You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক মোজাফফর আহমেদ - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক মোজাফফর আহমেদ

মোজাফফর আহমেদ, বীর প্রতীক (১৯২৭-১৯৯১) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯২৭ সালের ১৫ই জানুয়ারি ফেনী জেলার সদর থানার কাজীরবাগ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ফেনী শহর থেকে ২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে সোনাপুর গ্রামের অবস্থান। মোজাফফর আহমেদের পিতার নাম শেখ আহমেদ এবং মাতার নাম জায়রা খাতুন। তিনি ফেনী উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন।
তরুণ বয়স থেকে মোজাফফর আহমেদের রাজনৈতিক সচেতনতা ও সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল। তিনি কর্মজীবন শুরু করেন ব্যবসার মাধ্যমে। ফেনী শহরে কয়েক বছর ব্যবসা করার পর তিনি ১৯৪৮ সালে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)-এ যোগ দেন। এক সময় নায়েক হিসেবে তাঁর পদোন্নতি হয়। ১৯৭১ সালে চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত থাকা অবস্থায় অবাঙালি ইপিআর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি অন্য বাঙালি ইপিআর সদস্যদের উদ্বুব্ধ ও সংগঠিত করে ‘মোজাফফর বাহিনী’ নামে একটি মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করেন। এ বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে তিনি চুয়াডাঙ্গা এলাকায় একাধিক প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। মুজিবনগর সরকার- গঠিত হওয়ার পর ১৭ই এপ্রিল বৈদ্যনাথতলায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহণ করেন। সেদিন ইপিআর আয়োজিত কুচকাওয়াজে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম- তাঁদের সালাম গ্রহণ ও কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন।
সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধ শুরু হলে মোজাফফর আহমেদ ৮ নম্বর সেক্টরে নিযুক্ত হন। এ সেক্টরের অধিনায়ক মেজর আবু ওসমান চৌধুরী এবং পরে মেজর আবুল মঞ্জুরের অধীনে তিনি বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বয়রা ও বানপুর সাব-সেক্টর এলাকার বিভিন্ন যুদ্ধে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেন। এ দুই সাব-সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন যথাক্রমে ক্যাপ্টেন খন্দকার নাজমুল হুদা এবং ক্যাপ্টেন মুস্তাফিজুর রহমান। মোজাফফর আহমেদ চুয়াডাঙ্গা, মুজিবনগর, কাজীপুর, বিষয়খালী, ঝিকরগাছা, প্রাগপুর, বেনাপোল ইত্যাদি এলাকার বিভিন্ন অপারেশনে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মোজাফফর আহমেদকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয় (গেজেট নম্বর ৪১৯, খেতাবের সনদ নম্বর ১৬৯)।
স্বাধীনতার পর মোজাফফর আহমেদ বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর, বর্তমান বিজিবি)-এ যোগদান করেন। দক্ষতা ও যোগ্যতার সঙ্গে চাকরি করার পর তিনি এ বাহিনীর ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর (ডিএডি) হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৯১ সালের ১১ই মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ২ কন্যা ও ৪ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম আমেনা খাতুন। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৮ম খণ্ড