You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক মোহাম্মদ দিদারুল আলম - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক মোহাম্মদ দিদারুল আলম

মোহাম্মদ দিদারুল আলম, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৪) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৪ সালের ২৫শে নভেম্বর চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার মুছাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ফজলুল হক এবং মাতার নাম হালিমা খাতুন। তিনি ১৯৬১ সালে সন্দ্বীপ কার গীল হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম জেলার নাজিরহাট কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে সরকারি কমার্স কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে শর্ট কোর্সে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। এ বছরেই তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের এবোটাবাদের কাকুল মিলিটারি একাডেমি থেকে সফলতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ সমাপ্তির পর কমিশন প্রাপ্ত হন এবং কুমিল্লা সেনানিবাসে পোস্টিং পান। ১৯৭১ সালে দিদারুল আলম কুমিল্লা সেনানিবাসে লেফটেন্যান্ট পদে কর্মরত ছিলেন। ঢাকাসহ সারা দেশে যখন উত্তাল রাজনৈতিক আন্দোলন চলছিল, তখন তিনি ঢাকা শহরে অবস্থান করছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ৭ই মার্চের দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণসহ প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক ঘটনাই তিনি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। ২৫শে মার্চ রাতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইট-এর নামে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ব্যাপক গণহত্যা ও নির্যাতন শুরু করলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি ২৬শে মার্চ ঢাকা ত্যাগ করে পায়ে হেঁটে ২৮শে মার্চ চাঁদপুরে পৌছান। সেখানকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী প্রায় চারশত সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনী পরিচালনার দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত করেন। এ বাহিনী নিয়ে দিদারুল আলম বিভিন্ন স্থানে বীরত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ পরিচালনা করেন। পরবর্তীতে সেক্টরভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাঁকে দুই নম্বর সেক্টরের অধীন মতিনগর সাব-সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়া হয়। তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত যুদ্ধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কুমিল্লা জেলার কোটেশ্বর যুদ্ধ, আমড়াতলী- কৃষ্ণপুর যুদ্ধ— এবং চট্টগ্রাম জেলার নাজিরহাট যুদ্ধ।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মতিনগর ক্যাম্প থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে মুক্তিযোদ্ধারা কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন স্থানে অপারেশন চালাতেন। ১০ই সেপ্টেম্বর দিদারুল আলমের দল আমড়াতলী- কৃষ্ণপুর গ্রামে এসে টহলদার পাকসেনা ও রাজাকারদের ওপর আক্রমণ করেন। অকস্মিক এ আক্রমণে পাকসেনারা হকচকিত হয়ে পড়ে। সারাদিন যুদ্ধ করার পর সন্ধ্যার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের মতিনগর ক্যাম্পে ফিরে যান। এ যুদ্ধে পাকসেনাদের কয়েকজন নিহত এবং অনেকে আহত হয়। তারা ফিরে যাবার সময় পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামে আশ্রয় নেয়া ভারতগামী ৪০ জনেরও বেশি শরণার্থীকে গুলি করে হত্যা করে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার মোহাম্মদ দিদারুর আলমকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। মুক্তিযুদ্ধ শেষে তিনি তাঁর কর্মস্থল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং পদোন্নতি পেয়ে ১৯৭৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হন। ১৯৮০ সালে এক কথিত সেনাঅভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শাল হয়। তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে দশ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় এবং চাকরিচ্যুত করা হয়। ছয় বছর কারাভোগের পর তিনি মুক্তি পান। ব্যক্তিজীবনে তিনি এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম পারভীন সুলতানা। [সাজাহান মিয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড