You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক মোবারক হোসেন - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক মোবারক হোসেন

মোবারক হোসেন, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯২২) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯২২ সালের ৪ঠা অক্টোবর নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার দক্ষিণ মির্জাপুর পূর্বপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হোসাইন আলী কারী এবং মাতার নাম মোসা. আরেফা খাতুন। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অনেক বিলম্বে শুরু হয়। ১৭ বছর বয়সে তিনি দক্ষিণ মির্জানগর প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯৪৭ সালে শিবপুর থানার হাতিরদিয়া হাইস্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
মোবারক হোসেন ১৯৫৭ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে তাঁকে ৩২ ফিল্ড আর্টিলারির সঙ্গে যুক্ত করে পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠানো হয়। ১৯৬২ সালে ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস)-এ ডেপুটেশন দিয়ে তাঁকে রংপুর সেক্টরে পদায়ন করা হয়। সেখানে থাকা অবস্থায় তিনি ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে অংশ নেন এবং আহত হন।
মোবারক হোসেন ১৯৭১ সালে হাবিলদার হিসেবে ইপিআর সিলেট উইংয়ে কর্মরত ছিলেন। এখান থেকে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং অন্য বাঙালি ইপিআর সদস্যদের নিয়ে সিলেট এলাকার বিভিন্ন প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। এরপর তিনি ভারতের আগরতলায় যান। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের আগরতলা কনফারেন্স শেষে তাঁকে মেজর কে এম সফিউল্লাহ-র নেতৃত্বে ৩ নং সেক্টর হেডকোয়ার্টার্সের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। পরে তাঁকে মনতলা সাব-সেক্টরে ৫টি কোম্পানি-সহ মনতলা প্রতিরক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়। মনতলা দখলের জন্য পাকবাহিনী অনেক আক্রমণ পরিচালনা করে। কিন্তু মোবারক হোসেনের নেতৃত্ব ও যুদ্ধকৌশলের কাছে পাকবাহিনী প্রতিবারই পরাজিত হয়। মনতলা থেকে বিভিন্ন সময়ে পাকবাহিনীর অবস্থানের ওপর রেইড ও গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে তিনি ব্যাপক সাফল্য লাভ করেন এবং মনতলারই এক যুদ্ধে তিনি মারাত্মকভাবে .আহত হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার মোবারক হোসেনকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৪৪৪, খেতাবের সনদ নং ১৯৪)। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি সেনাবাহিনীত যোগ দেন। তিনি সেনাবাহিনীর এসএমআই (স্কুল অব মিলিটারি ইন্টিলিজেন্স) কোয়ালিফাইড কমান্ডার ছিলেন। ১৯৮৬ সালে তিনি ওয়ারেন্ট অফিসার হিসেবে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম বেগম নুরজাহান। বর্তমানে তিনি রায়পুর উপজেলার নিজ বাড়িতে বসবাস করছেন। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড