তৈরি করেন। এর সাহায্যে ২৫শে মে পার্বতীপুর-জয়পুরহাট রেললাইনের গোবিন্দপুর নামক স্থানে পাকসেনা বহনকারী চলন্ত ট্রেনের ওপর মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করে ট্রেনের অর্ধেক লাইনচ্যুত করেন। সঙ্গে- সঙ্গে এম্বুশ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালিয়ে ৮০ জন পাকসেনা ও ১০০ জন রাজাকারকে হত্যা করেন। এ অপারেশনের পর দীর্ঘদিন এ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। এরপর মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী খান তাঁর বাহিনী নিয়ে বিভিন্ন সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১০ই ডিসেম্বর দিনাজপুর জেলার বিরলে পাকসেনাদের সঙ্গে এক সম্মুখ যুদ্ধে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী খানকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ২ কন্যা ও ৩ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম সুলতানা খান। ১৯৮১ সালের ২রা জুন এ বীর মুক্তিযোদ্ধা আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। [হারুন রশীদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড