মুক্তিযুদ্ধে মোহনপুর উপজেলা (রাজশাহী)
মোহনপুর উপজেলা (রাজশাহী) রাজশাহী জেলা সদর থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। এখানকার জনগণ বরাবরই রাজনীতি-সচেতন। জেলা সদরের কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে তারা ভাষা-আন্দোলন, ১৯৬৬-র ৬-দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান প্রভৃতি আন্দোলন সংগ্রামে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তাদের ঐক্যবদ্ধ সমর্থনে মোহনপুর-বাগমারা আসন থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সরদার আমজাদ হোসেন এমপিএ নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের মার্চে বঙ্গবন্ধু আহূত অসহযোগ আন্দোলন-এ তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এ-সময় রাজশাহী শহরের যে-কোনো ঘটনা তাদের ব্যাপকভাবে আন্দোলিত করত।
মার্চের প্রথম থেকেই আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ-এর কর্মীরা এলাকায় মিছিল-মিটিংয়ের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে অসহযোগ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করেন। ৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ঐতিহাসিক ভাষণের পরদিন মোহনপুরের ছাত্র- জনতা আব্দুস সাত্তার (ছাত্রলীগের সভাপতি), তৈয়বুর রহমান মাস্টার, রাখাল চন্দ্র দাস (শিক্ষক), রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ (মোহনপুর স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক), নাজিম উদ্দিন প্রমুখের নেতৃত্বে থানার সার্কেল অফিসারের বাড়ি আক্রমণ করে পুড়িয়ে দেয়। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়। থানার অবাঙালি পুলিশ অফিসার স্থানীয় বিহারিদের সহায়তায় তৈয়বুর রহমান মাস্টার, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ও নাজিম উদ্দিনকে গ্রেফতার করে। অন্যান্য নেতৃবৃন্দ আত্মগোপন করেন। এরপর থেকে মোহনপুরে পুলিশ ও বিহারিদের অত্যাচার বেড়ে যায়। ফলে মোহনপুরে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিমূলক কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তবে এখান থেকে অনেক ছাত্র-যুবক রাজশাহী শহরকেন্দ্রিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। মার্চের অসহযোগ আন্দোলনের সময় মান্দা উপজেলার পঞ্চ, দুকু, মান্নান প্রমুখ ইপিআর সদস্যের নেতৃত্বে রাজশাহীর পোস্টাল একাডেমি সংলগ্ন ইটভাটির পাশে একটি মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপিত হয়। সেখান থেকে মোহনপুরের সিদ্দিকুর রহমান ও মনসুর রহমানসহ অনেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তাঁরা ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে বিভিন্ন রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেন। মোহনপুরে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের মধ্যে আবুল কাশেম (মোহনপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি), মাস্টার আব্দুল মজিদ মিয়া (মোহনপুর থানা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি), জসীম উদ্দিন, রাখাল চন্দ্র দাস, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুর রশিদ সরদার (স্বাস্থ্যকর্মী), আবুল কাশেম গাইন (রায়ঘাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান), আমিনুল ইসলাম, মোমতাজ উদ্দিন, আব্দুল হাকিম (মোহনপুর কলেজের অধ্যক্ষ), ফায়েজ উদ্দিন কবিরাজ, সোলেমান মৃধা (ন্যাপ), ফরিদ উদ্দিন আহমেদ (ন্যাপ), আব্দুস সাত্তার (মোহনপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি), ছাত্রলীগের আব্দুস সামাদ, জাহেরুল, ছায়িম উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন, চৌধুরী মোহাম্মদ আলী প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।
৯ই এপ্রিল পাকবাহিনী মোহনপুরে প্রবেশ করে এবং মোহনপুর কলেজ, ডাকবাংলো ও শাকোয়া মাদ্রাসায় ক্যাম্প স্থাপন করে। শাকোয়া মাদ্রাসার রাজাকার ক্যাম্পটি ছিল রাজশাহীতে সর্ববৃহৎ।
মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই মোহনপুরে শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর তৎপরতা ছিল। এসব বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে খন্দকার রওশন আলী (জাহানবাদ, মোহনপুর থানা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান), দেওয়ান চাঁন মোহাম্মদ (সইপাড়া, মোহনপুর থানা শান্তি কমিটির সেক্রেটারি), আব্দুস সামাদ (হরিদাগাছি, কুখ্যাত রাজাকার), মওলানা দাউদ আলী (বেড়াবাড়ি, কুখ্যাত রাজাকার), মহেদ আলী (সিন্দুরী, কুখ্যাত রাজাকার), মঞ্জুর রহমান (সিন্দুরী, কুখ্যাত রাজাকার), নূরে আলম, খলিল, লুৎফর (বেড়াবাড়ি), ডাক্তার ওমর (ভাদুরিয়া), শফিউল্লাহ সরদার, ভেকু শেখ (বামনদিঘি), ইয়াকুব, কোবাদ (কৃষ্ণপুর), তজিবর (মোল্লাডাঙ্গা), এসারুল (মৌপাড়া), আব্দুর রাজ্জাক (মৌপাড়া), শামসুদ্দিন (তানোর, কুখ্যাত রাজাকার), আবুল কাশেম (মৌগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান), জমিরউদ্দিন মৃধা (জাহানবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান) প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। হরিদাগাছির রাজাকার আব্দুস সামাদ ছিল উর্দুভাষী। সে বিহারিদের নিকট এলাকার নারীদের সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করত এবং সে অনুযায়ী নারীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হতো। পাকবাহিনী মোহনপুরে প্রবেশের দিন পথের দু-পাশের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেয় এবং অনেককে হত্যা করে। রাজশাহী শহর ও আশপাশের অঞ্চল থেকে মোহনপুরের বিভিন্ন গ্রামে এসে আশ্রয় নেয়া মানুষজনও তাদের হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। মোহনপুরে ক্যাম্প স্থাপনের পর বিভিন্ন সময়ে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা মদনহাটি, পালোপাড়া, মুগরইল, বেড়াবাড়ি, ধুরইল, বসন্তকেদার, বিদিরপুর, সরদারপাড়া, বকপাড়া, বামনদিঘি প্রভৃতি গ্রামে গণহত্যা, নারীনির্যাতন, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে। তারা ধুরইল গ্রাম ঘেরাও করে ১০ জন মহিলাকে ধর্ষণশেষে হত্যা করে।
মোহনপুরের পার্শ্ববর্তী পবা উপজেলার দুয়ারী ও তানোর উপজেলার বাগধানী ব্রিজ অপারেশনে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের আক্রমণে টিকতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে মোহনপুরের মদনহাটি, পালোপাড়া, মুগরইল, বেড়াবাড়ি, বসন্তকেদার, বিদিরপুর, সরদারপাড়া, বকপাড়া প্রভৃতি গ্রামে আশ্রয় নেন। এ কারণে হানাদাররা গ্রামগুলো ঘিরে ফেলে ৪-৫শ লোককে বিদিরপুর হাটে ধরে নিয়ে যায় সেখান থেকে বেছে-বেছে ১৫-১৬ জনকে গাড়িতে উঠিয়ে অজানা স্থানে নিয়ে যায়। এরপর তাদের আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
বসন্তকেদার গ্রামের ৯ জনকে গ্রেফতার করে শিমুলগাছের কাঁটাযুক্ত ডাল ও রাইফেলের বাট দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করে। রাজাকাররা মৌপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা বিভূতিভূষণ দাসের বাড়িতে আক্রমণ চালায়। একই গ্রামের আশুতোষ সরকার রাজাকার আসার খবর পেয়ে প্রাণের ভয়ে নৌকাযোগে প্রতিবেশী আমজাদ খাঁ, আইয়ুব খাঁ ও কেফাতুল্লাহ সরকারসহ বারনই নদীর তীরে ইন্দুরকাটি জঙ্গলের বাঁশঝাড়ে লুকিয়ে থাকে। গোপনে এ সংবাদ পেয়ে কুখ্যাত রাজাকার আব্দুর রাজ্জাক, তজিবর, এসারুল, ইয়াকুব ও কোবাদের নেতৃত্বে একদল রাজাকার লাঠিসোটা নিয়ে সেখান থেকে তাদের ধরে এনে মৌপাড়া গ্রামের সরদারপাড়া মসজিদ নির্যাতনকেন্দ্রে নিয়ে যায়। কয়েকদিন নির্যাতনের পর তাদের শাকোয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্পে “স্থানান্তর করা হয়। রাজাকার মহেদ আলী আশুতোষ সরকারকে ছেড়ে দেয়ার শর্তে তাঁর পরিবারের সদস্যদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করে।
২৮শে আগস্ট রাজাকাররা মোগরার বিল গণহত্যা- সংঘটিত করে। এতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বেশ কয়েকজন মানুষ শহীদ হন। রাজাকাররা অমানুষিক নির্যাতনের পর হত্যা করে নিহতদের লাশ মোগরার বিলে ফেলে দেয়।
১৬ই নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা দুয়ারী ব্রিজ অপারেশন- পরিচালনা করার পর মুগরুল গ্রামে আশ্রয় নেন। সেখানে পাকবাহিনী তাঁদের আক্রমণ করলে তাঁরাও পাল্টা আক্রমণ করেন। কিন্তু পাকবাহিনীর আক্রমণে টিকতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে চলে যান। তাঁদের আশ্রয় দেয়া ও সহযোগিতা করার অভিযোগে রাজাকার মওলানা দাউদ আলী, নূরে আলম, খলিল, লুৎফর, ভেকু শেখ, শফিউল্লাহ সরদার প্রমুখের সহযোগিতায় পাকবাহিনী মুগরুল গ্রামটি ঘিরে ফেলে। তারা গাছপালা কেটে গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে পুরো গ্রামটি জ্বালিয়ে দেয় এবং সেখান থেকে ১৫ জন যুবককে হত্যা করে। এ ঘটনা মুগরুল গণহত্যা নামে পরিচিত। শাকোয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্পে কুখ্যাত রাজাকার মহেদ আলী, মঞ্জুর রহমান ও ডাক্তার ওমর বিভিন্ন গ্রাম থেকে ধরে আনা বন্দিদের জবাই করে হত্যা করে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মোহনপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে আরো ৩৮ জন মানুষকে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা হত্যা করে। তাঁরা হলেন— মো. মফিজ উদ্দিন (পিতা ইছর সর্দার, সিন্দুরী), লোকমান শেখ (পিতা বাহার শেখ, সইপাড়া), শ্রী নীরেশ চন্দ্র সাহা (পিতা সুরেন চন্দ্র সাহা, সইপাড়া), মো. বুনাউল্লা স্বর্ণকার (পিতা খুদি সরকার, সইপাড়া), মো. ছোলাইমান আলী মৃধা (পিতা মিজো মৃধা, পাথালিয়া), মো. ফায়েজ উদ্দিন মৃধা (পিতা লালবর মৃধা, পাথালিয়া), মো. তমিজ উদ্দিন মীরমালত (পিতা সমতুল্লা মীরমালত, কৃষ্ণপুর) মো. নাদের আলী মণ্ডল (পিতা জুমন মন্ডল, খাড়ইল), শ্রী গুরুপদ সরকার (পিতা সতীশ সরকার, বাড়ইকুড়ি), আব্দুল মণ্ডল (পিতা সাহেব মন্ডল, ইলামতপুর), জালাল (পিতা ছোলাইমান, ইলামতপুর), জগন্নাথ প্রামাণিক (পিতা দ্বারকানাথ প্রামাণিক, বিদ্যাধরপুর), যাদব চন্দ্র সরকার (পিতা রায়ৎ সরকার, বিদ্যাধরপুর), মো. আমজাদ (পিতা এনায়েত খাঁ, মৌপাড়া), মো. আয়উব আলী (পিতা সরাফত উল্লা, মৌপাড়া), বীরেন্দ্রনাথ ভৌমিক (পিতা রাধাকৃষ্ণ ভৌমিক, বাকশৈল), ভূপেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী (পিতা যোগেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী, হাটিরা), রাজেন্দ্রনাথ (পিতা রমেন্দ্রনাথ, হাটিরা), নঈম উদ্দিন (হাটিরা), কায়েম (পিতা নুর মোহাম্মদ, বগপাড়া), মো. খবির উদ্দিন (মহব্বতপুর), মো. আনছার আলী (পিতা ছামান, হরিহরপুর), খিদির (পিতা ইসরাইল, হরিহরপুর), হবির (পিতা বছির, বেলগাছি), ইয়ার আলী (পিতা নিয়ামত মোল্লা, পার মহব্বতপুর), সেকেন্দার (পিতা সিপাহী মিরমালত, কৃষ্ণপুর), মহির উদ্দিন মণ্ডল (পিতা জমির মন্ডল, বেড়াবাড়ি), লুৎফর রহমান (পিতা করিম মন্ডল, বেড়াবাড়ি), আনেছ সরদার (পিতা লোকমান সরদার, বেড়াবাড়ি), মসলেম (পিতা হোসেন, বেড়াবাড়ি), কছিমুদ্দিন (পিতা ফকির খাঁ, বেড়াবাড়ি), মহির উদ্দিন (পিতা মনির খাঁ, বেড়াবাড়ি), আব্দুল করিম শেখ (পিতা শাকির শেখ, একবারপুর), আব্দুল হামিদ (পিতা আনজের আলী, আতানারায়ণপুর), আব্দুল হামিদ (পিতা খাজা আহমেদ, ঘাসিগ্রাম), মজিবর রহমান (পিতা আব্দুল জলিল, হরিদাগাছি), ইউসুফ শেখ (পিতা ইয়াকুব শেখ, ধুরইল) এবং মো. শামসুল বিশ্বাস (পিতা আব্বাস বিশ্বাস, বাকশিমইল)। মোহনপুরের শাকোয়া মাদ্রাসার রাজাকার ক্যাম্পটি ছিল রাজশাহীর মধ্যে সর্ববৃহৎ নির্যাতনকেন্দ্র। এ ক্যাম্পের পেছনের বধ্যভূমিটি শাকোয়া রাজাকার ক্যাম্প বধ্যভূমি নামে পরিচিত। এ বধ্যভূমিতে ৪২ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়। এখানে অনেককে জীবন্ত কবর দেয়া হয়। এছাড়া মৌপাড়া গ্রামের সরদারপাড়ায় পাকবাহিনীর নির্যাতনকেন্দ্র ও বন্দিশিবির ছিল।
শাকোয়া রাজাকার ক্যাম্প সংলগ্ন স্থান, মোগরা এবং মৌগাছিতে বধ্যভূমি ও গণকবর রয়েছে।
নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে কমান্ডার এমদাদুল হক বাবুর নেতৃত্বে ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি গ্রুপ শাকোয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করেন। উভয় পক্ষে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধ হয়, যা শাকোয়া রাজাকার ক্যাম্প যুদ্ধ নামে পরিচিত। এ যুদ্ধে ২০-২৫ জন রাজাকার নিহত হয় এবং বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে। একই দিন মনসুর রহমানের নেতৃত্বে আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি গ্রুপ মোহনপুর থানা আক্রমণ করে এবং বিনা বাধায় থানা দখল করে সেখানে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। এ-দুটি অপারেশন ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন স্থানে রাজাকারদের বিরুদ্ধে অপারেশন পরিচালনা করেন। ২৬শে নভেম্বর মোহনপুর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
মোহনপুর উপজেলায় একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম জানা যায়। তিনি হলেন জহুর আলম (পিতা ফরজ আলী, বেড়াবাড়ি)। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে একটি শহীদ মিনার এবং উপজেলায় একটি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে নির্মিত হয়েছে। [সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড